ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

সাবেক ভূমিমন্ত্রীর আরও ৬১৫ সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুদক

২০২৫ ডিসেম্বর ১৬ ১১:৪২:০০
সাবেক ভূমিমন্ত্রীর আরও ৬১৫ সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক: অর্থপাচারের মাধ্যমে বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়ে তোলার অভিযোগে আলোচিত সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ-এর নামে নতুন করে আরও ৬১৫টি সম্পদের তথ্য উদ্‌ঘাটন হয়েছে। কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনসহ সাতটি দেশে এসব সম্পদের অবস্থান শনাক্ত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দুদকের একাধিক সূত্র জানায়, নতুন পাওয়া নথিসহ জাবেদের নামে মোট সম্পদের সংখ্যা এখন প্রায় এক হাজার ১০০। এসবের মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাট, প্লট, বাড়ি ছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স। প্রায় ১০টি দেশে ছড়িয়ে থাকা এসব সম্পদের আনুমানিক বাজারমূল্য ধরা হচ্ছে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি।

বিএফআইইউ ও দুদকের তথ্যে দেখা যায়, সদ্য শনাক্ত হওয়া ৬১৫টি সম্পদের বড় অংশই যুক্তরাজ্যে অবস্থিত। সেখানে নতুন করে ৩৮১টি সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক। এর আগে একই দেশে তাঁর নামে ৩৪৩টি সম্পদের নথি ছিল। সব মিলিয়ে যুক্তরাজ্যেই জাবেদের নামে ৭২৪টি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।

এ ছাড়া কম্বোডিয়ায় তাঁর ১১১টি সম্পদের তথ্য মিলেছে, যার বাজারমূল্য ৩ কোটি ১০ লাখ ডলারের বেশি। মালয়েশিয়ায় রয়েছে ৪৭টি সম্পদ, যার মূল্য প্রায় ১০ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। ফিলিপাইনে পাওয়া গেছে ২টি সম্পদের তথ্য, যার মূল্য প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ পেসো—বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৮ কোটি টাকা। ভারতের হরিয়ানা ও উত্তর চব্বিশপরগনাসহ বিভিন্ন এলাকায় মোট ১১টি সম্পদের সন্ধান মিলেছে, যার মূল্য ৯ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের বেশি।

তদন্তে আরও উঠে এসেছে, থাইল্যান্ডে জাবেদের নামে ২৪টি সম্পদ রয়েছে, যার বাজারমূল্য ৩৬ কোটি থাই বাতের বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর ৪৪টি সম্পদ এবং ২টি কোম্পানির লাইসেন্স শনাক্ত করা হয়েছে। ভিয়েতনামে রয়েছে ৩০টি সম্পদ। পাশাপাশি সিঙ্গাপুর ও সুইজারল্যান্ডেও তাঁর সম্পদ থাকার প্রমাণ পেয়েছে বিএফআইইউ।

এ বিষয়ে দুদকের তদন্ত টিমের নেতৃত্বদানকারী উপপরিচালক মশিউর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত পাওয়া নথি অনুযায়ী সাবেক ভূমিমন্ত্রীর নামে এক হাজারেরও বেশি সম্পদের তথ্য মিলেছে। একটি নথিতেই ভিয়েতনামে তাঁর ৩০টি সম্পদের উল্লেখ রয়েছে, যা তদন্তের গুরুত্ব আরও বাড়িয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএফআইইউর এক কর্মকর্তা জানান, জাবেদ বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অর্থপাচারের মাধ্যমে সম্পদ গড়ে তোলেন। অবৈধ অভিবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের অর্থ তিনি স্থানীয় এজেন্টদের মাধ্যমে সংগ্রহ করে দেশে তাঁদের স্বজনদের কাছে পরিশোধ করতেন। সেই পাচার করা অর্থ ব্যবহার করেই তিনি ভারত, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ব্যবসা ও কোম্পানি গড়ে তোলেন, যা পরে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তর করা হয়।

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে দুদকের সাবেক মহাপরিচালক মঈদুল ইসলাম বলেন, এ জন্য আন্তর্জাতিক আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স পাঠানো জরুরি। তবে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে কার্যকর চুক্তি না থাকায় এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়ে।

তিনি আরও বলেন, প্রক্রিয়া কঠিন হলেও দুদককে নিয়মতান্ত্রিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। দুর্নীতির সূচকে ভালো অবস্থানে থাকা অনেক দেশই পাচার করা অর্থ ফেরত দিতে সহযোগিতা না করে উল্টো সেগুলো সুরক্ষার ব্যবস্থা নেয়—যা এক ধরনের দ্বৈত নীতির প্রকাশ।

দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাজ্যে জাবেদ ও তাঁর পরিবারের নামে থাকা সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে এ লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি করার বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে।

এমজে/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে