ঢাকা, সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

আর্থিক ঝুঁকিতে শেয়ারবাজারের তিন তেল বিপনন কোম্পানি

২০২৫ ডিসেম্বর ০৮ ০৭:১১:২৭
আর্থিক ঝুঁকিতে শেয়ারবাজারের তিন তেল বিপনন কোম্পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্রায়ত্ত তিন তেল বিপনন কোম্পানি—যমুনা অয়েল, পদ্মা অয়েল ও মেঘনা পেট্রোলিয়াম—তাদের আর্থিক অবস্থান নিয়ে বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়েছে। পাঁচটি সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকে রাখা মোট ২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর) আটকে যাওয়ায় কোম্পানিগুলোর নিরীক্ষকরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের অডিট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিভিন্ন এফডিআরের মেয়াদ শেষ হলেও ব্যাংকগুলোর তীব্র তারল্য সংকটের কারণে অর্থ ছাড় করা সম্ভব হচ্ছে না।

এফডিআরগুলো আটকে আছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংকে—যেগুলো সম্প্রতি একীভূত হয়ে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ নামে কার্যক্রম শুরু করেছে। সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে রয়েছে যমুনা অয়েল, যার আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ৭২০ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ৪৩২ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংকে ২৮৯ কোটি এবং অন্যান্য ব্যাংকে আরও কিছু অঙ্ক আটকে আছে। মেঘনা পেট্রোলিয়ামের আটকে থাকা অর্থ ৫৪০ কোটি টাকা এবং পদ্মা অয়েলের ৩৩৯ কোটি টাকা।

১০ থেকে ১২.৫ শতাংশ সুদে এসব এফডিআর এতদিন কোম্পানিগুলোর লাভজনক অ-পরিচালন আয়ের প্রধান উৎস ছিল। এখন তা বড় ধরনের আর্থিক ঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন শীর্ষ অডিট ফার্মের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো গুরুতর তারল্য সংকটের কারণে একীভূত হয়েছে, তবুও তেল কোম্পানিগুলোর এফডিআরের মূল টাকা এখনো ফেরত দেওয়ার কোনো বাস্তব অগ্রগতি নেই। অডিটররা সতর্ক করে বলেছেন, এই বিনিয়োগ এখন উচ্চ ঝুঁকির তালিকায় পড়ে এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিবেদন মান অনুযায়ী ক্রেডিট লস বরাদ্দ না রাখলে কোম্পানিগুলোর সম্পদ অতিমূল্যায়িত হিসেবে প্রদর্শিত হতে পারে।

যমুনা, মেঘনা ও পদ্মা অয়েলের আটকে থাকা অর্থের তালিকায় দেখা যায়—যমুনার ১ হাজার ৪৬০ কোটি, মেঘনার ৫৪০ কোটি এবং পদ্মা অয়েলের ৩৩৯ কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে উদ্ধার-অনিশ্চয়তায় রয়েছে। কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যেহেতু সংশ্লিষ্ট সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলো এখন সরকারের অধীনে একীভূত হয়েছে, তাই তহবিল উদ্ধারে সরকারের সিদ্ধান্তই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা আরও বলেন, পূর্ববর্তী ব্যবস্থাপনা রাজনৈতিক প্রভাব ও লবিংয়ের কারণে এসব ব্যাংকে বিপুল অঙ্কের এফডিআর রেখেছিল, যার দায় বর্তমান ব্যবস্থাপনাকে বহন করতে হচ্ছে।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানিগুলো মূল ব্যবসার পরিবর্তে সুদের আয়ে বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যা দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করেছে। ঝুঁকি মূল্যায়ন না করেই বিপুল পরিমাণ আমানত উচ্চঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকে রাখার কারণে ভবিষ্যতে আয় ও ডিভিডেন্ড প্রদানের সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এদিকে, একীভূত হয়ে গঠিত সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক ৩৫ হাজার কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে সরকার এবং অবশিষ্ট ১৫ হাজার কোটি আসছে ডিপোজিটকে শেয়ারে রূপান্তরের মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ডিপোজিটরদের অর্থ সুরক্ষিত থাকবে এবং ডিপোজিট প্রটেকশন অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী প্রথম ধাপে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত নিরাপদ। তবে তেল কোম্পানিগুলোর আটকে থাকা বিপুল অঙ্কের অর্থ কখন পাওয়া যাবে—তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

মামুন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে