ঢাকা, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫
Sharenews24

নিয়ম ভেঙে ডাকসু ভবনে এসি ঘিরে উত্তেজনা

২০২৫ অক্টোবর ০৮ ১০:২৯:৫৫
নিয়ম ভেঙে ডাকসু ভবনে এসি ঘিরে উত্তেজনা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে গবেষণা ও আবাসন সংকটে ভুগছে, বাজেট ঘাটতির কারণে প্রশাসনও হিমশিম খাচ্ছে। এমন বাস্তবতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনে প্রায় ৯ লাখ টাকায় ৯টি এসি বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নিয়ম ভেঙে অনুমোদন দেওয়া এই প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ নিজেই।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সূত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহে রাজস্ব বাজেট থেকেই এসি বসানোর অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে তখন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম ছুটিতে ছিলেন, তার অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সংকটের প্রেক্ষাপটে কোষাধ্যক্ষ বলেন,"আমি ছুটিতে থাকা অবস্থায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কোন নিয়মে দেওয়া হয়েছে জানি না। আমি থাকলে অবশ্যই প্রশ্ন তুলতাম—এটা হওয়ার কথা না। সবকিছু জবাবদিহির মধ্যে থাকা উচিত।"

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন,"আমি কেবল ফাইলটি ফরওয়ার্ড করেছি, অনুমোদন করিনি। শিক্ষার উন্নয়ন হলে আমি উদার, কিন্তু বিলাসিতা সমর্থন করি না। মৌলিক চাহিদাই যখন পূরণ হচ্ছে না, তখন এসি বসানো অযৌক্তিক।"

সরকারি ক্রয়বিধি অনুযায়ী, শুধুমাত্র জরুরি বা বিরল পণ্যের ক্ষেত্রে ডিপিএম (Direct Purchase Method) পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়। অথচ এসি কেনার ক্ষেত্রেও এই দ্রুত পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান,"ডাকসু থেকে চাওয়ার পর প্রশাসন অনুমোদন দিয়েছে। ‘গ্রি’ কোম্পানির ৯টি এসি বসানো হচ্ছে। ডিপিএম প্রক্রিয়ায় কাজ দ্রুত সম্পন্ন হবে।"

হিসাব পরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, ডাকসুর চলতি বছরের বাজেট ৩০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ভবনের সংস্কার ও সাজসজ্জায় ইতোমধ্যে খরচ হয়েছে ২৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা।

খরচের বিবরণ:

৯টি এসি: ৯,২৩,০০০ টাকা

সাউন্ড সিস্টেম: ৭১,০০০ টাকা

পানির ফিল্টার: ৩৮,৫০০ টাকা

আসবাব ও পর্দা: ৪,০০,০০০ টাকা

নারী-পুরুষ শৌচাগার: ৩,৫০,০০০ টাকা

ওয়ার্ক স্টেশন: ২,৭০,০০০ টাকা

রং ও সংস্কার: ২,৫২,০০০ টাকা

অন্যান্য: ৮৩,০০০ টাকা

প্রশাসন সূত্রের দাবি, প্রথমে উপাচার্য এসির অনুমতি দেননি। কিন্তু ডাকসুর ভিপি আবু সাদিক কায়েম বারবার ফোন করে চাপ প্রয়োগ করেন, যার ফলে পরে উপাচার্য পুনরায় ফাইল এনে অনুমোদন দেন।

তবে ভিপি আবু সাদিক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,"ডাকসু ভবনে বসার মতো পরিবেশ ছিল না। দ্রুত কাজের পরিবেশ তৈরি করতে বলেছি, এসি বসানোর বিষয়ে কিছু বলিনি।"

ডাকসুর জিএস এস এম ফরহাদ বলেন,"আমরা সংস্কারকাজ তদারকি করেছি, যদি এসি বিলাসিতা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় না দিক। ঘাটতি বাজেটের কারণে আমরা নিজ উদ্যোগে সিসিটিভিও বসিয়েছি।"

উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ বলেন,"আমি বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। অনুমোদন প্রক্রিয়ায় কোনো প্রাধিকারের লঙ্ঘন হয়েছে কিনা তা যাচাই করা হবে।"

ঢাবির মতো দেশের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে শিক্ষার্থীরা মৌলিক সুযোগ-সুবিধার অভাবে পড়ছে, সেখানে বিলাসী প্রকল্পের জন্য নিয়ম ভেঙে ব্যয় প্রশ্ন তুলেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ের মধ্যেই।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে