ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

দেউলিয়ার পর্যায়ে ১২ ব্যাংক, গ্রাহকদের টাকার কী হবে?

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৪ ০৯:০৬:৩২
দেউলিয়ার পর্যায়ে ১২ ব্যাংক, গ্রাহকদের টাকার কী হবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে ব্যাপক অনিয়ম, লুটপাট এবং খেলাপি ঋণের উল্লম্ফনের কারণে তীব্র সংকট চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বক্তারা দেশের ব্যাংক খাতের এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তুলে ধরেন।

প্রতিবেদনে উল্লিখিত প্রধান সমস্যাগুলো হলো:

খেলাপি ঋণ: খেলাপি ঋণের পরিমাণ নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। ভিডিওতে খেলাপি ঋণ ৫ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়া এবং খেলাপি ঋণের হার মোট ঋণের ৩০-৪০ শতাংশে পৌঁছানোর আশঙ্কার কথা বলা হলেও, সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ মাস নাগাদ ৬১টি তফসিলি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২৪.১৩% এ উন্নীত হয়েছে এবং ২০২৫ সালের জুন মাস নাগাদ এটি প্রায় ৬ লক্ষ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। গোপন খেলাপি ঋণ এই অঙ্ককে ৯ লক্ষ কোটি টাকায় নিয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) খেলাপি ঋণের সর্বোচ্চ পরিমাণের কারণে বাংলাদেশকে এশিয়ার "সবচেয়ে দুর্বল ব্যাংকিং ব্যবস্থা" হিসেবে অভিহিত করেছে।

ব্যাংকের স্থিতিশীলতা: প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংক কোনোমতে টিকে আছে, ১২টি ব্যাংক দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে এবং ১৫টি ব্যাংক অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসের কিছু উৎস অনুযায়ী, অন্তত ১০টি ব্যাংক প্রযুক্তিগতভাবে দেউলিয়া। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চ খেলাপি ঋণের কারণে পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক (ফার্স্ট সিকিউরিটি, সোশ্যাল ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন এবং এক্সিম ব্যাংক) একটি নতুন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেগুলোর খেলাপি ঋণের হার ৪৮% থেকে ৯৮% পর্যন্ত।

তারল্য সংকট: অনেক সাধারণ গ্রাহক তাদের জমা রাখা অর্থ তুলতে পারছেন না, যা ব্যাংকিং খাতে ক্রমবর্ধমান তারল্য সংকটে অবদান রাখছে। বক্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, দীর্ঘস্থায়ী সংকট এবং উদ্ধার করা সম্ভব না হওয়া পাচারকৃত অর্থ এই তারল্য সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।

দুর্নীতি ও লুটপাট: সেমিনারে বক্তারা অভিযোগ করেন যে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে ব্যাপক "লুটপাট" হয়েছে। তারা সুনির্দিষ্টভাবে এস. আলম গ্রুপকে সমগ্র ব্যাংকিং খাত এককভাবে ধ্বংস করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন, যার সহযোগীরাও এই ক্ষতিসাধনে আরও অবদান রেখেছে। এস. আলম গ্রুপ এবং এর মালিক সাইফুর আলমের বিরুদ্ধে ব্যাংকিং খাত থেকে ২ লক্ষ কোটি টাকার বেশি (২ ট্রিলিয়ন টাকা) লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে, যার বেশিরভাগই বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং তা পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা খুবই কম।

সেমিনারের বিবরণ: এই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করার জন্য সেমিনারটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং জার্মানির ওটিএইচ অ্যামবার্গ-ওয়েইডেন যৌথভাবে আয়োজন করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুরকে সংবাদ প্রতিবেদনে প্রধান অতিথি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তিনি সাম্প্রতিক (২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর) ব্যাংক খাতের সমস্যা ও সমাধানের প্রস্তাব নিয়ে সংবাদ নিবন্ধে আলোচিত হয়েছেন। অনুষ্ঠানে বক্তারা উল্লেখ করেন যে, দেউলিয়াত্বের সম্মুখীন ব্যাংকগুলোর নাম প্রকাশ্যে জানানো হয়নি।

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে