ঢাকা, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সংকটের চূড়ান্ত সমাধান: চীনা রাষ্ট্রদূত

২০২৫ ডিসেম্বর ১৪ ১৭:২৭:০৩
প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সংকটের চূড়ান্ত সমাধান: চীনা রাষ্ট্রদূত

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংকট নিরসনে প্রত্যাবাসনই একমাত্র টেকসই সমাধান বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। তবে তিনি মনে করেন, বর্তমান বাস্তবতায় এই প্রক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। আরাকান রাজ্যের স্থল পরিস্থিতি এখনও অনুকূল নয় বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রত্যাবাসনের পথ সুগম করতে মিয়ানমারের ভেতরে কার্যকর যুদ্ধবিরতি জরুরি।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর–এর সঙ্গে রোহিঙ্গাদের জন্য ২৫ লাখ মার্কিন ডলার সহায়তা সংক্রান্ত এক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রদূত।

ইয়াও ওয়েন বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কবে শুরু হবে বা কত সময় লাগবে—এ বিষয়ে তিনি কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা বা নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না। তার ভাষ্য অনুযায়ী, এই প্রক্রিয়া শুধু বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল নয়; বরং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সমর্থন ও সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, দীর্ঘ আট বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আর বিলম্ব হওয়া উচিত নয়।

তিনি আরও বলেন, নিরাপদ, স্বেচ্ছাসেবী ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য একাধিক শর্ত পূরণ করতে হবে। এজন্য চীন ছাড়াও আন্তর্জাতিক সংস্থা, প্রতিবেশী দেশ, আসিয়ানভুক্ত রাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। সবাইকে একই লক্ষ্য সামনে রেখে একযোগে কাজ করতে হবে।

রাষ্ট্রদূত জোর দিয়ে বলেন, প্রত্যাবাসন শুধু চীনের অবস্থান নয়—বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের দৃষ্টিভঙ্গিও একই। তার মতে, রোহিঙ্গা সংকট কেবল বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দ্বিপক্ষীয় ইস্যু নয়; এটি আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। এ কারণে ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থার আওতায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

তিনি জানান, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। প্রত্যাবাসনের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য যা যা করা সম্ভব, চীন তা অব্যাহত রাখবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

এদিকে, ইউএনএইচসিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, চীনের দেওয়া ২৫ লাখ ডলারের সহায়তা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য এলপিজি সরবরাহ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সহায়তা করবে। এতে জ্বালানি কাঠের ওপর নির্ভরতা কমবে, পাশাপাশি ক্যাম্পের আশপাশের বনভূমি রক্ষা পাবে এবং শরণার্থীদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টির মান উন্নত হবে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি ইভো ফ্রেইসেন বলেন, বৈশ্বিক অর্থসহায়তা কমে যাওয়ার এই সংকটময় সময়ে চীনের এই অনুদান অত্যন্ত সময়োপযোগী। তিনি বলেন, অনেক জীবনরক্ষাকারী কর্মসূচি বর্তমানে অর্থসংকটে রয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে এই সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তিনি আরও জানান, এই সহায়তা শুধু রান্নার গ্যাস সরবরাহেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি শরণার্থীদের মর্যাদা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতেও সহায়ক। এতে স্পষ্ট হয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে রয়েছে।

রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, বিশ্বব্যাপী মানবিক সহায়তার তহবিল কমে আসায় ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জীবন আরও কঠিন হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন সহযোগী ও বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে চীন তার মানবিক সহায়তা আরও বিস্তৃত করছে।

তিনি জানান, এই প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চীন, ইউএনএইচসিআর এবং বাংলাদেশ সরকার ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে, যাতে রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা দ্রুত এর সুফল পেতে পারেন।

এমজে/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে