ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

শান্তিচুক্তির পথে ইউক্রেন যুদ্ধ, আশাবাদী ট্রাম্প

২০২৫ ডিসেম্বর ১৬ ১০:৫১:২২
শান্তিচুক্তির পথে ইউক্রেন যুদ্ধ, আশাবাদী ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে একটি সম্ভাব্য চুক্তি এখন ‘আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি কাছাকাছি’ অবস্থানে রয়েছে। স্থানীয় সময় সোমবার জার্মানির বার্লিনে মার্কিন ও ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দীর্ঘদিনের মতপার্থক্য কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে। যদিও কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আঞ্চলিক বিষয়গুলোতে এখনো বড় ধরনের মতপার্থক্য রয়ে গেছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা-কে উদ্ধৃত করে বলা হয়, সোমবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ট্রাম্প জানান, তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, পাশাপাশি ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও ন্যাটো নেতাদের সঙ্গে ‘দীর্ঘ ও ইতিবাচক আলোচনা’ করেছেন। তাঁর ভাষায়, ইউরোপীয় দেশগুলোর সমর্থন শক্তিশালী এবং তারাও যুদ্ধের অবসান চান।

ট্রাম্প আরও জানান, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন-এর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ হয়েছে। তাঁর দাবি, ‘আমরা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছি। সামনে কী করা যায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।’ এর আগে জেলেনস্কিও জানিয়েছিলেন, আলোচনা কঠিন হলেও তা কার্যকর ছিল।

বার্লিনে দুই দিনব্যাপী উচ্চপর্যায়ের এই আলোচনায় মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন স্টিভ উইটকফ। এতে অংশ নেন ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এবং একাধিক ইউরোপীয় নেতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের অন্যতম ভয়াবহ এই সংঘাত বন্ধে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে কিয়েভের ওপর মস্কোর সঙ্গে সমঝোতায় আসার চাপ বাড়ার মধ্যেই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক শেষে ইউরোপীয় নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করে ইউক্রেনকে ‘শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা’ দেওয়ার বিষয়ে তারা একমত হয়েছেন। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ইউরোপ-নেতৃত্বাধীন একটি বহুজাতিক বাহিনী গঠনের কথাও উঠে আসে।

বিবৃতিতে বলা হয়, প্রস্তাবিত বাহিনী ইউক্রেনের ভেতরে কাজ করতে পারে, দেশটির সেনাবাহিনী পুনর্গঠনে সহায়তা দেবে, আকাশসীমা নিরাপদ রাখবে এবং সমুদ্রপথ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখবে। ইউক্রেনীয় বাহিনীর শান্তিকালীন সদস্যসংখ্যা আট লাখ রাখার কথাও উল্লেখ করা হয়। রয়টার্স-কে দুই মার্কিন কর্মকর্তা জানান, এই নিরাপত্তা কাঠামো ন্যাটোর ‘আর্টিকেল ৫’-এর মতো পারস্পরিক প্রতিরক্ষা নিশ্চয়তার ইঙ্গিত দেয়।

এর আগে ইউক্রেন ইঙ্গিত দিয়েছিল, শক্তিশালী পশ্চিমা নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেলে তারা ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার লক্ষ্য থেকে সরে আসতে পারে। বার্লিনে সাংবাদিকদের জেলেনস্কি বলেন, সম্ভাব্য শান্তিচুক্তিতে আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিরাপত্তা নিশ্চয়তাগুলো কীভাবে কার্যকর হবে, সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি। তিনি আরও বলেন, যেকোনো ব্যবস্থার মধ্যে কার্যকর যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা অতীত অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। ১৯৯১ সালে স্বাধীনতার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় সমর্থনে যে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল, তা ২০১৪ ও ২০২২ সালে রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়।

এদিকে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ ম্যার্ৎস বলেছেন, বার্লিন আলোচনায় ওয়াশিংটনের দেওয়া নিরাপত্তা প্রস্তাবগুলো ছিল ‘উল্লেখযোগ্য’। জেলেনস্কির সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আইনি ও বাস্তব—উভয় দিক থেকেই যুক্তরাষ্ট্র যে নিশ্চয়তাগুলো টেবিলে রেখেছে, তা শান্তি প্রক্রিয়াকে বাস্তব রূপ দেওয়ার সুযোগ তৈরি করেছে। তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, আঞ্চলিক ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার একমাত্র ইউক্রেনেরই—এ নিয়ে কোনো শর্ত বা আপসের সুযোগ নেই।

এমজে/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে