ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

খেলাপি কমাতে নতুন পথ খুলে দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

২০২৫ ডিসেম্বর ০৪ ১৮:২৬:৩৯
খেলাপি কমাতে নতুন পথ খুলে দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের ব্যাংকিং খাতে বহু বছর ধরে জমে থাকা দীর্ঘমেয়াদি খেলাপি ঋণের চাপ কমাতে প্রথমবারের মতো আংশিক ঋণ অবলোপন (Partial Write-Off) করার সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বিভিন্ন ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ ঋণ বছরের পর বছর ধরে অনাদায়ী অবস্থায় পড়ে থাকায় স্থিতিপত্রে (Balance Sheet) প্রকৃত আর্থিক অবস্থার বিকৃতি ঘটছিল। ফলে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা দুর্বল হয়ে পড়ছিল। এই বাস্তবতা বিবেচনায় এনে আংশিক অবলোপনের মতো নতুন কৌশল চালু করা হয়েছে, যা ব্যাংকগুলোকে ঝুঁকি কার্যকরভাবে চিহ্নিত ও নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) এক নির্দেশনার মাধ্যমে জানায়, যেসব মন্দ (Substandard) ও ক্ষতিগ্রস্ত (Bad/Loss) ঋণের সম্পূর্ণটা আর আদায়যোগ্য নয় বলে বিবেচিত, সেসব ঋণের জামানতবিহীন ও আদায়-অযোগ্য অংশ আংশিকভাবে অবলোপন করা যাবে। এর ফলে ব্যাংকগুলো স্থিতিপত্রে থাকা বড় অঙ্কের অনাদায়ী ঋণের হিসাব থেকে অযোগ্য অংশ বাদ দিয়ে প্রকৃত আর্থিক চিত্র তুলে ধরতে পারবে। সার্কুলারটি অনুমোদিত হয়েছে বুধবার (৩ ডিসেম্বর)।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাখ্যামতে, খেলাপি ঋণের বড় অংশ দীর্ঘদিন ধরে স্থিতিপত্রে বহাল থাকায় ব্যাংকগুলো প্রকৃত ঝুঁকির সঠিক পরিমাণ দেখাতে পারছিল না। অনেক ক্ষেত্রে বকেয়া অংশ আদায়ের সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে, তবুও আইনগত সীমাবদ্ধতার কারণে ঋণগুলো স্থিতিপত্রে অঙ্ক হিসেবে রয়ে যাচ্ছিল। এতে করে ব্যাংকের আর্থিক শক্তি ও ঝুঁকির বাস্তব চিত্র গোপন থেকে যেত। নতুন নীতিমালা চালুর পর ব্যাংকগুলো এখন অযোগ্য অংশ সরিয়ে রেখে আদায়যোগ্য অংশে আরও মনোযোগী হতে পারবে।

নতুন নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, অবলোপনের ক্ষেত্রে প্রথমে সুদের অংশ বাদ দিতে হবে। অতিরিক্তভাবে, অনারোপিত সুদ (যা এখনো গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে প্রযোজ্য করা হয়নি) আলাদা হিসাবায়ন করতে হবে, যাতে প্রকৃত ঋণচিত্র স্পষ্ট হয়। প্রয়োজন হলে ঋণের বিপরীতে থাকা জামানতের বাজারমূল্য পুনর্মূল্যায়ন করা যেতে পারে, যাতে অবলোপনের সিদ্ধান্ত আরও বাস্তবসম্মত হয়।

আদায় সংক্রান্ত নতুন বিধানে বলা হয়েছে, গ্রাহক যে টাকা জামানত ছাড়া পরিশোধ করবে, তা প্রথমে ওই ঋণের অবলোপনকৃত অংশে সমন্বয় করা হবে। অবলোপনকৃত অংশ সম্পূর্ণ সমন্বিত হলে, এরপর গ্রাহকের দেওয়া অর্থ বকেয়া মূল ঋণ কমাতে ব্যবহৃত হবে। এর ফলে ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হবে এবং ব্যাংক বুঝতে পারবে কোন অংশ আদায় হচ্ছে এবং কোন অংশ পুরোপুরি অযোগ্য হিসেবে বাদ যাচ্ছে।

সার্বিক বকেয়া নির্ধারণের সময় ব্যাংককে তিনটি বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে—স্থিতিপত্রে থাকা বকেয়া ঋণ, অনারোপিত সুদ এবং অবলোপনকৃত কিন্তু এখনো অনাদায়ী অংশের পাওনা। অর্থাৎ, গ্রাহকের প্রকৃত দায় নির্ধারণে সব দিক হিসাব করতে হবে, যাতে ঋণের প্রকৃত অবস্থার পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া যায়।

এ ছাড়া আংশিক অবলোপনের পরও ঋণহিসাবকে পুনঃতফসিল (Rescheduling) বা এক্সিট সুবিধা দেওয়ার সুযোগ থাকবে। এতে করে বাকি থাকা গ্রাহকরা সহজ শর্তে ঋণ পরিশোধের পথে ফিরতে পারবেন এবং ব্যাংকের আদায়ও বাড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, আগের যে নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো ঋণ আংশিকভাবে অবলোপন করা যেত না, সেই সীমাবদ্ধতা তুলে নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিআরপিডি সার্কুলার বাতিল করে নতুন নীতি কার্যকর করা হয়েছে।

নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি বলছে, এই নীতিমালা কার্যকর হওয়ার ফলে অনাদায়ী ঋণের অকারণে স্ফীত হিসাব কমবে, ব্যাংকের স্থিতিপত্র আরও স্বচ্ছ ও বাস্তবসম্মত হবে এবং সামগ্রিকভাবে খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী হবে। নির্দেশনাটি অবিলম্বে কার্যকর করা হয়েছে।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে