ঢাকা, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
Sharenews24

মুসা (আ.)-এর কাহিনী কুরআন বনাম বাইবেল

২০২৫ অক্টোবর ২০ ১১:৩৭:৫২
মুসা (আ.)-এর কাহিনী কুরআন বনাম বাইবেল

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ কুরআন এবং বাইবেলের মধ্যে হযরত মুসা (আঃ) এবং ফেরাউনের গল্পে বর্ণিত ঘটনাগুলোর তুলনামূলক আলোচনা করা হয়েছে, যেখানে ঐতিহাসিক প্রমাণাদিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

শুরুতে, মিশরের জনগণের জন্য এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের মতো বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ফেরাউন এক মর্মান্তিক গণহত্যা চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন, যেখানে ইসরাঈলীদের নবজাতক পুত্রসন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছিল। মুসা (আঃ)-এর মা সন্তানকে বাঁচাতে তাকে একটি ঝুড়িতে করে নীল নদে ভাসিয়ে দেন। মহান আল্লাহ তা’আলা অলৌকিকভাবে মুসা (আঃ)-কে ফেরাউনের প্রাসাদেই পৌঁছে দেন, যেখানে ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া তাকে খুঁজে পান এবং নিজের সন্তান হিসেবে লালন-পালনের ব্যবস্থা করেন। বাইবেলে অবশ্য ফেরাউনের কন্যা তাকে খুঁজে পেয়েছিলেন বলে উল্লেখ আছে।

ফেরাউনের এক স্বপ্নের উল্লেখ করা হয়, যেখানে তাকে জানানো হয়েছিল যে বনি ইসরাঈলের এক শিশু তার শাসনের অবসান ঘটাবে। এই স্বপ্ন তাকে আরও ভীত করে তুলেছিল এবং সে ইসরাঈলী শিশুদের হত্যা করার আদেশ দেয়।

মুসা (আঃ) যৌবনে পদার্পণ করে রাজপ্রাসাদের বাইরে নিজের জাতির উপর চলা নির্যাতন প্রত্যক্ষ করেন। এক ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি মিশর ছেড়ে মাদিয়ানে চলে যেতে বাধ্য হন এবং সেখানে আট-নয় বছর অবস্থান করেন। ইসলামী বর্ণনা অনুযায়ী, তিনি নবী শুয়াইব (আঃ)-এর সাথে বসবাস ও শিক্ষা লাভ করেন, আর বাইবেলে তাকে যাজক জেথরোর সাথে থাকার কথা বলা হয়েছে।

মিদিয়ানে থাকার সময় এক রাতে মুসা (আঃ) আলোর ঝলকানি দেখতে পান এবং সেখানে আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে প্রথম ওহী লাভ করেন। আল্লাহ তাকে তাঁর লাঠি মাটিতে ফেলে দিতে এবং হাত বগলের নিচে রাখতে বলেন, যা অলৌকিকভাবে লাঠিতে সাপ এবং উজ্জ্বল সাদা আলোতে পরিণত হয়েছিল। এগুলো ফেরাউনের কাছে তার নবুওয়াতের প্রমাণ হিসেবে কাজ করেছিল।মুসা (আঃ) এবং তার ভাই হারুন (আঃ) ফেরাউনের কাছে গিয়ে বনি ইসরাঈলীদের মুক্তি দেওয়ার দাবি করেন। ফেরাউন তাদের জাদুবিদ্যা বলে উপহাস করে এবং মিশরের সকল জাদুকরকে একত্রিত করে এক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। কুরআন এই দিনটিকে "সৌন্দর্য ও শোভাময়তার দিন" হিসেবে উল্লেখ করেছে, যা প্রাচীন মিশরের ওপেট উৎসবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। জাদুকররা তাদের জাদু দেখালে মুসা (আঃ) তার লাঠি মাটিতে নিক্ষেপ করেন এবং তা এক বিশাল সাপে পরিণত হয়ে জাদুকরদের সাপগুলোকে গিলে ফেলে। এই অলৌকিক ঘটনা দেখে জাদুকররা সাথে সাথেই ঈমান আনেন এবং আল্লাহ তা'আলার সামনে সিজদাবনত হন।

ফেরাউন এবং তার সৈন্যবাহিনী বনি ইসরাঈলদের পিছু ধাওয়া করলে আল্লাহ তা’আলার নির্দেশে মুসা (আঃ) তার লাঠি দিয়ে সমুদ্রে আঘাত করেন, ফলে সমুদ্র দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় এবং বনি ইসরাঈলরা নিরাপদে পার হয়ে যায়। ফেরাউন ও তার সৈন্যরা যখন সমুদ্রের মাঝখানে পৌঁছায়, তখন সমুদ্র আবার মিলিত হয়ে যায় এবং তারা সবাই ডুবে মারা যায়।

কুরআনে ফেরাউনের দেহ সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তা নিদর্শন হয়ে থাকে। আধুনিক যুগে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় ফেরাউনদের মমি আবিষ্কার করা হয়েছে, যা কুরআনের এই দাবিকে সমর্থন করে। ভিডিওতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, মুসা (আঃ)-এর সমসাময়িক ফেরাউনদের মমিগুলোতে এমন একটি ভঙ্গিতে সংরক্ষণ করা হয়েছে যা সিজদার মতো দেখতে।

কুরআন ও বাইবেলের বর্ণনার মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছে। যেমন- বাইবেলে যোসেফ (আঃ)-এর সময়েও ফেরাউন শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, যেখানে কুরআন "আল-মালিক" বা রাজা শব্দ ব্যবহার করেছে, যা ঐতিহাসিক তথ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বাইবেলে মুসা (আঃ)-কে জিব্বা ভারী ও কথা বলতে অক্ষম দেখানো হয়েছে, তবে কুরআন তার প্রার্থনা মঞ্জুর করে জিহ্বার জড়তা দূর হওয়ার কথা উল্লেখ করে। বাইবেলে হারুন (আঃ) স্বর্ণের বাছুর তৈরি করতে সাহায্য করেছিলেন বলে বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে কুরআনে সামিরি নামক এক ব্যক্তির দ্বারা বাছুর তৈরির কথা বলা হয়েছে।

এই সমস্ত সুস্পষ্ট প্রমাণ দেখার পর যদি কেউ সত্যকে অস্বীকার করে, তবে ফেরাউনের সঙ্গে তাদের পার্থক্য কোথায়?

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

ধর্ম ও জীবন এর সর্বশেষ খবর

ধর্ম ও জীবন - এর সব খবর



রে