ঢাকা, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
Sharenews24

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র রপ্তানি প্রবাহে বড় পরিবর্তন আসছে

২০২৫ মে ১৮ ১৮:০৫:৫৯
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র রপ্তানি প্রবাহে বড় পরিবর্তন আসছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের জন্য আলোচনায় রাজী হয়েছে বাংলাদেশ—এটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চুক্তি কার্যকর হলে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য রপ্তানি পণ্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার মিলবে, যা বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবাহে নতুন গতি সঞ্চার করতে পারে।

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এফটিএ চুক্তি নিয়ে জানান, "এটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত বড় খবর। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে চুক্তির খসড়া চেয়েছে, এবং আমরা দ্রুত এই প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছি।"

এফটিএ স্বাক্ষরের প্রস্তাবটি আসে গতমাসে, যখন বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এফটিএ স্বাক্ষরের প্রস্তাব দেওয়া হয় এবং ইউএসটিআর চুক্তির খসড়া চেয়েছে। বাণিজ্য সচিব জানিয়েছেন, বাংলাদেশ আগে কয়েকবার যুক্তরাষ্ট্রকে এফটিএ প্রস্তাব করলেও তখন তারা আগ্রহ দেখায়নি, কিন্তু এবার তা রাজী হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য হচ্ছে তৈরি পোশাক, যার মাধ্যমে দেশে মোট রপ্তানির ১৭.০৯ শতাংশ এবং পোশাক রপ্তানির ১৮ শতাংশ আয় হয়। দেশের পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এফটিএ স্বাক্ষর হলে, বাংলাদেশের পোশাক খাতের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা বাড়বে। বর্তমানে, ভিয়েতনাম এবং ভারত ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এফটিএ চুক্তি প্রস্তাব করেছে, ফলে বাংলাদেশ এই ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছে।

বর্তমানে, বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশেরও বেশি শুল্ক দিতে হচ্ছে, যেখানে ভিয়েতনাম পাচ্ছে মাত্র ৭ শতাংশ শুল্ক। এফটিএ কার্যকর হলে, শুল্কহীন সুবিধা পেয়ে বাংলাদেশের পোশাক খাতের রপ্তানি প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।

২০১৩ সালের আগে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৯৭ শতাংশ পণ্য শুল্কমুক্তভাবে রপ্তানি করতে পারত। কিন্তু বর্তমানে, তৈরি পোশাকের জন্য ১৫.৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছিল, যা তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এফটিএ স্বাক্ষর করার বিষয়টি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, রাজনৈতিকভাবেও তা প্রভাব ফেলবে। ড. মোস্তফা আবিদ খান, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য, বলেছেন, "এফটিএ স্বাক্ষরিত হলে এটি বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের লাভজনক সুযোগ হবে। তবে, এর জন্য বাংলাদেশকে মেধাস্বত্ব, শ্রম মানদণ্ড, পরিবেশগত বিধিমালা ইত্যাদি বিষয়ে বেশ কিছু সংশোধনী করতে হবে।"

বর্তমানে, বাংলাদেশ বেশ কিছু দেশের সাথে এফটিএ চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে, তবে চীন, ভারত এবং অন্যান্য কিছু দেশের সাথে এই আলোচনাগুলো এখনও ফলপ্রসূ হয়নি। তবে, সরকারের কাছে এফটিএ চুক্তির ব্যাপারে স্বার্থপর নীতির মাধ্যমে শক্তিশালী এবং বৈষম্যমুক্ত বাণিজ্য সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য রয়েছে।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে