ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

১০ বছরে দেশে এসেছে ৩৩ হাজার রেমিট্যান্স যোদ্ধার মরদেহ

২০২৪ জুন ০৮ ১৬:১৮:১৩
১০ বছরে দেশে এসেছে ৩৩ হাজার রেমিট্যান্স যোদ্ধার মরদেহ

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম উৎস হলো প্রবাসী আয়। দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি হিসেবে প্রবাসী আয়কে বিবেচনা করা হয়। এখাত থেকে প্রতি বছর দেশে আসে বছরে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার; যা দেশের মোট জিডিপির ১২ শতাংশ।

তবে শঙ্কার বিষয়টি হচ্ছে, উল্লেখযোগ্য হারে প্রবাসে শ্রমিকের মৃত্যু। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ডের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১০ বছরে লাশ হয়ে দেশে ফিরেছেন ৩৩ হাজার ৯৯১ জন প্রবাসী শ্রমিক।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে দেশে এসেছে ৪ হাজার ৫৫২ জন প্রবাসী শ্রমিকের মরদেহ। সে হিসেবে প্রতিদিন গড়ে ১২ রেমিট্যান্স যোদ্ধার মরদেহ দেশে এসেছে।

মৃতদের সঙ্গে আসা নথিপত্র বিশ্লেষন করে জানা যায়, সবচেয়ে বেশি প্রবাসী মারা যান মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত (ব্রেইন স্ট্রোক) কারণে। এদের একটা বড় অংশই মধ্যবসয়ী কিংবা তরুণ। এ ছাড়াও হৃদরোগসহ বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা, সড়ক দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা কিংবা প্রতিপক্ষের হাতেও খুন হন বাংলাদেশিরা।

তবে তরুণ কিংবা মধ্যবয়সে কেন এতো বিপুল সংখ্যক প্রবাসী স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন সে বিষয়ে রাষ্ট্রীয় কোনো অনুসন্ধান হয়নি। প্রবাসী বাংলাদেশি, মৃতদের স্বজন ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্য মূলত মরু আবহাওয়ার দেশ। প্রচণ্ড গরমে প্রতিকূল পরিবেশে অদক্ষ এই বাংলাদেশিরা ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন কাজে যুক্ত থাকেন। একদিকে প্রতিকূল পরিবেশ, অন্যদিকে অমানুষিক পরিশ্রম, ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গাদাগাদি করে থাকা, দীর্ঘদিন স্বজনদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা এবং সব মিলিয়ে মানসিক চাপের কারণেই সাধারণত স্ট্রোক বা হৃদরাগের মতো ঘটনা ঘটে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৪ হাজার ৫৫২জন, ২০২২ সালে ৩ হাজার ৯০৪জন, ২০২১ সালে ৩ হাজার ৮১৮ জন, ২০২০ সালে ৩ হাজার ১৯ জন ও ২০১৯ সালে ৪ হাজার ৩৪ জন, ২০১৮ সালে ৩ হাজার ৫৭ জন, ২০১৭ সালে ২ হাজার ৯১৯ জন, ২০১৬ সালে ২ হাজার ৯৮৫ জন, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮৩১ এবং ২০১৪ সালে লাশ হয়ে দেশে ফিরেছেন ২ হাজার ৮৭২ জন। গত ২০১৪ হতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত লাশ হয়ে দেশে ফিরেছেন ৩৩ হাজার ৯৯১ জন প্রবাসী শ্রমিক।

এসব রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের মরদেহের সঙ্গে যে নথিপত্র আসে সে অনুযায়ী মৃত্যুর কারণ লিখে রাখা হয় বিমানবন্দরের প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কে। কীভাবে এতো প্রবাসী মারা যাচ্ছে সেটা বোঝার জন্য ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে আসা ৩০৭ জন প্রবাসীর লাশের মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করেন তারা।

এতে দেখা গেছে, ১৭৬ জনই (৫৬ শতাংশ) মারা গেছেন স্ট্রোকে যারা তরুণ কিংবা মধ্যবয়সী। এরপর ৬২ জনের (২০ শতাংশ) মৃত্যুর কারণ হৃদরোগে আক্রান্ত বা স্বাভাবিক মৃত্যু। কর্মক্ষেত্রে বা বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৫৭ জন (১৮ শতাংশ)।

এছাড়া, সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১২ জন (৪ শতাংশ)। আত্মহত্যা করেছেন ৩ জন। বাকি ২জন খুন। শুধু এক মাস নয়, গত ১৪ বছরের বিভিন্ন সময়ের মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ একই রকম তথ্য পাওয়া গেছে।

শেয়ারনিউজ, ০৮ জুন ২০২৪

পাঠকের মতামত:

প্রবাস এর সর্বশেষ খবর

প্রবাস - এর সব খবর



রে