ঢাকা, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

হতাশার অন্ধকারে আশার আলো দেখায় ইসলাম

২০২৫ ডিসেম্বর ১৩ ১৭:২৭:১৭
হতাশার অন্ধকারে আশার আলো দেখায় ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যস্ত ও প্রতিযোগিতাময় আধুনিক জীবনে মানুষ দিন দিন হতাশা ও উৎকণ্ঠার ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়ছে। কাজের চাপ, অনিশ্চয়তা আর প্রত্যাশার বোঝা অনেক সময় মানুষকে মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে। কিন্তু কোরআন ও সুন্নাহ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়—আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। আল্লাহর ওপর ভরসা কেবল আবেগ নয়; এটি ঈমানের শক্ত ভিত্তি, যা মানুষকে সবচেয়ে সংকটময় সময়েও স্থির থাকতে সাহায্য করে।

ইসলামে আশা বা প্রত্যাশা মানে শুধু ভালো কিছুর অপেক্ষা করা নয়; বরং যুক্তিসঙ্গত আত্মবিশ্বাস নিয়ে ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাওয়া। এই আশা মানুষের ভেতরে এমন এক আত্মিক শক্তি জাগিয়ে তোলে, যা ভয়, দুশ্চিন্তা ও বিপর্যয়ের মধ্যেও তাকে টিকে থাকার সাহস দেয়।

আজকের দ্রুতগতির জীবনে আমরা প্রায়ই আশা ও ভরসার গুরুত্ব ভুলে যাই। পার্থিব ব্যস্ততা আমাদের আল্লাহর ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেয়। অথচ আল্লাহ তায়ালা মানুষের সামনে হতাশার বিপরীতে অফুরন্ত আশার দরজা খুলে রেখেছেন। যখন হতাশা গ্রাস করতে চায়, তখন মনে রাখতে হবে—আল্লাহ নিজেই আমাদের তাঁর ওপর ভরসা করতে এবং তাঁর ক্ষমা ও দয়ার প্রত্যাশা রাখতে বলেছেন।

ইসলামের শিক্ষা হলো, একজন মুমিন সব সময় ভালো পরিণতির আশা করবে এবং আল্লাহর নির্দেশনা মেনে চলবে। আল্লাহর পথে চললে কল্যাণ অনিবার্য—এটাই ঈমানের দৃঢ় বিশ্বাস।

আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি জানেন, জীবনের কিছু পর্যায়ে মানুষ মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে। সে কারণেই কোরআন ও হাদিসে বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে—আল্লাহর রহমত, দয়া ও ক্ষমা থেকে কখনো নিরাশ হওয়া যাবে না।

মানুষ কেন ভরসা হারিয়ে ফেলে

অনেক সময় নিজের পাপ ও ভুলের অনুভূতি মানুষকে গভীর হতাশায় ঠেলে দেয়। অনুশোচনা জমতে জমতে এমন ধারণা জন্ম নেয়—আল্লাহ বুঝি তাকে আর ক্ষমা করবেন না। এই ভয়াবহ মানসিক অবস্থাই শয়তানের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র, যার মাধ্যমে সে মানুষকে আল্লাহ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

কিন্তু আল্লাহ নিজেই ঘোষণা করেছেন—বান্দা আমার সম্পর্কে যেমন ধারণা পোষণ করে, আমি তার সঙ্গে তেমনই আচরণ করি। বান্দা যদি আমার দিকে এক কদম এগোয়, আমি তার দিকে বহু কদম এগিয়ে যাই। এই বাণী বিশ্বাসী হৃদয়ে আশার সর্বোচ্চ আলো জ্বালিয়ে দেয়।

পাপের চেয়েও বড় আল্লাহর রহমত

পাপ যত বড়ই হোক না কেন, আল্লাহর দয়া তার চেয়েও বিস্তৃত। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবিরাও মানুষ ছিলেন—তারা ভুল করেছেন, তবু কখনো আল্লাহর ক্ষমা নিয়ে নিরাশ হননি। তারা জানতেন, আল্লাহর ক্ষমার দরজা সব সময় খোলা।

এমনকি ফেরাউনের মতো সীমালঙ্ঘনকারীর ক্ষেত্রেও আল্লাহ মুসা (আ.)-কে নরম ভাষায় কথা বলতে নির্দেশ দিয়েছেন, যেন সে অনুতপ্ত হয়। তাহলে আমাদের সীমিত পাপ কীভাবে আল্লাহর অসীম রহমতের বাইরে থাকতে পারে?

কোরআনে আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলেন—হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করেন। আর যারা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়, তারা প্রকৃতপক্ষে অবিশ্বাসের পথেই অগ্রসর হয়।

দুশ্চিন্তা ও হতাশা থেকে মুক্তির পথ

বর্তমান সময়ে মানসিক চাপ ও হতাশা এক বড় সামাজিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। তবে এটি নতুন কিছু নয়। মানব ইতিহাসের শুরু থেকেই মানুষ পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছে, আর নবী-রাসুলরা তাদের শিখিয়েছেন আশা ও ভরসার পথ।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেগফার করে, আল্লাহ তার দুশ্চিন্তা দূর করে দেন এবং অজানা উৎস থেকে তাকে রিজিক দান করেন। তিনি আরও বলেছেন, দোয়া করো এবং দৃঢ় বিশ্বাস রাখো—আল্লাহ অবশ্যই দোয়া কবুল করবেন।

উদ্বেগ ও হতাশা দূর করতে রাসুল (সা.) যে দোয়াগুলো শিখিয়েছেন, সেগুলো আজও সমানভাবে কার্যকর। দুশ্চিন্তা, ভয়, অলসতা, ঋণের বোঝা ও মানুষের আধিপত্য থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়াই এর মূল শিক্ষা।

কষ্টের পরেই আসে স্বস্তি

কোরআনে আল্লাহ বারবার আশ্বাস দিয়েছেন—প্রত্যেক কষ্টের সঙ্গেই রয়েছে স্বস্তি। মানুষকে ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ ও প্রাণহানির মাধ্যমে পরীক্ষা করা হবে, তবে ধৈর্যশীলদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ।

এই দুনিয়ার জীবন পরীক্ষা ও চ্যালেঞ্জে পরিপূর্ণ। এসব মোকাবিলা করতে হয় ধৈর্য ও আশার হাত ধরে। আশা মানুষকে অন্ধকার পেরিয়ে আলোয় পৌঁছে দেয়, আর হতাশা কেবল পথকে দীর্ঘ ও কঠিন করে তোলে।

আল্লাহ অতি দয়ালু। পৃথিবীতে আমরা যে মায়ের মমতা, রোগীর সেবা কিংবা খরার পর বৃষ্টির ধারা দেখি—সবই আল্লাহর রহমতের সামান্য অংশ। তাঁর রহমতের বড় অংশ তিনি কিয়ামতের দিনের জন্য সংরক্ষণ করে রেখেছেন। এটাই বিশ্বাসীর জন্য সবচেয়ে বড় আশার কারণ।

কখনো কখনো মানসিক চাপ গভীর হতাশা বা বিষণ্নতায় রূপ নিতে পারে। এমন অবস্থায় চিকিৎসকের সহায়তা নেওয়াও আল্লাহর দয়ার অংশ। একই সঙ্গে আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া, ক্ষমা প্রার্থনা করা ও তাঁর ওপর ভরসা রাখাই একজন মুমিনের প্রধান দায়িত্ব।

এমজে/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

ধর্ম ও জীবন এর সর্বশেষ খবর

ধর্ম ও জীবন - এর সব খবর



রে