ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

নবীজির যে দোয়া আল্লাহ কবুল করেননি

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৯ ১১:৪৩:৫৬
নবীজির যে দোয়া আল্লাহ কবুল করেননি

নিজস্ব প্রতিবেদক : সুরা : আনআম, আয়াত : ৬৫-৬৬

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে

قُلۡ هُوَ الۡقَادِرُ عَلٰۤی اَنۡ یَّبۡعَثَ عَلَیۡكُمۡ عَذَابًا مِّنۡ فَوۡقِكُمۡ اَوۡ مِنۡ تَحۡتِ اَرۡجُلِكُمۡ اَوۡ یَلۡبِسَكُمۡ شِیَعًا وَّ یُذِیۡقَ بَعۡضَكُمۡ بَاۡسَ بَعۡضٍ ؕ اُنۡظُرۡ كَیۡفَ نُصَرِّفُ الۡاٰیٰتِ لَعَلَّهُمۡ یَفۡقَهُوۡنَ ﴿۶۵﴾

وَ كَذَّبَ بِهٖ قَوۡمُكَ وَ هُوَ الۡحَقُّ ؕ قُلۡ لَّسۡتُ عَلَیۡكُمۡ بِوَكِیۡلٍ ﴿ؕ۶۶﴾

সরল অনুবাদ

(৬৫) বলুন তোমাদের ওপর বা নিচ থেকে শাস্তি পাঠাতে বা তোমাদেরকে বিভিন্ন সন্দেহপূর্ণ দলে বিভক্ত করতে বা এক দলকে অন্য দলের সংঘর্ষের আস্বাদ গ্রহণ করাতে তিনি (আল্লাহ) সক্ষম। দেখুন, আমরা কীরূপে বিভিন্নভাবে আয়াতসমূহ বিবৃত করি, যাতে তারা ভালোভাবে বুঝতে পারে।

(৬৬) আর আপনার সম্প্রদায় তো ওটাকে মিথ্যা বলেছে অথচ ওটা সত্য। বলুন, আমি তোমাদের কার্যনির্বাহক নই।

সুরা আনআমের ৬৫ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে যে আল্লাহ্ তাআলা যেকোনো আজাব ও যেকোনো বিপদ দূর করতে যেমন সক্ষম, তেমনিভাবে তিনি যখন কোনো ব্যক্তি অথবা সম্প্রদায়কে অবাধ্যতার শাস্তি দিতে চান, তখন যেকোনো শাস্তি দেওয়াও তাঁর পক্ষে সহজ। কোনো অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার জন্য দুনিয়ার শাসনকর্তাদের ন্যায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী দরকার হয় না এবং কোনো সাহায্যকারীরও প্রয়োজন হয় না। বলা হচ্ছে, আল্লাহ্ তাআলা এ বিষয়েও শক্তিমান যে, তোমাদের প্রতি ওপর দিক থেকে কিংবা পদতল থেকে কোনো শাস্তি পাঠিয়ে দেবেন কিংবা তোমাদের বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত করে পরস্পরের মুখোমুখি করে দেবেন এবং এককে অপরের হাতে শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করে দেবেন। মূলত আল্লাহর শাস্তি তিন প্রকার : (১) যা ওপর দিক থেকে আসে, (২) যা নিচের দিক থেকে আসে এবং (৩) যা নিজেদের মধ্যে মতানৈক্যের আকারে সৃষ্টি হয়।মুফাসসিরগণ বলেন, ওপর দিক থেকে আযাব আসার দৃষ্টান্ত বিগত উম্মতসমূহের মধ্যে অনেক রয়েছে। যেমন— নুহ আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের ওপর প্লাবনাকারে বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছিল, আদ জাতির ওপর ঝড়-ঝঞ্চ্বা চড়াও হয়েছিল, লুৎ আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের ওপর প্রস্তর বর্ষিত হয়েছিল এবং ইসরাঈল বংশধরদের ওপর রক্ত, ব্যাঙ ইত্যাদি বর্ষণ করা হয়েছিল। আবরাহার হস্তীবাহিনী যখন মক্কার ওপর চড়াও হয়, তখন পক্ষীকুল দ্বারা তাদের ওপর কঙ্কর বর্ষণ করা হয়। ফলে সবাই চর্বিত ভুসির মতো হয়ে যায়।(তাফসিরে বাগভি)

বিগত উম্মতসমূহের মধ্যে নিচের দিক থেকে আজাব আসারও বিভিন্ন প্রকার কোরআনুল কারিমে বর্ণিত হয়েছে। নুহ আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের প্রতি ওপরের আজাব বৃষ্টির আকারে এবং নিচের আজাব ভূতল থেকে পানি স্ফীত হয়ে প্রকাশ পেয়েছিল। তারা একই সময়ে উভয় প্রকার আজাবে পতিত হয়েছিল। ফিরআউনের সম্প্রদায়কে পদতলের আজাবে পাকড়াও করা হয়েছিল। কারুন নিজের ধন-ভাণ্ডারসহ নিচের আজাবে পতিত হয়ে মৃত্তিকার অভ্যন্তরে প্রোথিত হয়েছিল।(তাফসিরে বাগভি)

আয়াতে বর্ণিত তৃতীয় প্রকার আজাব হচ্ছে, বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে যাওয়া এবং একদল অন্য দলের জন্য আজাব হওয়া। তাই আয়াতের অনুবাদ এরূপ হবে, এক প্রকার আজাব এই যে, জাতি বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে যাবে। এ কারণেই আলোচ্য আয়াত নাজিল হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলিমদের সম্বোধন করে বললেন, সাবধান! তোমরা আমার পরে পুনরায় কাফের হয়ে যেয়ো না যে একে অন্যের গর্দান মারতে শুরু করবে। (বুখারি, হাদিস : ১২১)

সাআদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস বলেন, ‘একবার আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে চলতে চলতে বনি মুয়াবিয়ার মাসজিদে প্রবেশ করে দুরাকাত নামাজ আদায় করলাম। তিনি তার রবের কাছে অনেকক্ষণ দোয়া করার পর বললেন : আমি রবের কাছে তিনটি বিষয় প্রার্থনা করেছি, তিনি আমাকে দুটি বিষয় দিয়েছেন, আর একটি থেকে নিষেধ করেছেন। আমি প্রার্থনা করেছি যে (এক) আমার উম্মতকে যেন দুর্ভিক্ষ ও ক্ষুধা দ্বারা ধ্বংস করা না হয়, আল্লাহ্ তাআলা এ দোয়া কবুল করেছেন। (দুই) আমার উম্মতকে যেন নিমজ্জিত করে ধ্বংস করা না হয়। আল্লাহ্ তাআলা এ দোয়াও কবুল করেছেন। (তিন) আমার উম্মত যেন পারস্পরিক দ্বন্দ্ব দ্বারা ধ্বংস না হয়। আমাকে তা প্রদান করতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম, হাদিস ২৮৯০)

এসব হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে উম্মতে মুহাম্মাদির ওপর বিগত উম্মতদের ন্যায় আকাশ কিংবা ভূতল থেকে কোনো ব্যাপক আজাব আসবে না; কিন্তু পারস্পরিক যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং দলীয় সংঘর্ষে জড়িয়ে নিজেরা নিজেদের ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নেবে। এ জন্যই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত শক্তভাবে উম্মতকে বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-কলহ ও যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হতে নিষেধ করেছেন। তিনি প্রতি ক্ষেত্রেই হুঁশিয়ার করেছেন যে দুনিয়াতে যদি তোমাদের ওপর আল্লাহর শাস্তি নেমে আসে, তবে তা পারস্পরিক যুদ্ধ-বিগ্রহের মাধ্যমেই আসবে।

অন্য আয়াতে এ বিষয়টি পূর্ববর্তী জাতিদের ক্ষেত্রে আরো স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে, ‘তারা সর্বদা পরস্পর মতবিরোধ করতেই থাকবে, তবে যাদের প্রতি আল্লাহ্‌র রহমত রয়েছে, তারা এর ব্যতিক্রম।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ১১৮-১১৯)

এতে বোঝা গেল যে শরিয়সম্মত কারণ ছাড়া যারা পরস্পর মতবিরোধ করে, তারা আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত কিংবা দূরবর্তী। তাই আয়াতে বলা হয়েছে, যারা বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং মতবিরোধ করেছে, তোমরা তাদের মতো হয়ো না। কেননা যারা মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে, তারা আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরে এসেছে।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

ধর্ম ও জীবন এর সর্বশেষ খবর

ধর্ম ও জীবন - এর সব খবর



রে