ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

পূর্বাচলে অর্ধেকের বেশি প্লট বিক্রি করে দিয়েছেন প্রবাসীরা

২০২৪ এপ্রিল ২৮ ১১:৩২:৫৩
পূর্বাচলে অর্ধেকের বেশি প্লট বিক্রি করে দিয়েছেন প্রবাসীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ২৫ হাজার ১৬টি প্লটের মধ্যে প্রায় ৪ হাজার প্লট প্রবাসী কোটায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ওই ৪ হাজার প্লটের অর্ধেকের বেশি এরই মধ্যে বেচে দেওয়া হয়েছে অন্যের কাছে। প্রবাসী কোটায় বরাদ্দগ্রহীতাদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজন নকশা পাস করালেও এখনো বাড়ি বানাননি।

এর কারণ খুঁজতে গিয়ে রাজউকের কর্মকর্তারা জানতে পারেন, যাঁদের নামে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগই উন্নত দেশগুলোতে বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত আর অন্যরা বেসরকারি খাতে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি। ফলে তাঁরা পূর্বাচলে বাড়ি বানানোর তাগিদ অনুভব করছেন না। শুধু কাগজ হস্তান্তর করে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন।

এই বিষয়ে রাজউকের সদস্য (এস্টেট) মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রবাসী কোটার প্লট বিক্রি কী পরিমাণ হয়েছে তা সঠিক বলা কঠিন। তবে হস্তান্তর হচ্ছে অনেক। কোনো বরাদ্দগ্রহীতা যদি নিয়ম মেনে প্লট বিক্রি করতে চান, তখন আমরা আটকে রাখতে পারি না।’

রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ভূমি শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পূর্বাচলে গত কয়েক বছরে যত প্লট হস্তান্তর বা বিক্রি হয়েছে, তার বেশির ভাগই প্রবাসী কোটার।

পূর্বাচল প্রকল্পটি তিন দশকেও বাসোপযোগী না হওয়ার জন্য প্লট বরাদ্দের পদ্ধতি দায়ী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, প্লট বরাদ্দ দেওয়ার পদ্ধতিটি ত্রুটিপূর্ণ।

রাজউকের নগরবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, যেখানে দেশে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের চরম আবাসনসংকট রয়েছে, সেখানে এই গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রকল্পে প্লটগুলোর একটা বড় অংশ গেছে প্রবাসী কোটায়। এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক কাজ।

রাজউকের তথ্যমতে, পূর্বাচল প্রকল্পে আবাসিক প্লটের মধ্যে আছে ৩ কাঠা আয়তনের ১০ হাজার ১২টি, ৫ কাঠার ১০ হাজার ৩৬১টি, সাড়ে ৭ কাঠার ২ হাজার ৬১৮টি, ১০ কাঠার ২ হাজার ২৫টি। ২৫ হাজার ১৬টি প্লটের মধ্যে ২৪ হাজার ৮৪২টি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫৭টি প্লট বরাদ্দ প্রক্রিয়াধীন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এই প্রকল্পে মোট ৬ হাজার ২১৩ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য খরচ হয়েছে ৫৪২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে প্রতি বিঘা জমি অধিগ্রহণে খরচ হয়েছে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। কাঠাপ্রতি খরচ কমবেশি ১৪ হাজার টাকা। পরে রাজউক তিন কাঠা আয়তনের প্লটের জন্য কাঠাপ্রতি ২ লাখ টাকা, পাঁচ কাঠার জন্য ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা, সাড়ে সাত কাঠার জন্য ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ১০ কাঠা আয়তনের প্লটের জন্য ৩ লাখ টাকা করে নিয়ে বরাদ্দ দিয়েছে।

এরফলে তিন কাঠার প্লটের জন্য বরাদ্দগ্রহীতাকে রাজউকের কোষাগারে জমা দিতে হয়েছে ৬ লাখ টাকা; পাঁচ কাঠার প্লটের জন্য দিতে হয় ১১ লাখ ২৫ হাজার; সাড়ে সাত কাঠার প্লটের জন্য ১৮ লাখ ৭৫ হাজার এবং ১০ কাঠার প্লটের জন্য ৩০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে।

রাজউকের কর্মকর্তারা বলেন, সেই জমি যাঁরা প্রবাসী কোটায় পেয়েছেন, তাঁরা কাঠাপ্রতি ৭০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকায় বিক্রি করেছেন।রাজউক প্লটগুলো কম দামে বরাদ্দ দেওয়ায় মোট অর্থের ওপর কম পরিমাণ রাজস্ব পাচ্ছে। একই কারণে সরকারও নিবন্ধন কর কম পাচ্ছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘যাঁরা দেশেই থাকেন না তাঁদের প্লটে তো বাড়ি হচ্ছে না। তাঁদের বাড়ি করার তাগিদ নেই। তাঁরা এসব জমি ২৫-৩০ গুণ বেশি দামে বিক্রি করে দিয়ে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। আসলে জমি তো বিক্রি হচ্ছে না; বিক্রি হচ্ছে একটি কাগজমাত্র। এভাবে জমির মালিকদের নিঃস্ব করে ধনীকে আরও ধনী বানানোর কোনো যুক্তি দেখছি না।’

শেয়ারনিউজ, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

পাঠকের মতামত:

প্রবাস এর সর্বশেষ খবর

প্রবাস - এর সব খবর



রে