ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

যুক্তরাজ্যে টিকটকে নোংরা ট্রলের শিকার বাংলাদেশি নারীরা, ভাবছেন আত্মহত্যার কথা

২০২৪ এপ্রিল ০৪ ১২:৩৩:৫৬
যুক্তরাজ্যে টিকটকে নোংরা ট্রলের শিকার বাংলাদেশি নারীরা, ভাবছেন আত্মহত্যার কথা

প্রবাস ডেস্ক : যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশীদের মধ্যে টিকটক একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় যোগাযোগের মাধ্যম। বিশেষ করে রক্ষণশীল পরিবারের মহিলারা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার জন্য এটি ব্যবহার করে। তাদের অধিকাংশ দৃষ্টিভঙ্গি নারীবাদী-কেন্দ্রিক।

হাসান সাইদ নামে ফ্রান্সে বসবাসকারী এক তরুণ বাংলাদেশি সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশি নারীদের স্বাধীন মত প্রকাশ পছন্দ করেন না। সে বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশি নারীদের অনলাইন বুলিংয়ের নেশায় আসক্ত। তার ভয়ংকর দাঙ্গায় অনেক প্রবাসী নারীর জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

যুক্তরাজ্যে এমন বেশ কয়েকজন নারীর সন্ধান পেয়েছে বিবিসি। হাসানের ট্রলের শিকার ওই নারীদের অনেকে সংবাদমাধ্যমটিকে জানিয়েছেন, তাদের মানসিক অবস্থা এতটাই বিপর্যস্ত যে মাঝেমধ্যেই আত্মহত্যার চিন্তা নাড়া দিয়ে উঠছে মাথায়।

মঙ্গলবার (০২ এপ্রিল) এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। তাতে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের পুলিশ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী ওই নারীরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সুযোগে ক্রমেই আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে প্যারিসের উপকণ্ঠে বসবাসরত বাংলাদেশি ওই তরুণ। এমনকি অনেক নারীকে ধর্ষণ ও হত্যারও হুমকি দিচ্ছে সে।

যুক্তরাজ্যের ইয়র্কশায়ারে বসবাস করেন সুলতানা (ছদ্মনাম)। তিনি জানান, নারীবিদ্বেষ ও বাজে সম্পর্কের বিষয়ে টিকটকে আওয়াজ তোলেন তিনি।

২০২১ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রলের শিকার হন তিনি। মূলত ট্রলের শিকার হওয়া তার এক বন্ধুর পক্ষে কথা বলার পর তিনিও হাসানের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন।

হাসানের ট্রল এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল যে সামাজিকভাবে হেয় হয়ে মানসিকভাবে একেবারে ভেঙে পড়েন সুলতানা। নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছিল, মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। আমি কান্না করেছি। খেতে পারিনি, ঘুমাতে পারিনি। মনে হচ্ছিল, এখানে আর থাকতে চাই না।’

তিনি বলতে থাকেন, ‘আমি কাজে ছিলাম। এই সময়ে আমার কিছু টিকটক ফলোয়ার আমাকে ছোট বার্তা পাঠিয়েছে। তারা জিজ্ঞেস করছিলেন আমি হাসানের ওই ভিডিওগুলো দেখেছি কি না। লোকেরা সেই ভিডিও এবং পোস্টগুলিতে মন্তব্য করছিল। তারা আমাকে দেখে হাসছিল। এমন নিপীড়ন চলতে থাকে দুই বছর ধরে। এটি এমন একটি অভিজ্ঞতা ছিল যা তিনি কখনই ভুলতে পারবেন না।’

সুলতানা বলেন, ‘আমার মানসিক স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। সুস্থ হতে থেরাপি নিয়েছি। ট্রলের ঘটনাগুলো আমার অসুস্থতা বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি তা আমাকে পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিস-অর্ডারের দিকে ঠেলে দিয়েছে।’

ভুক্তভোগীরা বলছেন, অনেক রক্ষণশীল পুরুষ নারীদের স্বাধীন মতামত প্রকাশ করা পছন্দ করেন না। তারা যেকোনো উপায়ে নারীদের আটকাতে চায়। এ জন্য তারা বেছে নেয় অনলাইন বুলিং। প্যারিসে বসবাসকারী যুবক হাসান সাইদ এই দলের একজন।

হাসান মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে তার ভিকটিমদের ব্যক্তিগত ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করে। তারপর তাদের সবুজ পর্দায় নিয়ে ট্রল ভিডিও তৈরি করেন। ভিকটিমটি পরে টিকটক লাইভে এসে মহিলাদের চেহারা এবং অন্যান্য জিনিস নিয়ে মজা করে। তিনি নারীদের ধর্ষণ ও হত্যার হুমকিও দেন।হাসানের অন্য শিকার হলেন যুক্তরাজ্যের ওয়েলসের একজন মহিলা মাসুমা। উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি টিকটিক রান্নার ভিডিও তৈরি করে এবং একটি অনলাইন স্টোর চালায়। একদিন এরকম একটি লাইভ চলাকালীন, হাসান সেখানে উপস্থিত হন এবং তাকে তার শোতে অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানান। মাসুমা রাজি না হলে তাকে ফাঁসি দেওয়ার হুমকি দেন হাসান।

এরপর মাসুমা একটি ভিডিও শেয়ার করেন যাতে ওই যুবক সম্পর্কে অন্যদের জানানো হয় এবং তাদের অ্যাকাউন্টে রিপোর্ট করার জন্য অনুরোধ করা হয়। হাসান আরও রেগে গিয়ে তাকে নিয়ে ফালতু ভিডিও বানাতে থাকে। একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে মাসুমা বলছেন তিনি একজন যৌনকর্মী।

মাসুমার অনুসারীরা রিপোর্ট করলে টিকটিক থেকে তার ওই ভিডিও সরিয়ে ফেলা হয়। তবে ওই ঘটনা জীবনের বড় এক ক্ষতি করে গেছে বলে মনে করেন এ তরুণী।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসানের অনলাইন বুলিং-এর শিকার হয়েছেন শুধু নারীরা নয়, পুরুষরাও। ভুক্তভোগীরা এই ট্রলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রতিকারের চেষ্টা করেছেন। এমনই একজন কামরুল ইসলাম। ভিকটিম হাসানের সাথে যোগাযোগ করে তাকে এই শ্লীলতাহানি বন্ধ করার আহ্বান জানান। উল্টো কামরুলের পুরো পরিবারকে ট্রোল করতে শুরু করেন হাসান।

এই ভিডিওগুলো সরানোর পর কামরুল টিকটক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু তারা তাকে স্পষ্ট করে বলেছে যে এগুলো তাদের সম্প্রদায়ের নির্দেশিকা লঙ্ঘন করেনি। তাই ভিডিওগুলি সরানো হবে না।

কামরুল এরপর পুলিশের কাছেও অভিযোগ করেন। এতেও ট্রল না থামায় তিনি ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্যারিসে যুক্তরাজ্যের দূতাবাসে যোগাযোগ করেন।দূতাবাস কামরুলকে ফরাসি আইনজীবী ম্যাথিউ ক্রয়েজেটের সাথে যোগাযোগ করে। কামরুলের কাছ থেকে বিস্তারিত জানার পর এই আইনজীবী প্যারিসের পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসে অভিযোগ করেন। কিন্তু এ মামলার এখনো কোনো রায় হয়নি।

বিবিসি মামলার আপডেটের জন্য প্যারিসের কেন্দ্রীয় পুলিশ স্টেশন এবং আদালতের সাথে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

শেয়ারনিউজ, ০৪ এপ্রিল ২০২৪

পাঠকের মতামত:

প্রবাস এর সর্বশেষ খবর

প্রবাস - এর সব খবর



রে