ঢাকা, শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫
Sharenews24

শাপলার জন্য রীতিমতো আইনি যুদ্ধ ঘোষণা এনসিপির!

২০২৫ অক্টোবর ০৩ ১৮:৫১:১৬
শাপলার জন্য রীতিমতো আইনি যুদ্ধ ঘোষণা এনসিপির!

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সম্প্রতি ‘শাপলা’ প্রতীক বরাদ্দ না পাওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে “আইনগত ভিত্তিহীন ও স্বেচ্ছাচারী” বলে অভিযোগ তুলেছে। দলটি বলেছে, তাদের পক্ষ থেকে নিয়ম মেনে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের আবেদন ও প্রতীক বরাদ্দের আবেদন জমা দেওয়া হলেও, কমিশন তাদের পছন্দের প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’কে তালিকাভুক্ত না করে একপেশে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুক্রবার (৩ অক্টোবর ২০২৫) এনসিপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের বরাত দিয়ে এই ব্যাখ্যা প্রকাশ করেন।

এনসিপি জানায়, দলটি ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে আত্মপ্রকাশের পর থেকেই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে নিবন্ধন ও নির্বাচনী প্রস্তুতির বিষয়ে নিয়মিত যোগাযোগ করে আসছে। এপ্রিল থেকে তাদের প্রতিনিধি দল বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছে, যার মধ্যে ছিল নিবন্ধনের সময়সীমা, নির্বাচনী আইন, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন ও প্রবাসীদের ভোটাধিকারের মতো বিষয়। ৪ জুন নির্বাচন কমিশনের একটি কমিটির সদস্যের সঙ্গে এনসিপির প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়, যেখানে তারা জানতে পারে ‘শাপলা’ প্রতীক চূড়ান্ত তালিকায় রাখা হয়েছে। এরপর ২২ জুন দলটি নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে এবং ‘শাপলা’ প্রতীক সংরক্ষণের জন্য আনুষ্ঠানিক আবেদন জানায়।

প্রতীক দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে এনসিপি বলেছে, শাপলা প্রতীক শুধু দলীয় প্রচারের অংশই নয়, এর সঙ্গে সাধারণ মানুষের এক আবেগ-সংযুক্তি তৈরি হয়েছে। এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচিতে সারা দেশের মানুষ খাল-বিল-জলাশয় থেকে শাপলা তুলে এনে প্রতীকের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছে। কিন্তু ৯ জুলাই একটি সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে এনসিপি জানতে পারে, নির্বাচন কমিশন জাতীয় প্রতীক হওয়ায় ‘শাপলা’ প্রতীক হিসেবে তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করবে না। এনসিপির দাবি, নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্ত আইনত সঠিক নয় এবং শাপলাকে জাতীয় প্রতীকের অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রতীক তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার কোনো ভিত্তি নেই।

দলটির যুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশের সংবিধান ও জাতীয় প্রতীক সংক্রান্ত ১৯৭২ সালের আইন অনুযায়ী ‘শাপলা’ একা জাতীয় প্রতীক নয়। বরং জাতীয় প্রতীক গঠিত হয়: পানিতে ভাসমান শাপলা ফুল, দুই পাশে ধানের শীষ, উপরে তিনটি পাটপাতা এবং তার চারপাশে চারটি তারা দিয়ে। এই উপাদানগুলোর সম্মিলিত রূপই জাতীয় প্রতীক। অথচ নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে জাতীয় প্রতীকের অন্তর্ভুক্ত উপাদান ‘ধানের শীষ’ বিএনপিকে, ‘তারা’ প্রতীক জেএসডিকে এবং জাতীয় ফল ‘কাঁঠাল’ বিজেপিকে বরাদ্দ দিয়েছে। এমনকি ‘সোনালী আঁশ’ প্রতীক পেয়েছে তৃণমূল বিএনপি। তাহলে শুধুমাত্র শাপলাকে প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত পক্ষপাতদুষ্ট বলে মনে করে এনসিপি।

এনসিপি আরো জানায়, ১৩ জুলাই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে তারা এই বিষয়টি তুলে ধরে এবং লিখিতভাবে জানায়, শাপলাকে প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ দিতে আইনগত কোনো বাধা নেই। তারা উদাহরণসহ ব্যাখ্যা দেয় যে, জাতীয় প্রতীকের অংশ হওয়া সত্ত্বেও অন্যান্য প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, ফলে শাপলা প্রতীককে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত আইনি সীমা অতিক্রম করেছে। এরপরেও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো লিখিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি এবং কমিশনের অবস্থান অস্পষ্টই রয়ে গেছে।

পরবর্তীতে, ৩ আগস্ট এনসিপি প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর চিঠির মাধ্যমে প্রতীক বরাদ্দের জন্য নতুন করে আবেদন করে। সেই আবেদনে তারা উল্লেখ করে, যদি ‘শাপলা’ বরাদ্দ সম্ভব না হয়, তাহলে ‘সাদা শাপলা’ অথবা ‘লাল শাপলা’ প্রতীক তাদের দেয়া হোক। এনসিপি জানায়, প্রতীকের ভিন্ন সংস্করণ (variants) নিয়ে আলোচনায় বসতে তারা সবসময় প্রস্তুত রয়েছে।

পরিস্থিতি ঘোলাটে হলেও পরে এনসিপি জানতে পারে, তাদের দল হিসেবে নিবন্ধনের সব শর্ত পূরণ হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু ২৩ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব সংবাদমাধ্যমকে জানান, শাপলা প্রতীক নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার তফসিলে অন্তর্ভুক্ত নয়, ফলে এনসিপিকে এটি বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয়। এনসিপি এই সিদ্ধান্তকে ‘একরোখা ও পক্ষপাতদুষ্ট’ আখ্যা দিয়ে বলে, কমিশনের এই সিদ্ধান্ত তাদের নিরপেক্ষতা ও সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির প্রতিশ্রুতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

সবশেষে এনসিপি স্পষ্টভাবে জানায়, তারা আশা করছে নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে ‘শাপলা’, ‘সাদা শাপলা’ বা ‘লাল শাপলা’—এই তিনটির যেকোনো একটি প্রতীক তাদের বরাদ্দ দেবে। একই সঙ্গে তারা আশা করে, কমিশন ভবিষ্যতে পক্ষপাতহীনভাবে কাজ করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ তৈরি করবে।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে