ঢাকা, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

বিনিয়োগকারীদের শুন্য ডিভিডেন্ড দিল তালিকাভুক্ত ৫৭ কোম্পানি

২০২৫ ডিসেম্বর ১৭ ০০:১৬:১৫
বিনিয়োগকারীদের শুন্য ডিভিডেন্ড দিল তালিকাভুক্ত ৫৭ কোম্পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অন্তত ৫৭টি কোম্পানি তাদের বিনিয়োগকারীদের জন্য শুন্য ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে, যা ব্যবসায় সংকট ও লোকসানের কারণে হয়েছে। ডিএসই'র তথ্য অনুযায়ী, এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে পাঁচটি ব্যাংক ও ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) এবং বাকিরা মূলত উৎপাদন খাতের। উল্লেখ্য, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রায় ২০০টি কোম্পানি তাদের বার্ষিক ফলাফল প্রকাশ করেছে।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সরকারি মালিকানাধীন ১২টি কোম্পানি ডিভিডেন্ড দেওয়ার সুপারিশ করতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে, বস্ত্র খাতের ৫৮ কোম্পানির মধ্যে ১৩টি তাদের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেনি। ইঞ্জিনিয়ারিং, ওষুধ, বিদ্যুৎ, খাদ্য, তথ্যপ্রযুক্তি ও কাগজ খাতের কিছু কোম্পানি শূন্য ডিভিডেন্ডের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

অন্যদিকে, বেশ কিছু কোম্পানি মুনাফা না থাকায় বা নেতিবাচক সংরক্ষিত আয় থাকার কারণে ডিভিডেন্ড দিতে অক্ষম হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মহামারি পরবর্তী দুর্বল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও উৎপাদন খরচের বৃদ্ধি এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।

সরকারি কোম্পানিগুলো এই বিষয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে। বিদ্যুৎ, এনবিএফআই, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং খাদ্য খাতের বেশ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান এখন ডিভিডেন্ড দেওয়া থেকে বিরত থাকছে। তিন বছর আগে অধিকাংশ সরকারি কোম্পানি লাভজনক ছিল এবং শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ডিভিডেন্ড দিত, কিন্তু এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।

ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) টানা দুই বছর ডিভিডেন্ড না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা ২০০৬ সালে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর প্রথমবার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ডেসকো ১২৫ কোটি টাকা লোকসান করে, এবং বর্তমানে এর মোট লোকসান ১,১৭২ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

অন্যদিকে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ডিভিডেন্ড থেকে বিরত রয়েছে। দুর্বল বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত ও বাজারের মন্দার কারণে, তারা ২০২৫ অর্থবছরে ১,২১৪ কোটি টাকার লোকসান করেছে। ২০২৪ অর্থবছরে তারা ২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল, যা আগে উচ্চ আয়ের সময়ের থেকে অনেক কম।

পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য কোনো ডিভিডেন্ড দেবে না বলে জানিয়েছে, যা টানা দ্বিতীয় বছর। এই কোম্পানিটি আগে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য আকর্ষণীয় ডিভিডেন্ড দিত।

অন্য কিছু সরকারি কোম্পানি হলো— বাংলাদেশ সার্ভিসেস, ন্যাশনাল টি, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, শ্যামপুর সুগার মিলস, উসমানিয়া গ্লাস, জিল বাংলা সুগার, অ্যাটলাস বাংলাদেশ, ইস্টার্ন কেবলস এবং আজিজ পাইপস, যারা এই বছর ডিভিডেন্ড দিচ্ছে না।

বস্ত্র খাতের ১৩টি কোম্পানি অর্থবছর ২০২৫-এ তাদের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ডিভিডেন্ডের ঘোষণা থেকে বিরত রয়েছে। এই খাতের কোম্পানিগুলো উল্লেখযোগ্য লোকসানের মুখে পড়ে এবং লাভের মুখ দেখেনি।

ম্যাকসন্স স্পিনিং মিলস সর্বোচ্চ ২২৪ কোটি টাকার লোকসান করেছে, যা গত তিন বছরে মোট ৪০৬ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। লোকসানের কারণে তারা ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি, আর তাদের সর্বশেষ ডিভিডেন্ড ছিল ২০২২ সালে ১০ শতাংশ ক্যাশ।

কাগজ শিল্পের প্রধান কোম্পানি বসুন্ধরা পেপার মিলসও কাঁচামালের সংকট ও ঋণের বোঝায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে ব্যর্থ হয়েছে। একইসঙ্গে, লুব-রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেড ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬৬ কোটি টাকার রেকর্ড লোকসান দেখিয়ে প্রথমবারের মতো ডিভিডেন্ডের সুপারিশ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

এই পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতির নানা চ্যালেঞ্জের কারণে বড় ধরনের আঘাত হেনেছে, যেখানে কর্মসূচির সংকট, উৎপাদন ব্যাহত ও বিনিয়োগ কমে যাওয়ার ফলে কোম্পানিগুলোর আর্থিক পরিস্থিতি মারাত্মক খারাপ হয়ে পড়েছে।

সালাউদ্দিন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে