ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

আজ মহান বিজয় দিবস

২০২৫ ডিসেম্বর ১৬ ০৭:০৮:৪০
আজ মহান বিজয় দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ ১৬ ডিসেম্বর—মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি বহু আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা লাভ করে। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের মাধ্যমে জন্ম নেয় সার্বভৌম বাংলাদেশ, এবং আকাশে উড্ডীন হয় লাল-সবুজের পতাকা। এবারের বিজয় দিবস উদযাপনের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন, যা গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা করে। ইতোমধ্যে আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট আয়োজনের ঘোষণা এসেছে। এই পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র সংস্কার ও গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে—এমন প্রত্যাশা থেকেই এবারের বিজয় দিবস ঘিরে জাতির মনে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা বিরাজ করছে।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। তাদের বাণীতে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বীর শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের, যাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বিনিময়ে জাতি স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে। এই দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের জন্য জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

আজ সরকারি ছুটি। দিবসের সূচনা হবে ভোরে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে। দেশের সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনসহ বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং সন্ধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো বর্ণিল আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। রাজধানীসহ সারাদেশের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা, ব্যানার ও রঙিন ফেস্টুন দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়েছে।

সূর্যোদয়ের পর সকাল ৬টা ৩৪ মিনিটে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান উপদেষ্টা সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই আজমের নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্য, যুদ্ধাহত ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর কূটনৈতিক প্রতিনিধিদল, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

বেলা ১১টা থেকে ঢাকার তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর পৃথক ফ্লাই পাস্ট অনুষ্ঠিত হবে, পাশাপাশি বিশেষ ব্যান্ডশো পরিবেশিত হবে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে তিন বাহিনীর যৌথ উদ্যোগে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার একসঙ্গে জাতীয় পতাকা হাতে প্যারাস্যুটিং করবেন, যা বিশ্বে সর্বাধিক পতাকা হাতে প্যারাস্যুটিং হিসেবে গিনেস বুকে স্থান করে নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। সারাদেশের সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও বিএনসিসির বাদক দল বাদ্যযন্ত্র পরিবেশন করবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তিন দিনব্যাপী বিজয়মেলা অনুষ্ঠিত হবে। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সকাল ৯টায় ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে প্রদর্শন অনুষ্ঠিত হবে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিকেল ৩টা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয় দিবসের গান পরিবেশিত হবে। একই সময়ে দেশের ৬৪টি জেলায় একযোগে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান পরিবেশন করবেন নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা। এর আগে গত সোমবার বিকেলে সেখানে অ্যাক্রোবেটিক শো এবং সন্ধ্যায় ‘জেনারেল ওসমানী’ যাত্রাপালা মঞ্চস্থ হয়েছে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সংগঠন আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করেছে। বিদেশে বাংলাদেশি মিশনগুলোতেও দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে নানা কর্মসূচি পালিত হবে।

বিকেলে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেবেন। পাশাপাশি মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনার আয়োজন করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে। সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।

দেশের সব হাসপাতাল, জেলখানা, এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, প্রতিবন্ধী ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়েছে। শহীদদের আত্মার মাগফেরাত, মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য এবং দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ সব উপাসনালয়ে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনার আয়োজন থাকবে।

বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি গণমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হবে এবং সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করবে বিশেষ ক্রোড়পত্র। শিশুপার্ক ও জাদুঘরগুলো আজ বিনা টিকিটে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং সিনেমা হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে। চট্টগ্রাম, খুলনা, মোংলা ও পায়রা বন্দরসহ দেশের বিভিন্ন নৌঘাটে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজ সকাল ৯টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।

এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিজস্ব কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিএনপির কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং শহীদ জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ। জামায়াতে ইসলামী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুব ম্যারাথনের আয়োজন করেছে। এছাড়াও এনসিপি, গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট, বাম জোটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করছে।

সিরাজ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে