ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১০ বছর মেয়াদি প্রতিরক্ষা চুক্তিতে যাচ্ছে ভারত

২০২৫ জুলাই ০৩ ২৩:১২:৪৫
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১০ বছর মেয়াদি প্রতিরক্ষা চুক্তিতে যাচ্ছে ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছর একটি নতুন ১০ বছর মেয়াদি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা কাঠামো চুক্তিতে স্বাক্ষরে সম্মত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এবং ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সরাসরি সাক্ষাতে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন বলে পেন্টাগনের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন। এই পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান কৌশলগত অংশীদারিত্বের এক নতুন মাত্রা যোগ করবে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার (০১ জুলাই) মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ এবং ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং টেলিফোনে কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মুখপাত্র কর্নেল ক্রিস ডেভাইন জানান, ওই কথোপকথনের সময় এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়। একই দিনে হেগসেথ ওয়াশিংটনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।

কর্নেল ডেভাইন আরও জানান, ০১ জুলাইয়ের আলোচনায় হেগসেথ দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিরক্ষা অংশীদার হিসেবে ভারতের গুরুত্ব তুলে ধরেন। দুই নেতা ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘোষিত যৌথ বিবৃতির আলোকে দুই দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে অর্জিত অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন।

প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রি ও শিল্প সহযোগিতার গুরুত্বআলোচনায় উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মার্কিন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ভারতের কাছে বিক্রির বিষয় এবং দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষাশিল্পে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। কর্নেল ডেভাইন নিশ্চিত করেছেন যে, দুই মন্ত্রী চলতি বছর আবার দেখা হলে পরবর্তী ১০ বছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্র-ভারত প্রতিরক্ষা কাঠামো স্বাক্ষরের ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন। তবে এই বৈঠকের নির্দিষ্ট কোনো তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি।

হেগসেথ ও জয়শঙ্করের সাক্ষাতে উভয় পক্ষ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির যৌথ বিবৃতির আলোকে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আগ্রাসনের ঝুঁকি নিয়ে দুই দেশের উদ্বেগ রয়েছে এবং এ নিয়েও তাঁরা কথা বলেছেন। আলোচনায় উন্নত প্রযুক্তিনীতির অগ্রগতি, বড় ধরনের কয়েকটি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রির বিষয় এবং নতুন ১০ বছরের প্রতিরক্ষা কাঠামো স্বাক্ষরের বিষয়গুলোও স্থান পায়। উভয় দেশ ইন্ডাস-এক্স সামিট নামের দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সম্মেলন এবং স্বয়ংক্রিয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থার শিল্প জোট এএসআইএ চালুর বিষয়টিকেও স্বাগত জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, জয়শঙ্করের সঙ্গে এই বৈঠকে হেগসেথ বলেছেন, "ট্রাম্প ও মোদি আমাদের সম্পর্কের জন্য যে শক্ত ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছেন, আমরা তা বাস্তবসম্মত, ফলপ্রসূ ও যুক্তিসংগতভাবে আরও এগিয়ে নিচ্ছি।"

হেগসেথ আরও বলেন, "ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতার এক সমৃদ্ধ ও ক্রমবর্ধমান ইতিহাস রয়েছে, যা উন্মুক্ত ও স্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতি আমাদের অভিন্ন অঙ্গীকার থেকে উৎসারিত। দুই দেশই অঞ্চলটির নিরাপত্তা উদ্বেগ সম্পর্কে সচেতন এবং সম্মিলিতভাবে এই হুমকি মোকাবিলা করার সক্ষমতা রাখে।"

তিনি জানান, ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সফলভাবে যুক্ত হয়েছে, যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, "এই অগ্রগতির ভিত্তিতে আমরা কয়েকটি বড় প্রতিরক্ষা বিক্রির কাজ শেষ করতে চাই। পাশাপাশি যৌথ প্রতিরক্ষাশিল্প ও সহ-উৎপাদনের ক্ষেত্র বাড়াতে, দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় জোরদার করতে এবং দ্রুত নতুন ১০ বছরের প্রতিরক্ষা কাঠামোতে স্বাক্ষর করতে চাই।"

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর এই অংশীদারিত্বের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, "ভারতের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অত্যন্ত শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে, তবে আরও অনেক কিছু করা সম্ভব। প্রতিরক্ষা অংশীদারত্ব আমাদের সম্পর্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এটা শুধু অভিন্ন স্বার্থের ওপর দাঁড়িয়ে নয়, বরং আমরা সক্ষমতা ও দায়িত্বের গভীর সমন্বয়ের ওপর বিশ্বাস করি। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আমরা যা করছি, সেটি এই অঞ্চলের কৌশলগত স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।"

যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দুই দেশ পরবর্তী 'ইন্ডিয়া-ইউএস ডিফেন্স অ্যাকসেলারেশন ইকোসিস্টেম সামিট'-এ অংশ নেবে, যেখানে প্রতিরক্ষাশিল্পে সহযোগিতা এবং প্রযুক্তি ও উৎপাদনে নতুন উদ্ভাবনের ওপর জোর দেওয়া হবে।

হেগসেথ বলেন, "আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য বাস্তবায়নে একসঙ্গে কাজ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই অংশীদারিত্ব আরও গভীর ও টেকসই হবে।" ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করও এই যৌথ সহযোগিতাকে বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকে জ্যাভলিন অ্যান্টি-ট্যাংক গাইডেড মিসাইল এবং স্ট্রাইকার সাঁজোয়া যান যৌথভাবে কেনা ও উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। পাশাপাশি, ছয়টি অতিরিক্ত পি-৮আই সামুদ্রিক নজরদারি বিমান কেনার বিষয়েও উচ্চপর্যায়ের আলোচনা হয়।

মিরাজ/

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে