ঢাকা, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
Sharenews24

শেয়ারবাজারে ক্লাসিক কারসাজি

১০% ডিভিডেন্ডের শেয়ারের পতন, নো ডিভিডেন্ডের উত্থান!

২০২৫ অক্টোবর ২২ ১৭:০৬:২৭
১০% ডিভিডেন্ডের শেয়ারের পতন, নো ডিভিডেন্ডের উত্থান!

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে মুনাফা ও ডিভিডেন্ড ঘোষণার ক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত দুই কারসাজি কোম্পানির মধ্যে এক অদ্ভুত উল্টো চিত্র দেখা দিয়েছে। যে কোম্পানিটি তাদের ডিভিডেন্ড ১ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে বাড়িয়েছে, ঘোষণার দিনেই তার শেয়ারদর কমেছে। আর যে কোম্পানিটি আগের বছরের ০.৫০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ডের বিপরীতে লোকসানের কারণে এবছর 'নো ডিভিডেন্ড' ঘোষণা করেছে, তার শেয়ারদর উল্টো বেড়েছে। কারসাজি কোম্পানির এই দুই রকম প্রবণতা নিয়ে বিনিয়োগকারী মহলে জোর আলোচনা চলছে, যা শেয়ারবাজারে চলমান কারসাজি এবং বিনিয়োগকারীদের লটারি খেলার প্রবণতাকে সামনে এনেছে।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ৩০ জুন, ২০২৫ অর্থবছরের জন্য তাদের ডিভিডেন্ড এক লাফে ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। শুধু তাই নয়, গত অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল মাত্র ১ পয়সা, যা সমাপ্ত অর্থবছরে ২৭ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ, কোম্পানির ইপিএস এবং ডিভিডেন্ড—উভয়ই বেড়েছে। স্বাভাবিক প্রবণতা অনুযায়ী এমন ঘোষণার পর শেয়ারদর বাড়ার কথা থাকলেও, আজ ইতিবাচক বাজারে সেই শেয়ারটির দাম কমেছে ১ টাকা ৭০ পয়সা।

অন্যদিকে, প্রায় একই রকম দুর্বল মৌলের আরেক কোম্পানি ইনফরমেশন সার্ভিস নেটওয়ার্ক-আইএসএন সম্পূর্ণ বিপরীত পথে হেঁটেছে। কোম্পানিটি ৩০ জুন, ২০২৫ অর্থবছরের জন্য নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। আগের বছর কোম্পানিটি ০.৫০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিলেও, সমাপ্ত অর্থবছরে তারা শেয়ারপ্রতি লোকসান করেছে ৪৩ পয়সা। অথচ, তার আগের বছর তারা শেয়ারপ্রতি ১২ পয়সা লাভ করেছিল। অর্থাৎ, ইপিএস কমে লোকসানে যাওয়া এবং 'নো ডিভিডেন্ড' ঘোষণার মতো নেতিবাচক খবর সত্ত্বেও, আজ এই কোম্পানিটির শেয়ারদর উল্টো ২ টাকা ৯০ পয়সা বেড়েছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের আচরণ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং এটি শেয়ারবাজারে চলমান কারসাজির একটি ক্লাসিক উদাহরণ। দুর্বল বা 'জেড' ক্যাটাগরির কাছাকাছি থাকা কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর ডিভিডেন্ড বা মুনাফার ভিত্তিতে নয়, বরং কারসাজি চক্রের হাতের ইশারায় শেয়ার দর ওঠানামা করে। খান ব্রাদার্সের ক্ষেত্রে 'সেল অন নিউজ' নীতি অনুসরণ করা হয়েছে, আর আইএসএন-এর ক্ষেত্রে নেতিবাচক খবরকেও পুঁজি করে দর বাড়িয়ে কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করা হয়েছে।

এই দুটি কোম্পানির ঘটনা প্রমাণ করে, শেয়ারবাজারে একটি অসাধু চক্র এখনো অত্যন্ত সক্রিয়। তারা দুর্বল মৌলের কোম্পানিগুলোকে বেছে নিয়ে কৃত্রিমভাবে দর বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে এবং পরে বিপুল মুনাফায় শেয়ার ছেড়ে দেয়। এই ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন নতুন এবং অসচেতন বিনিয়োগকারীরা, যারা কেবল ঘোষণার ওপর ভিত্তি করে অথবা শেয়ারদর বাড়তে দেখে বিনিয়োগ করেন।

উল্লেখ, সমাপ্ত অর্থবছরে খান ব্রাদার্সের ইপিএস হয়েছে ২৭ পয়সা। অথচ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে প্রায় চার গুণ ১ টাকা। এখানেও কারসাজিকারীদের সঙ্গে কোম্পানির অশুভ আঁতাত রয়েছে বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন।

উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট খান ব্রাদার্সের শেয়ার দর ছিল ১১৩ টাকা। তারপর টানা উত্থানে ১৮ সেপ্টেম্বর ১৬৩ টাকার ওপরে লেনদেন হয়। তারপর থেকে সংশোধনের ধারায় থাকে। গত ৭ নভেম্বর ১৪৮ টাকার ওপর থেকে টানা পতনে থাকে। যা আজও অব্যাহত থাকে।

অন্যদিকে, গত ৭ আগস্ট আইএসএন-এর দর ছিল ৪৩ টাকার নিচে। এরপর থেকে টানা উত্থান। ৯ সেপ্টেম্বর শেয়ারটির দর ১২০ টাকার ওপরে লেনদেন হয়। তারপর থেকে ধারাবাহিক পতন। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত শেয়ারটির ধারাবাহিক পতন হয়েছে। আজ নো ডিভিডেন্ড ও লোকসানের খবরে বেড়েছে।

তহা/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে