ঢাকা, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫
Sharenews24

যে আমল শিখিয়ে শয়তান বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছিল

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ১০ ১৮:৪৪:৫৮
যে আমল শিখিয়ে শয়তান বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক : পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত, যেটি আয়াতুল কুরসি নামে সুপরিচিত, অত্যন্ত সম্মানিত এবং মর্যাদাপূর্ণ একটি আয়াত। এই আয়াতটি পাঠ করার মাধ্যমে দুনিয়া এবং আখেরাতের সকল অকল্যাণ, বিপদ, ও সমস্যা থেকে মুক্তি লাভের বিষয়ে অনেক হাদিসে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

মৃত্যুর পর জান্নাতের নিশ্চয়তা: প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর যদি আয়াতুল কুরসি পাঠ করা হয়, তাহলে মৃত্যুর পর জান্নাতে প্রবেশের নিশ্চয়তার কথা বিশেষভাবে বর্ণিত হয়েছে।

আবু উমামা আল বাহিলি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিটি ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যুর ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না।’ (নাসায়ি, হাদিস নং : ৯৯২৮)

কিয়ামতের দিন, মানুষ তার নিজকর্মের ফল ভোগ করবে। অনেক মুমিন সরাসরি জান্নাতে প্রবেশ করবে, আবার কিছু মুমিন জাহান্নামের শাস্তি ভোগের পর জান্নাতে যাবে। তবে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে অনেক পাপী মুমিনও সরাসরি জান্নাতে প্রবেশ করবেন।

কোরআনের সবচেয়ে সম্মানিত আয়াত: উবাই বিন কাব (রা.) বর্ণনা করেছেন, একদিন রাসুল (সা.) আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘হে আবুল মুনজির, তুমি কি জানো, কোরআনের কোন আয়াত সবচেয়ে সম্মানিত?’ আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই তা বেশি জানেন। রাসুল (সা.) আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আবুল মুনজির, তুমি কি জানো, কোরআনের কোন আয়াত সবচেয়ে সম্মানিত?’ আমি বললাম, ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহ হুওয়াল ...’ অর্থাৎ আয়াতুল কুরসি। রাসুল (সা.) আমার বুকে হাত দিয়ে বললেন, ‘হে আবুল মুনজির! তোমাকে উত্তম জ্ঞানের জন্য শুভেচ্ছা।’

আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, ‘সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, এ সুরার একটি জিহ্বা ও দুটো ঠোঁট রয়েছে, যা দিয়ে সে আরশের অধিপতির পবিত্রতা বর্ণনা করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ৮১০)

শয়তানের সঙ্গে সাহাবির আলাপ: অনেক সময় শয়তান মানুষের রূপ ধারণ করে মানুষের কাছে আসে, এবং কোরআন ও হাদিসে মানুষের চিরশত্রু শয়তানের এমন বর্ণনা এসেছে। সহিহ বুখারি গ্রন্থে একটি প্রশিদ্ধ ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, যেখানে আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) আমাকে জাকাতের সম্পদ সংরক্ষণের দায়িত্ব প্রদান করেন। একদিন রাতে আমি খাবার নিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন আমি তাকে ধরে ফেলি এবং তাকে বলি, "আমি তোমাকে রাসুল (সা.)-এর কাছে নিয়ে যাব।" সে বলল, "আমি অভাবী, আমার খুব অভাব-অনটন, দয়া করে আমাকে ছেড়ে দিন।" আমি তাকে ছেড়ে দিই।

সকালবেলা রাসুল (সা.) আমাকে জিজ্ঞেস করেন, "হে আবু হুরায়রা, গত রাতে তোমার বন্দী কী করেছে?" আমি বললাম, "হে আল্লাহর রাসুল, সে তার অভাব-অনটনের কথা জানিয়ে আমাকে ছেড়ে দিয়েছে, তাই আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি।"

রাসুল (সা.) বললেন, "সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে, সে আবার আসবে।" রাসুল (সা.)-এর কথা মেনে আমি তার ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম এবং সে সত্যিই আবার ফিরে আসে। এবার আমি তাকে ধরে বলি, "আমি তোমাকে রাসুল (সা.)-এর কাছে নিয়ে যাব।" সে আবারও অভাবের কথা বলে আমাকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করে।’

যে আমল শিখিয়ে শয়তান মুক্তি পেয়েছিল: ‘তৃতীয় রাতে, সে আবার এসে খাবার নিয়ে যাচ্ছিল। এবার তাকে ধরে বললাম, "এবার আমি তোমাকে রাসুল (সা.)-এর কাছে নিয়ে যাব।" সে বলল, "আমাকে ছেড়ে দিন, আমি আপনাকে এমন কিছু কথা শেখাব যা পড়লে আল্লাহ আপনার উপকার করবেন।" আমি বললাম, "তাহলে তা কী?" সে বলল, "যখন আপনি বিছানায় যাবেন, আয়াতুল কুরসি পাঠ করবেন। এতে আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার জন্য একজন প্রহরী থাকবে, এবং সকাল পর্যন্ত কোনো শয়তান আপনার কাছে আসবে না।"

তবে আমি তার কথা শুনে তাকে ছেড়ে দিয়েছিলাম। সকালবেলা রাসুল (সা.) বললেন, "হে আবু হুরায়রা, গত রাতে তোমার বন্দী কী করেছে?" আমি বললাম, "সে আমাকে বলেছিল, যখন আমি বিছানায় যাব, আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে আল্লাহ আমার জন্য একজন প্রহরী পাঠাবেন এবং কোনো শয়তান আমার কাছে আসবে না।" রাসুল (সা.) বললেন, "সে সত্য বলেছে, যদিও সে ছিল চরম মিথ্যুক। হে আবু হুরায়রা, তুমি জানো, গত তিন রাতে কার সঙ্গে তুমি আলাপ করেছিলে?" আমি বললাম, "না।" রাসুল (সা.) বললেন, "সে ছিল শয়তান।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ২৩১১)

কেএইচ

পাঠকের মতামত:

লাইফ স্টাইল এর সর্বশেষ খবর

লাইফ স্টাইল - এর সব খবর



রে