ঢাকা, রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

আয়না ঘরের লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন চিফ প্রসিকিউটর

২০২৫ ডিসেম্বর ০৭ ১৭:০৭:৫৬
আয়না ঘরের লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন চিফ প্রসিকিউটর

নিজস্ব প্রতিবেদক: ডিজিএফআইয়ের আয়নাঘর বা জেআইসি সেলে আটকদের জন্য অপেক্ষা করত দমবন্ধ অন্ধকার, প্রচণ্ড শব্দ ও অমানবিক রুটিন। আলো–বাতাসহীন ছোট ছোট খোপে বন্দিদের এমন পরিবেশে রাখা হতো যে, বাইরের কোনো শব্দই তাদের কানে পৌঁছাত না—আজানের মতো পবিত্র ধ্বনিও নয়। ভুক্তভোগীদের এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার শুনানিতে।

রোববার (৭ ডিসেম্বর) শেখ হাসিনাসহ সাবেক ও বর্তমান ১৩ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয় ট্রাইব্যুনাল-১ এ। চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বন্দিদের দেওয়া বিবরণ তুলে ধরেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, ডিজিএফআই সদর দপ্তরের দক্ষিণ পাশে মেস-বি এর মাঝামাঝি একটি দোতলা ভবনের ছোট খোপগুলোই ছিল সেই বন্দিশালা। ভেতরটি ছিল রডের গ্রিল, ঢাকনা, সিসি ক্যামেরা ও ছোট ভেন্টিলেটরযুক্ত। কোনো আলো ঢোকার সুযোগ ছিল না। আজান বা বাইরের শব্দ বন্ধ রাখতে সাউন্ড বক্সে গান বাজানো হতো, কিংবা চালানো হতো প্রচণ্ড শব্দের এগজস্ট ফ্যান।

ফ্যানের তীব্র শব্দে অনেক বন্দির কান বধির হয়ে যায় বলে জানান তাজুল ইসলাম। তবু কখনো কোনো বন্দি এগজস্ট চালুর আগ মুহূর্তে মসজিদের আজান, জুমার খুতবা কিংবা জানাজার ঘোষণা শুনে ফেলতেন। এসব শব্দ থেকেই অনেকে ধারণা করেছিলেন তারা ডিজিএফআইয়ের একটি নির্দিষ্ট স্থানে আটক আছেন।

শেখ হাসিনার পতনের পর ২৬ জন ভুক্তভোগী তদন্ত দলের সঙ্গে গিয়ে নিজেরাই সেসব সেল শনাক্ত করেন। দেয়ালের কোণায় লেখা নাম ও অন্যান্য আলামত মিলিয়ে তারা গুমের সময়কার অবস্থানগুলো নিশ্চিত করেন। এসব বন্দিশালা ভিডিও করে আদালতে উপস্থাপনের প্রস্তুতির কথাও জানায় প্রসিকিউশন।

চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, জেআইসি সেলে ২০–২৫ জন বন্দিকে একটি নোংরা গামছা দিয়ে মুখ-মাথা মুছতে হতো। গোসলের সময়ও একই গামছা ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক ছিল। এতে প্রায় সবাই অ্যালার্জি, চুলকানি ও চোখ ওঠায় আক্রান্ত হন। এমনকি একটি মাত্র টুথব্রাশ ২৫ জনকে ব্যবহার করতে বলা হতো। এভাবেই দীর্ঘ ১৫ বছর বিরোধী মতাদর্শের মানুষদের সেখানে আটক রাখা হয়।

মামলায় ১৩ আসামির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) প্রতিরক্ষা ও স্টেট ডিফেন্সের শুনানি হবে।

এর আগে কড়াকড়ি নিরাপত্তায় সেনানিবাসের বিশেষ কারাগার থেকে তিন সেনা কর্মকর্তা—মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী—কে আদালতে হাজির করা হয়।

পলাতক আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—শেখ হাসিনার সাবেক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক ডিজি লে. জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) সাইফুল আবেদিন, লে. জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লে. জেনারেল তাবরেজ শামস চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক, মেজর জেনারেল তৌহিদুল ইসলাম, মেজর জেনারেল কবির আহাম্মদ ও লে. কর্নেল (অব.) মখসুরুল হক।

এমজে/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে