ঢাকা, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

১০৪ খানা আসমানী কিতাবের বিবরণ ও শ্রেণিবিন্যাস

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৮ ১৬:০৮:২৪
১০৪ খানা আসমানী কিতাবের বিবরণ ও শ্রেণিবিন্যাস

নিজস্ব প্রতিবেদক : ধর্মীয় ইতিহাসে আসমানী কিতাব বা “Heavenly Books” বলতে বোঝানো হয় সেই সমস্ত পবিত্র গ্রন্থ, যা আল্লাহ তাঁর নবী ও রাসূলদের মাধ্যমে মানব জাতিকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য নাযিল করেছেন। ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে, এই কিতাবগুলো হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষকে দৃষ্টিনন্দন, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিশারী হিসেবে প্রেরিত দিকনির্দেশনা।

মোট আসমানী কিতাবের সংখ্যা ও শ্রেণিবিন্যাস

পৃথিবীতে মোট ১০৪টি আসমানী কিতাব নাযিল হয়েছে, যেগুলোর মধ্যে চারটি প্রধান কিতাব এবং একশটি সহিফা অন্তর্ভুক্ত।

সহিফা: ছোট আসমানী গ্রন্থ

সহিফা বলতে বোঝানো হয় নবীদের ওপর নাযিল ছোট ছোট ঐশী বার্তা বা ধর্মীয় গ্রন্থ। এগুলো বড় কিতাব যেমন কুরআন বা তাওরাতের মতো ব্যাপক নয়।

নিম্নরূপ সহিফাগুলোর সংখ্যা ও নবী:

হযরত আদম (আ.) - ১০টি সহিফা

হযরত শীস (আ.) - ৫০টি সহিফা

হযরত ইদরীস (আ.) - ৩০টি সহিফা

হযরত ইব্রাহীম (আ.) - ১০টি সহিফা

এই সহিফাগুলো প্রধানত খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ সালের পূর্বে নাযিল হলেও, কারণ স্বরূপ বড় কোনো কাঠামোতে সংরক্ষণের অভাবের কারণে এগুলো হারিয়ে গেছে বা বিকৃত হয়েছে।

চারটি প্রধান আসমানী কিতাবের বিবরণ

১. তাওরাত (Torah)

নাযিলের সময় ও স্থান: প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ১২০০-১৫০০ সালে, হযরত মূসা (আ.) এর ওপর সিনাই পাহাড়ে।

স্বরূপ: মূলত পাথরের ফলকে লেখা।

সংরক্ষণ: হযরত মূসার মৃত্যুর পর মূল তাওরাত হারিয়ে যায়। পরে এটি মৌখিকভাবে সংরক্ষিত ছিল, কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৬ সালে জেরুজালেম ধ্বংসের ফলে মূল অনুলিপি বিলুপ্ত হয়।

পুনঃসংকলন: খ্রিস্টপূর্ব ৪৫৭ সালে হযরত উজাইর (আ.) এর তত্ত্বাবধানে পুনর্গঠন করা হয়।

বর্তমান অবস্থা: ইহুদি ধর্মে “তোরাহ” নামে পরিচিত, আর খ্রিস্টান বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টের অংশ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তবে কুরআন অনুসারে তাওরাতের অনেক অংশ বিকৃত হয়েছে।

২. যাবুর (Psalms)

নাযিলের সময়: আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১০০০-৯০০ সালে হযরত দাউদ (আ.) এর ওপর।

স্বরূপ: প্রার্থনা, স্তুতি ও গানের সংকলন।

বর্তমান অবস্থা: আলাদা কিতাব হিসেবে সংরক্ষিত না থাকলেও, বাইবেলের পসালমস অংশে এর কিছু অংশ পাওয়া যায়। ইসলামী দৃষ্টিতে যাবুর মূল সারাংশ কুরআনে প্রতিফলিত হয়েছে।

৩. ইনজিল (Gospel)

নাযিলের সময়: খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে, হযরত ঈসা (আ.) এর ওপর।

স্বরূপ: মৌখিক শিক্ষা ও উপদেশ, যেগুলো শিষ্যদের মাধ্যমে প্রচারিত।

বর্তমান অবস্থা: বর্তমান খ্রিস্টীয় গসপেল ইনজিলের বিকৃত রূপ হিসেবে গণ্য। ইসলামে বিশ্বাস করা হয়, আসল ইনজিল আজ হারিয়ে গেছে বা বিকৃত হয়েছে।

৪. কুরআন (Quran)

নাযিলের সময়: ৬১০ থেকে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত, হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর ওপর।

স্বরূপ: মৌখিক ও লিখিত দুইভাবে সংরক্ষিত।

সংকলন ও সংরক্ষণ: হযরত আবু বকর (রা.) এর আমলে সংকলিত, পরবর্তীতে হযরত উসমান (রা.) এর সময় এককরণ ও যাচাই-বাছাই করা হয়।

বর্তমান অবস্থা: সম্পূর্ণ অবিকৃত ও পুরোপুরি সংরক্ষিত। এটি পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাবের সত্যায়নকারী এবং চূড়ান্ত বিধান।

আসমানী কিতাবগুলো মানব জাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে অমুল্য দিকনির্দেশনা। যদিও অনেক কিতাব হারিয়ে গেছে বা বিকৃত হয়েছে, কুরআন আজও অক্ষত এবং মানবতা চলার সঠিক পথ নির্দেশ করে আসছে।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

ধর্ম ও জীবন এর সর্বশেষ খবর

ধর্ম ও জীবন - এর সব খবর



রে