ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

শেয়ারবাজারের পাঁচ ব্যাংককে শুনানিতে ডেকেছে বাংলাদেশ ব্যাংক

২০২৫ আগস্ট ২৮ ১৪:৫২:০২
শেয়ারবাজারের পাঁচ ব্যাংককে শুনানিতে ডেকেছে বাংলাদেশ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে বড় পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচটি ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করে একটি নতুন ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। এরই অংশ হিসেবে আগামী রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে ব্যাখ্যা শুনানি, যা চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২৬ আগস্ট ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যানদের উদ্দেশে চিঠি পাঠিয়েছে। সেখানে সর্বশেষ মূলধন অবস্থা, তারল্য সহায়তা, খেলাপি ঋণ, সিআরআর এবং প্রভিশন ঘাটতির তথ্য নিয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি কেন এই ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা উচিত নয়— তা লিখিতভাবে উপস্থাপনের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

একীভূতকরণের আওতায় আসা পাঁচ ব্যাংক হলো— ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক। তবে শুরু থেকেই এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক একীভূত হওয়ার বিরোধিতা করছে। এরই মধ্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল হকসহ নয়জন শেয়ারহোল্ডার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত আপত্তি জানিয়েছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, নতুন ব্যাংক গঠনে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৫ হাজার কোটি টাকা সরকারকে মূলধন হিসেবে দিতে হবে, আর বাকি ১০ হাজার কোটি আসবে আমানত বিমা ট্রাস্ট ফান্ড থেকে ঋণ আকারে। তবে এজন্য সংশোধন করতে হবে বিদ্যমান আইন, কারণ বর্তমানে ওই তহবিল কেবল ট্রেজারি বিল ও বন্ডেই বিনিয়োগ করতে পারে।

সরকার অনুমোদন দিলে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দেবে এবং পরবর্তীতে আরজেএসসি থেকে নিবন্ধন নেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে সরকারি ব্যাংক হিসেবে পরিচালিত হবে প্রতিষ্ঠানটি, যার কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থাপনের জন্য মতিঝিলের সেনাকল্যাণ ভবনে জায়গা ভাড়া নেওয়ার আলোচনা চলছে। পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হবে ব্যাংকিং, আইন, তথ্যপ্রযুক্তি ও আর্থিক খাতের অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে। তারা দায়িত্ব নিয়েই নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ করবেন।

শাখা পুনর্বিন্যাস প্রক্রিয়ায় কর্মী ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা থাকলেও গ্রামীণ এলাকায় নতুন শাখা খোলার মাধ্যমে তা সামাল দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া, আমানত সংগ্রহ যে এলাকায় হবে, সেই এলাকার বিনিয়োগকেও অগ্রাধিকার দেওয়ার নীতি গ্রহণ করা হবে।

গত এক বছরে এসব ব্যাংকের আমানত ধারাবাহিকভাবে কমেছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমানত ছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা, যা মার্চে নেমে আসে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৮৯৯ কোটিতে। চলতি বছরের মে মাসে তা আরও কমে দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৬ কোটিতে। বিপরীতে ঋণস্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৪১৩ কোটিতে।

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, পাঁচ ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ৭৭ শতাংশ। এর ফলে নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ৫০১ কোটি টাকায়।

খেলাপি ঋণের অনুপাতে সবচেয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে ইউনিয়ন ব্যাংক (৯৮%)। এর পরেই ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক (৯৬%), গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক (৯৫%), সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (৬২%) এবং এক্সিম ব্যাংক (৪৮%)। বিশেষ ধার হিসেবে আমানত ফেরাতে এক্সিম ব্যাংক নিয়েছে সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী নিয়েছে ৭ হাজার ৫০ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ৬ হাজার ৬৭৫ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ২ হাজার ২৯৫ কোটি এবং ইউনিয়ন ব্যাংক নিয়েছে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

সালাহউদ্দিন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে