ঢাকা, বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

মূলধন সংকটে ২৩ ব্যাংক, ঘাটতি ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা

২০২৫ আগস্ট ২০ ০৭:০০:১৫
মূলধন সংকটে ২৩ ব্যাংক, ঘাটতি ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ব্যাংক খাত একটি ভয়াবহ সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে। মূলধন ঘাটতি দিন দিন এতটাই গভীর হচ্ছে যে, তা পুরো আর্থিক ব্যবস্থাকে অস্থির করে তুলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত, বিশেষায়িত ও বেসরকারি—মোট ২৩টি ব্যাংক বর্তমানে মূলধন ঘাটতির শিকার হয়েছে, যার সম্মিলিত পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ২৮৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা।

অর্থনীতিবিদরা এই অবস্থার জন্য দীর্ঘদিনের অনিয়ম এবং দুর্নীতিপূর্ণ ঋণ বিতরণকে দায়ী করেছেন। খেলাপি ঋণের পাহাড় তৈরি হওয়ায় তা আর ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না, যার চাপ পুরো ব্যাংকিং খাতকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট কেবল একটি সংখ্যা নয়, বরং এটি পুরো ব্যাংক খাতের দুর্বল কাঠামোগত সমস্যার প্রতিফলন। রাজনৈতিক প্রভাব, অদক্ষ পরিচালনা পর্ষদ এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর নতুন করে বেশ কিছু ব্যাংকের দুর্বলতা প্রকাশ্যে এসেছে। ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংক মূলধন ঘাটতির নতুন তালিকায় যুক্ত হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, অতীতে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অনিয়ন্ত্রিত ঋণ বিতরণের প্রবণতার ফলে দুর্বল আর্থিক অবস্থার বাস্তব চিত্র এখন সামনে আসছে।

সবচেয়ে বড় ঘাটতিতে যেসব ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সবচেয়ে বড় ঘাটতিতে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, যার পরিমাণ ১৮ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। এরপর রয়েছে যথাক্রমে ইউনিয়ন ব্যাংক (১৭ হাজার ৪৯২ কোটি), জনতা ব্যাংক (১২ হাজার ৭৬৮ কোটি), ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক (৭ হাজার ৭৯০ কোটি) এবং ইসলামী ব্যাংক (৬ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা)।

অন্যান্য বড় অঙ্কের ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক (৫ হাজার ৮২২ কোটি), পদ্মা ব্যাংক (৫ হাজার ১৭০ কোটি), রূপালী ব্যাংক (৪ হাজার ৪৭০ কোটি) এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক (৩ হাজার ৯৮০ কোটি)।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, খেলাপি ঋণের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি মূলধন ঘাটতির মূল কারণ। তার মতে, গত সরকারের সময়কার অনিয়ম ও লুটপাটের কারণেই আজ অনেক ব্যাংক গভীর সংকটে পড়েছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে। জানা গেছে, খুব শিগগিরই পাঁচটি দুর্বল ব্যাংক একীভূত করা হবে এবং আরও ১১টি ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্য মূল্যায়ন চলছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলোকে একটি কার্যকর পরিকল্পনা জমা দিতে বলেছে এবং তা বাস্তবসম্মত না হলে কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের মার্চ শেষে মোট বিতরণ করা ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৪.১৩ শতাংশ। মাত্র তিন মাসেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা।

মিজান/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে