ঢাকা, বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

তৌহিদ আফ্রিদির চিৎকার-চেঁচামেচিতে অতিষ্ঠ তদন্ত কর্মকর্তারা

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৩ ১৯:২০:৫৫
তৌহিদ আফ্রিদির চিৎকার-চেঁচামেচিতে অতিষ্ঠ তদন্ত কর্মকর্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক : কোটিরও বেশি অনুগামীর প্রিয় কন্টেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদির বিরুদ্ধে ভয়াবহ অপরাধ চক্র পরিচালনার অভিযোগ এনেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বিনোদনের আড়ালে বহুদিন ধরে তিনি একটি সংগঠিত অপরাধ সিন্ডিকেট চালাতেন বলে দাবি করেছে সংস্থাটি। গত ২৪ আগস্ট বরিশাল থেকে সিআইডির একটি বিশেষ দল তাঁকে গ্রেফতার করে।

তাঁর এই "দ্বৈত পরিচয়"—একদিকে জনতার বিনোদনদাতা, অন্যদিকে অপরাধের নেপথ্য কুশীলব—এখন দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে, তৌহিদ আফ্রিদি ছিলেন কথিত ‘গিভ অ্যান্ড টেক সিন্ডিকেট’-এর মূলহোতা। এই চক্রের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই ভুক্তভোগীদের প্রাণনাশ, গুম বা মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হতো।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, আফ্রিদি ছিলেন অস্বাভাবিকভাবে প্রভাবশালী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক মহলে তাঁর বিস্তৃত সংযোগ ছিল। তিনি সেই প্রভাব ব্যবহার করে অন্যান্য কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের হুমকি দিতেন, অর্থ আদায় করতেন এবং বিরোধীদের দমন করতেন।

সিআইডি হেফাজতে থাকাকালে তৌহিদ আফ্রিদির আচরণও ছিল তীব্র সমালোচনার বিষয়। তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, তিনি চিৎকার, চেঁচামেচি করে তদন্ত বাধাগ্রস্ত করেন। এমনকি পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা সদস্য নিয়োগ করতে হয়।

একাধিক সূত্র জানায়, আফ্রিদি মাঝে মাঝেই আচরণগত দিক থেকে ভারসাম্যহীনতা দেখান এবং সম্ভবত অতীত অপরাধচিন্তাই তাঁকে মানসিকভাবে আঘাত করে যাচ্ছে।

তৌহিদ আফ্রিদি শুধু ব্ল্যাকমেইল বা প্রতারণায় সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তিনি সরাসরি একটি হত্যা মামলার ১১ নম্বর আসামি।

২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের হওয়া মামলায় অভিযোগ করা হয় যে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আসাদুল হক বাবু নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় আফ্রিদি ছাড়াও আরও বহুজনকে আসামি করা হয়।

এই একই হত্যা মামলায় তৌহিদ আফ্রিদির বাবা, মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথী, এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আরও ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। নাসির উদ্দিনকে ১৭ আগস্ট ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে এবং বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

আফ্রিদির গ্রেফতারের পর মুখ খুলতে শুরু করেছেন অন্যান্য কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা।

কন্টেন্ট ক্রিয়েটর সায়েম ফেসবুক লাইভে বলেন, আড়াই বছর আগে আফ্রিদির সমালোচনা করায় তাঁকে ডিবি অফিসে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করা হয় এবং লিখিতভাবে মুচলেকা দিতে বাধ্য করা হয় যাতে তিনি আফ্রিদির নাম ভবিষ্যতে উচ্চারণ না করেন।

তানভীর রাহী ও স্বপন আহমেদ নামের আরও দুই জনপ্রিয় ক্রিয়েটরও আফ্রিদির হুমকি ও ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন।

আফ্রিদির মোবাইল ফোন, ডেস্কটপ ও অন্যান্য ডিভাইস ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সিআইডির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ধারণা, এসব ডিভাইসে তাঁর অপরাধচক্র, আর্থিক লেনদেন এবং ব্ল্যাকমেইলের প্রমাণ মিলতে পারে।

এক কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, “তৌহিদ আফ্রিদির অপরাধ শুধু অনলাইন জগতে সীমাবদ্ধ নয়। তাঁর নেটওয়ার্ক অনেক গভীর ও শক্তিশালী মহলে বিস্তৃত।”

কেএইচ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে