ঢাকা, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

ভারতকে ৯০০ একর জমি বিনামূল্যে দেন হাসিনা নেপথ্যে যা লুকানো

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৭ ১৩:৩৬:২৬
ভারতকে ৯০০ একর জমি বিনামূল্যে দেন হাসিনা নেপথ্যে যা লুকানো

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে ভারতীয় আদানি গ্রুপকে জমি বরাদ্দের বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রথমে ১,০৫৫ একর জমি চাওয়া হলেও পরবর্তীতে বাংলাদেশ ৯০০ একর জমি দিতে সম্মত হয়। এই জমি বরাদ্দের প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস অথরিটি (বেজা) এবং আদানি গ্রুপের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ) স্থাপন করা।

চুক্তি ও শর্তাবলি

এই চুক্তির আওতায় ২০২২ সালে বেজা ও আদানি গ্রুপ একটি যৌথ উদ্যোগে কাজ করার জন্য আরও একটি চুক্তি সই করে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই প্রকল্প ভারতের Line of Credit (LoC) এর অধীনে বাস্তবায়ন করা হবে, যেখানে শর্ত রয়েছে যে ৬৫% যন্ত্রপাতি ভারত থেকেই আমদানি করতে হবে।

২০১৯ সালে এই প্রকল্পের জন্য ৮৪৫ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এবং ভারত তার LoC-এর অধীনে ১১৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রদান করে।

বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণহীনতা ও ভারতীয় আধিপত্য

বেজার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই প্রকল্পে বাংলাদেশের কোনো মূল্য নির্ধারিত জমি নেই, এবং জমিতে গড়ে ওঠা স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণরূপে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। প্রকল্পের এলাকায় বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান বা শ্রমিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ, এমনকি প্রকল্প এলাকায় কী ধরণের কার্যক্রম চলবে, সে সম্পর্কেও বাংলাদেশের কোনো সিদ্ধান্ত বা প্রশ্ন করার এখতিয়ার নেই।

স্থানীয়দের ক্ষোভ ও বঞ্চনা

মীরসরাইয়ের স্থানীয় বাসিন্দারা ও ঠিকাদাররা জানিয়েছেন, এতবড় প্রকল্প থেকেও স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। এমনকি নির্মাণ সামগ্রী (ইট, বালু, পাথর) পর্যন্ত ভারত থেকে আনা হবে বলে জানা গেছে। স্থানীয়রা মনে করছেন, এটি বাংলাদেশের মাটিতে একটি “ভারতীয় এলাকা” তৈরি করার মতো বিষয়, যা দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

আরও ৭০০ একর জমি অধিগ্রহণ ও কৃষকদের বিক্ষোভ

২০১৮ সালে বেজা আরও ৭০০ একর জমি অধিগ্রহণ করে, যেটি ছিল পুরোপুরি কৃষিজমি। এই জমির অধিগ্রহণে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভ দমাতে আওয়ামী লীগের নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও বেজার কর্মকর্তারা বৈঠক করেন। বৈঠকে বলা হয়, শেখ হাসিনা ভারতকে আরও ৭০০ একর জমি দেওয়ার মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে এই অতিরিক্ত জমির বিষয়ে কোনো লিখিত চুক্তি হয়নি, যা পরবর্তীতে বেজা কর্মকর্তারা স্বীকার করেন।

শেখ হাসিনা পতনের পর প্রকল্প কার্যত বন্ধ

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর আদানির এই প্রকল্প কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে এবং ভারতীয়রা এলাকা ত্যাগ করেছে। এখন প্রকল্প এলাকা উন্মুক্ত, স্থানীয়রা সেখানে প্রবেশ করতে পারছেন এবং বেজার কর্মকর্তারা এলাকাবাসীকে জানাচ্ছেন যে, ৭০০ একরের বিষয়ে কোনো বৈধ চুক্তি হয়নি এবং তা এখন মুক্ত করে দেওয়া হবে। তবে ৯০০ একর জমির বিষয়ে চুক্তি থাকায় সেটি বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ ও জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, মীরসরাইয়ের এই প্রকল্প বাংলাদেশের ভেতরে একটি “ছোট ভারত” তৈরির শামিল। এই জমি বঙ্গোপসাগর ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাঝে অবস্থান করায় কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সতর্ক করে বলেন, “ভারতের যেমন ‘চিকেন নেক’ রয়েছে, বাংলাদেশের জন্যও মীরসরাই এমন একটি জায়গা। একে বিচ্ছিন্ন করতে পারলেই আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে।”

মীরসরাইয়ে আদানি গ্রুপের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্প নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক, ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণহীনতা, স্থানীয়দের বঞ্চনা, ভূমি বিনা মূল্যে বরাদ্দ এবং প্রকল্পের নিরাপত্তা ঝুঁকি ইত্যাদি বিষয় প্রকল্পটির স্বচ্ছতা ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সরকারি দিক থেকে এ বিষয়ে এখনও কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা বা নীতিগত অবস্থান জানানো হয়নি।

কেএইচ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে