ঢাকা, বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

ন্যাশনাল টি-তে অনিয়মের পাহাড়: বেতন বন্ধ, তবু বাড়তি ফি

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০২ ০৭:০৯:২২
ন্যাশনাল টি-তে অনিয়মের পাহাড়: বেতন বন্ধ, তবু বাড়তি ফি

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা অমান্য করে রাইটস ইস্যুর তহবিল থেকে ২৯ কোটি টাকা খরচ করেছে। অথচ এ সময় কোম্পানির চা বাগানের শ্রমিকদের ১৭ সপ্তাহের এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছয় মাসের বেতন বকেয়া রয়ে গেছে।

বিএসইসি গত বছরের ১৭ অক্টোবর স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিল, সরকারের ৫১ শতাংশ শেয়ার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রাইটস ইস্যুর টাকা ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু সেই নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে চলতি বছরের জুলাইয়ে কোম্পানিটি গোপনে এ অর্থ ব্যয় করেছে। জানা গেছে, এই অর্থ ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ প্রসপেক্টাসে স্পষ্টভাবে বলা ছিল, রাইটস ফান্ড ব্যবহৃত হবে ঋণ পরিশোধ, কার্যনির্বাহী মূলধন জোগান এবং চা বাগান ও কারখানার উন্নয়ন কাজে।

এদিকে, আর্থিক প্রতিবেদনের ক্ষেত্রেও অনিয়ম করেছে কোম্পানিটি। প্রায় এক বছর ধরে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ না করায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা থেকেছেন সম্পূর্ণ অন্ধকারে।

পরিচালনা পর্ষদ এরই মধ্যে নিজেদের সুবিধা বহুগুণ বাড়িয়েছে। পরিচালকদের সভা ফি ৬ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা করা হয়েছে। এতে কোম্পানির গঠনতন্ত্রের ১২৮ নম্বর ধারা এবং বিএসইসি'র ২০২১ সালের নির্দেশনা—উভয়ই লঙ্ঘন হয়েছে। আইন অনুযায়ী, এজিএম-এর অনুমোদন ছাড়া সভা ফি বাড়ানো যায় না এবং ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানির পরিচালক সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকার বেশি নিতে পারেন না।

ফলশ্রুতিতে পরিচালকরা আগে কর কেটে প্রতি সভায় যেখানে ৫ হাজার ৪০০ টাকা পেতেন, এখন পাচ্ছেন ১০ হাজার ৮০০ টাকা। শুধু তাই নয়, স্বতন্ত্র পরিচালক ও বর্তমান চেয়ারম্যান মামুন রশীদকে দেওয়া হচ্ছে মাসিক ৭৫ হাজার টাকা সম্মানী। কর কাটার পর এই পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা। কাগজপত্রে এই খরচ দেখানো হয়েছে বিনোদন, যাতায়াত ও টেলিফোন সুবিধার খাত হিসেবে। অভিযোগ ওঠার পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই ভাতা সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ন্যাশনাল টি অনিয়মের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। শেয়ারের দামের কারসাজি, শ্রমিক সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানো, এমনকি সিন্ডিকেটের কাছে বাজারদরের চেয়ে কম দামে চা বিক্রির মতো কর্মকাণ্ড এখন নিয়মিত। এর ফলে কোম্পানির ব্যাংক ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকায়।

কোম্পানির বকেয়া সমস্যাও দিন দিন বাড়ছে। শ্রমিকদের ১৭ সপ্তাহের বেতন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছয় মাসের বেতন এবং বাগানের ছয় মাসের বিদ্যুৎ বিল অদায় রয়ে গেছে।

সমালোচকদের দাবি, পরিচালকরা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতিষ্ঠানকে এই করুণ অবস্থায় ঠেলে দিচ্ছেন, যাতে সরকারকে বোঝানো যায়—বেসরকারি খাতে হস্তান্তরই একমাত্র সমাধান। তবে সবকিছু জানার পরও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বরং অভিযোগ উঠেছে, তারা উল্টো পরিচালক ও চেয়ারম্যানের অনিয়মে নীরব সহযোগী হয়ে উঠেছে।

তহা/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে