ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

আল কোরআনে সাত আসমান: বিজ্ঞান ও ধর্মের মিলনবিন্দু

২০২৫ সেপ্টেম্বর ৩০ ১২:১৩:০৫
আল কোরআনে সাত আসমান: বিজ্ঞান ও ধর্মের মিলনবিন্দু

নিজস্ব প্রতিবেদক : আল-কোরআনে বহুবার ‘সাত আসমান’ শব্দগুচ্ছ এসেছে। বিশেষ করে সূরা মুলক (৩ নম্বর আয়াত) এবং সূরা নূহ (১৫ নম্বর আয়াতে) বলা হয়েছে, আল্লাহর সৃষ্টি সাতটি আসমান বা আকাশের স্তরবিশিষ্ট, যেগুলোর মধ্যে কোনো ত্রুটি নেই। এই আসমান বা আকাশের স্তরগুলো কী কী এবং কীভাবে আমাদের আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, তা বহু মনোযোগের বিষয়।

আরবিতে আকাশকে ‘সামা’ (একবচন) ও ‘সামাওয়াত’ (বহুবচন) বলা হয়। ‘সাত আসমান’ বা ‘সপ্ত স্তর’ কুরআনের ভাষায় বহুবার ব্যবহৃত হয়েছে, যা কেবল পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল নয়, বরং মহাবিশ্বের বিভিন্ন স্তর ও মাত্রার ইঙ্গিত দেয়।

অবিশ্বাসীদের দৃষ্টিভঙ্গি ও বিতর্ক

অনেকে সাত আসমানকে কেবল কাল্পনিক বা পৌরাণিক কল্পনা মনে করেন, কারণ আধুনিক বিজ্ঞানে এর সরাসরি প্রমাণ নেই। আবার কেউ কেউ এটিকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে তুলনা করেন। তবে এটি সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নয় কারণ বায়ুমণ্ডলের মাত্রা সীমিত এবং সাতটি স্তর এমনভাবে সুনির্দিষ্ট নয়।

ইসলামী মুফাসসিরদের ব্যাখ্যা ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

মুফাসসিররা ‘সাত আসমান’কে বিভিন্ন মাত্রার আকাশ হিসেবে বুঝিয়েছেন। যেমন:

প্রথম আসমান: পৃথিবীর নিকটবর্তী আকাশ, যেখানে গ্রহ, নক্ষত্র ও উপগ্রহ রয়েছে।

বাকি স্তরগুলো ক্রমান্বয়ে দূরবর্তী মহাজাগতিক স্তর ও মহাবিশ্বের উচ্চ মাত্রা নির্দেশ করে।

ইমাম গাযালী (রহঃ) তাঁর কিতাব ‘মুকাশাফাতুল কুলুব’ এ সাত আসমানের নাম ও গঠন বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি এই স্তরগুলোকে আলোকোজ্জ্বল পদার্থ দ্বারা নির্মিত হিসাবে বর্ণনা করেছেন, যেগুলো বিভিন্ন রঙ ও গুণের অধিকারী।

আধুনিক বিজ্ঞান ও মহাবিশ্বের স্তরসমূহ

তুরস্কের মহাকাশ বিজ্ঞানী ড. হালুক নূর তাঁর গবেষণায় মহাবিশ্বকে সাতটি স্তরে ভাগ করেছেন:

সৌরজগত: আমাদের সূর্য ও তার গ্রহসমূহ।

মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির চৌম্বকীয় বলয়।

স্থানীয় গ্যালাক্সি গুচ্ছ (লোকাল গ্রুপ)।

মহাজাগতিক কেন্দ্রীয় বলয়।

দূরবর্তী গামা রশ্মি বা আলোক উৎস।

মহাবিশ্বের সম্প্রসারণশীল ক্ষেত্র।

মহাবিশ্বের সীমাহীন অসীমতা।

এই স্তরগুলো কোরআনের সাত আসমানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং বলছে মহাবিশ্ব অনেক স্তরে বিভক্ত ও সম্প্রসারিত।

কুরআন ও বিজ্ঞান: মিল ও প্রাসঙ্গিকতা

কুরআনে ‘সাত আসমান’ কেবল আকাশের স্তর নয়, বরং মহাবিশ্বের পর্যায়ক্রমিক স্তর ও মহাকাশের বিভিন্ন মাত্রার ইঙ্গিত দেয়। NASA-সহ অনেক বিজ্ঞানীরাও বলেছেন, আমরা যে ‘পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব’ দেখতে পাই তা মহাবিশ্বের পুরো অংশ নয়, তার বাইরে আরও বিশাল ও রহস্যময় অঞ্চল রয়েছে।

কুরআন বহু তথ্য প্রদান করেছে যা আধুনিক বিজ্ঞান অনেক পরে আবিষ্কার করেছে, যেমন:

মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ (সূরা আয়াত: ৫১:৪৭)।

ভ্রূণের পর্যায়ক্রমিক গঠন।

পৃথিবীর স্থায়িত্ব ও পাহাড়ের ভূমি সংক্রান্ত তথ্য।

‘সাত আসমান’ কুরআনের একটি গভীর ও বহুমাত্রিক বিষয়, যা শুধু ধর্মীয় নয়, আধুনিক বিজ্ঞানের আলোয়ও প্রাসঙ্গিক। এটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল নয় বরং মহাবিশ্বের বিভিন্ন স্তরকে নির্দেশ করে। ইসলাম ও বিজ্ঞান একসঙ্গে কাজ করে মহাবিশ্বের রহস্য উদঘাটনে সাহায্য করে।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

ধর্ম ও জীবন এর সর্বশেষ খবর

ধর্ম ও জীবন - এর সব খবর



রে