ঢাকা, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

ভারতের বিরুদ্ধে নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিস্ফোরক অভিযোগ

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১২ ১৫:৪৩:৫০
ভারতের বিরুদ্ধে নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিস্ফোরক অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: নেপালের সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি এক খোলা চিঠিতে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, ভারতের স্বার্থবিরোধী অবস্থান নেওয়ার কারণেই তাকে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়েছে। একইসঙ্গে তিনি লিম্পিয়াধুরা, কালাপানি, লিপুলেখ, অযোধ্যা এবং ভগবান রামের জন্মস্থান সংক্রান্ত বিতর্কে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন।

সহিংস বিক্ষোভ, পদত্যাগ এবং গুজব

গত ৯ সেপ্টেম্বর নেপালে টানা দুই দিনের সহিংস জেন-জি (Gen-Z) বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন ওলি। পদত্যাগের পরপরই গুজব ছড়িয়ে পড়ে—তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তবে পরে জানা যায়, তিনি রাজধানী কাঠমান্ডুর কাছে শিবপুরি সেনা ব্যারাকে সামরিক বাহিনীর নিরাপত্তায় অবস্থান করছেন।

চিঠিতে বিস্ফোরক দাবি: “ভারতের জন্যই ক্ষমতা হারালাম”

১০ সেপ্টেম্বর নেপালি সংবাদমাধ্যম খবর হাব-কে পাঠানো এক চিঠিতে ওলি স্পষ্ট ভাষায় লেখেন:

“আমি লিম্পিয়াধুরা, কালাপানি ও লিপুলেখ নিয়ে প্রশ্ন তোলায়, আর রামের জন্মস্থান সম্পর্কে ঐতিহাসিক সত্য তুলে ধরায় ভারত আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। তারা চায় না নেপাল স্বাধীনভাবে নিজের ভূখণ্ড ও ইতিহাসের কথা বলুক। এই কারণেই আমাকে সরানো হয়েছে।”

সীমান্ত বিতর্ক: ভারতের সাথে দীর্ঘদিনের টানাপোড়েন

লিম্পিয়াধুরা, কালাপানি ও লিপুলেখ—এই তিন অঞ্চলকে ঘিরে ভারত ও নেপালের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই সীমান্ত বিরোধ চলছে। ১৮১৬ সালের সুগৌলি চুক্তি অনুসারে, কালি নদীকে দুই দেশের সীমান্ত হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। তবে বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে—নদীর উৎস কোথায়?

নেপালের দাবি: কালি নদীর উৎস লিম্পিয়াধুরা, তাই এই অঞ্চল নেপালের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ভারতের দাবি: কালি নদীর উৎপত্তি কালাপানির কাছে, যা ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যে অবস্থিত। ভারতের মতে, লিপুলেখ তাদের ভূখণ্ডের অংশ এবং ১৯৫৪ সাল থেকেই তারা চীনের সঙ্গে এখান দিয়ে বাণিজ্য করছে।

ভারত নেপালের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এ দাবির “কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই”।

রাম জন্মস্থান বিতর্ক: “অযোধ্যা নয়, রাম জন্মেছেন নেপালে!”

২০২০ সালের জুলাই মাসে কেপি শর্মা ওলি আরও এক বিস্ফোরক দাবি করে বলেন:“ভগবান রাম ভারতের নয়, বরং নেপালের। প্রকৃত অযোধ্যা অবস্থিত নেপালের পূর্ব বীরগঞ্জে। ভারত ‘ভুয়া অযোধ্যা’ তৈরি করেছে।”

তিনি প্রশ্ন তুলেন—যদি রাম ভারতের হন, তবে কীভাবে তিনি নেপালের জনকপুরের সীতাকে বিবাহ করলেন? প্রাচীনকালে এত দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার প্রযুক্তি বা যোগাযোগ ব্যবস্থা তো ছিল না!

এই মন্তব্য ঘিরে তখন ভারতজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। অনেকে এটিকে “রাজনৈতিক চমক” এবং “ইতিহাস বিকৃতি” বলে অভিহিত করে।

ক্ষমতা হারানোর পর ওলি বলছেন, ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এবং নেপালের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দৃঢ় থাকার ফলেই তিনি ক্ষমতা হারিয়েছেন। তার দাবি, ভারতের প্রভাবে এবং চাপের মুখে নেপালের রাজনীতি তাকে সরিয়ে দিয়েছে।

গুজব উঠলেও, তিনি পালিয়ে যাননি। জানা গেছে, তিনি বর্তমানে শিবপুরি সেনা ব্যারাকে অবস্থান করছেন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে আছেন।

কেপি শর্মা ওলির এই অবস্থান নেপাল-ভারত সম্পর্ককে নতুন করে উত্তপ্ত করতে পারে। বিশেষ করে সীমান্ত ও ধর্মীয় বিষয়গুলোতে তার বক্তব্য দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি করেছে। এখন দেখার বিষয়, ভারত এই অভিযোগের কী জবাব দেয় এবং নেপালের রাজনৈতিক ভবিষ্যত কোন দিকে মোড় নেয়।

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে