ঢাকা, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

চিকিৎসা খাতে প্রতিবছর ৫ বিলিয়ন ডলার বিদেশে যাচ্ছে

২০২৫ ডিসেম্বর ১৩ ১৮:৫০:৪৯
চিকিৎসা খাতে প্রতিবছর ৫ বিলিয়ন ডলার বিদেশে যাচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতিবছর প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার চিকিৎসা ব্যয়েবিদেশেচলে যাচ্ছে। দেশের স্বাস্থ্যসেবায় আস্থা কম থাকা, সঠিক রোগ নির্ণয় না হওয়া এবং সেবা ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে এই অর্থ বিদেশে খরচ হচ্ছে। এছাড়া, স্বাস্থ্যখাতে জিডিপির মাত্র ১ শতাংশেরও কম বরাদ্দ থাকা একটি বড় কারণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি ব্যয় বাড়ানোর পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার জরুরি।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত ‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে আস্থা বৃদ্ধি; মান নিয়ন্ত্রণে কৌশলগত কাঠামো নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক সেমিনারে এই বিষয়গুলো তুলে ধরেন বক্তারা। রাজধানীর মতিঝিলে চেম্বারের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি, জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনাইটেড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ঢাকা চেম্বারের সাবেক ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী।

প্রবন্ধে বলা হয়, দেশের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের পথে কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। সরকারি স্বাস্থ্য ব্যয়ে বরাদ্দ জিডিপির ১ শতাংশেরও কম। রোগীদের ৭৩ শতাংশ চিকিৎসা ব্যয় নিজে বহন করতে হয় এবং মাত্র ২.৫ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্য বিমার আওতায় রয়েছেন। দেশের হাসপাতালের প্রায় ৮০ শতাংশে উন্নত ডায়াগনস্টিক যন্ত্রপাতি নেই। বেসরকারি খাত ৬০ শতাংশ সেবা প্রদান করলেও, উচ্চমূল্য ও মানের বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়।

বিদেশে চিকিৎসার কারণে প্রতিবছর প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে। রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভারত গমন করেন। ভারতের চিকিৎসা ভিসার প্রায় ৫২ শতাংশই বাংলাদেশিরা ব্যবহার করেন। ২০২৪ সালে প্রায় ৪ লাখ ৮২ হাজার বাংলাদেশি ভারতে চিকিৎসা নিয়েছেন। ভারতের পরে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় চিকিৎসা নেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। দেশের চিকিৎসায় আস্থাহীনতা, রোগ নির্ণয় ও খরচ সম্পর্কে সন্দেহ, নকল ওষুধ ও নিম্নমানের সামগ্রীর আশঙ্কা এসবের মূল কারণ।

প্রবন্ধে আরও উল্লেখ করা হয়, দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার ঘাটতি রয়েছে। উন্নত চিকিৎসা মাত্র ১৫টি কেন্দ্রে পাওয়া যায়, তাই রোগীদের অনেকেই বিদেশে যেতে বাধ্য হন। চিকিৎসার খরচ পূর্বনির্ধারিত নয়, জটিল রোগের পরবর্তী সেবা সীমিত। স্বাস্থ্য তথ্য ও প্রোগ্রামের তদারকি ও ক্রয় ব্যবস্থায় দুর্বলতা বিরাজমান। রোগী ও পরিবারের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবায় আস্থা কম। এসব কারণে দেশীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাস কমে যাচ্ছে।

দেশে ৩৬টি স্পেশালাইজড হাসপাতালের মধ্যে ঢাকায় ১৯টি এবং অন্যান্য বিভাগে ১৭টি রয়েছে। ঢাকা বিভাগে হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা ১,৮১০টি, আর বাকি ৭টি বিভাগে ৩,৬৫১টি। সরকারি স্বাস্থ্য ব্যয় দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম, মাথাপিছু মাত্র ১,০৭০ টাকা। দেশের ৪৯ শতাংশ মানুষ এখনও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না।

বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৫ সালে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের বাজার ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে। ২০৩০–২০৩৩ সালের মধ্যে এই খাতের আকার প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে, যা বর্তমানে প্রায় দ্বিগুণ। একই সময়ে মেডিকেল ডিভাইসের বাজারও দ্রুত বৃদ্ধি পাবে; ২০২৫ সালে এটি ৮২০ মিলিয়ন ডলার ছাড়াবে, যা ২০২০ সালে ছিল ৪৪২ মিলিয়ন ডলার। বিশেষ করে আমদানি বৃদ্ধির কারণে বাজারে প্রবৃদ্ধি হবে।

সেমিনারে বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, দেশের স্বাস্থ্যখাতের দ্রুত উন্নতি অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ আরও বাড়ানো অপরিহার্য।

এমজে/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে