ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

ফাস্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ভয়াবহ লোকসান, শেয়ারহোল্ডাররা হতবাক

২০২৫ ডিসেম্বর ১৬ ২২:১৫:৫৫
ফাস্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ভয়াবহ লোকসান, শেয়ারহোল্ডাররা হতবাক

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ২০২৫ অর্থবছর-এর প্রথম নয় মাসে ৫৭৫.৮ বিলিয়ন টাকা বা ৫৭ হাজার ৫৮০ কোটি টাকার বিশাল লোকসান দেখিয়ে তার অংশীদারদের হতবাক করেছে। পূর্বে একই সময়ের জন্য যে লোকসানের পরিমাণ জানানো হয়েছিল, সংশোধিত এই সংখ্যাটি তার চেয়ে বহুগুণ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশের পর এই সংশোধন করা হয়, যা ব্যাংকটির আর্থিক স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। শিল্প সূত্র মতে, এটি দেশের ইতিহাসে কোনো একক ব্যাংকের ঘোষিত সবচেয়ে বড় লোকসান হতে পারে।

রোববার শেয়ারবাজারে দাখিল করা বিবৃতিতে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৫ সময়ের জন্য তাদের শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৪৭৬ কোটি ৫৭ লাখ। এটি গত বছরের একই সময়ের ঘোষিত লাভের তুলনায় সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। ব্যাংকটির সর্বশেষ আর্থিক ফলাফল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক বিবৃতিগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকসহ সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি ইসলামী ব্যাংকের নিট সম্পদ মূল্য নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছিল। এই ব্যাংকগুলো বর্তমানে একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।

এই প্রকাশনার মাধ্যমে এটিও জানা গেল যে, ২০২৫ অর্থবছর-এর প্রথমার্ধ পর্যন্ত বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকটির প্রকৃত আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে অন্ধকারে ছিলেন। এর আগে, ব্যাংকটি নয় মাসে ৩৭.৫০ বিলিয়ন টাকা বা ৩ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা লোকসানের কথা জানিয়েছিল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার পরই ব্যাংকটি তার প্রকৃত আর্থিক স্বাস্থ্য প্রকাশ করতে বাধ্য হয়।

ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২৫ নভেম্বর তারিখের এক চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সেই ডেফারেল সুবিধা বাতিল করে, যার মাধ্যমে ব্যাংকটি ঘাটতি প্রভিশন সমন্বয় না করেই আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করতে পারছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশ দেয় যে, ২০২৫ অর্থবছর-এর ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত তৃতীয় প্রান্তিক থেকে শুরু করে ব্যাংকটিকে আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করার সময় প্রভিশন সমন্বয় করতে হবে।

২০০৮ সালে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩.২৮ বিলিয়ন টাকা বা ৩২৮ কোটি টাকা লাভ দেখিয়েছিল। তবে সম্প্রতি প্রকাশিত এই বিশাল লোকসানের কারণে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য ভয়াবহভাবে নেতিবাচক ৪৬০ টাকা ১৮ পয়সায় নেমে গেছে।

ব্যাংকটির আর্থিক দুরবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশ ব্যাংক গত মাসে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বোর্ডকে অকার্যকর ঘোষণা করে এবং আরও চারটি সংকটাপন্ন ইসলামী ব্যাংকের সাথে পরিকল্পিত একীভূতকরণের আগে একজন প্রশাসক নিয়োগ করে। একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শেয়ারবাজারে এই ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেন স্থগিত করেছে।

এই একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় পাঁচটি ব্যাংক সম্পৃক্ত — ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক। ব্যাংকগুলোকে একত্রিত করে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ নামে একটি নতুন সত্তা তৈরি করা হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য অনাদায়ী ঋণ এবং অব্যবস্থাপনার অভিযোগের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৫ নভেম্বর এই ব্যাংকগুলোর বোর্ড ভেঙে দিয়ে একীভূতকরণ তদারকির জন্য প্রশাসক নিয়োগ করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর সম্প্রতি জানিয়েছেন, এই সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর মূলধনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিদেশে পাচার করা হয়েছে, যার ফলে বৃহত্তর ব্যাংকিং খাতকে রক্ষা করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে একীভূত করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প ছিল না।

মামুন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে