ঢাকা, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

দলিল আছে কিন্তু রেকর্ড অন্যের নামে জেনে নিন সমাধান

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০১ ১১:২৭:১৮
দলিল আছে কিন্তু রেকর্ড অন্যের নামে জেনে নিন সমাধান

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে জমির মালিকানা প্রমাণে দলিল (Deed) ও খতিয়ান (Khatian) অর্থাৎ রেকর্ডের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে অনেক সময় দেখা যায়, জমির বৈধ দলিল থাকা সত্ত্বেও খতিয়ান বা সরকারি রেকর্ড অন্য কারো নামে থাকে। এই অবস্থায় মালিকানা বৈধ থাকবে কি না, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক দ্বিধা ও জটিলতা দেখা দেয়। এই জটিল আইনি প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন প্রখ্যাত অ্যাডভোকেট মোঃ মনিরুজ্জামান।

খতিয়ান মূলত সরকার কর্তৃক পরিচালিত জরিপ ও নথি, যা জমির মালিকানা প্রমাণ করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে চার ধরনের জরিপ খতিয়ান তৈরি হয়েছে:

সিএস খতিয়ান (CS Khatian): ১৮৮৭ থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসনের সময় প্রথম রেকর্ড জরিপ।

এসএ খতিয়ান (SA Khatian): ব্রিটিশ শাসন অবসানের পর পাকিস্তান সরকারের সময় চালু, যা ‘৬২’ বা ‘পিএস/এমআরআর’ নামেও পরিচিত।

আরএস খতিয়ান (RS Khatian): বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রায় ১৯৯৭-৯৮ সাল পর্যন্ত চালানো জরিপ।

বিআরএস খতিয়ান (BRS Khatian): ১৯৯৮-৯৯ সাল থেকে বর্তমানে পর্যন্ত চলমান জরিপ, যাকে কিছু অঞ্চলে সিটি জরিপও বলা হয়।

দলিল হলো জমির মালিকানা প্রমাণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, জমি কেনা-বেচার সময় দলিল সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক। এই প্রক্রিয়ায় সাব-রেজিস্ট্রার সর্বশেষ খতিয়ান যাচাই করে দলিল রেজিস্ট্রি করেন।

অ্যাডভোকেট মোঃমনিরুজ্জামান এই বিষয়টি দুটি দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করেছেন:

১. দলিল যদি সর্বশেষ রেকর্ড জরিপের আগে করা হয়:

যদি আপনার দলিল সর্বশেষ রেকর্ড জরিপের (যেমন BRS খতিয়ান) আগে করা হয়ে থাকে এবং আপনি সম্পত্তির সঠিক মালিকানা চেইন বজায় রেখে সম্পত্তির দখল রাখেন, তবে আপনার দলিল বৈধ বলে গণ্য হবে।

যদি রেকর্ডে নামের বানানে ভুল বা কেরানিক ত্রুটি থাকে, তাহলে এসিল্যান্ড (সহকারী কমিশনার ভূমি) এর কাছে আবেদন করে বা নির্দিষ্ট সময়ে ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালে মামলা করে সংশোধন করানো সম্ভব।

২. দলিল যদি সর্বশেষ রেকর্ড জরিপের পরে করা হয়:

যদি আপনার দলিল সর্বশেষ রেকর্ড জরিপ প্রকাশের পরে (যেমন ২০০৫ সালের পর) করা হয়ে থাকে এবং আপনি এমন একজন ব্যক্তির কাছ থেকে জমি কিনেছেন যিনি রেকর্ডভুক্ত মালিক ছিলেন না, তাহলে শুধু দলিল থাকা যথেষ্ট নয়।

এই ক্ষেত্রে আপনাকে সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ডের কাছে নামজারির আবেদন করতে হবে, নতুন হোল্ডিং খুলতে হবে এবং নিয়মিত সরকারী খাজনা পরিশোধ করতে হবে। এখানে পূর্বের রেকর্ড সংশোধন করার চাইতে নামজারি মাধ্যমে মালিকানা প্রতিষ্ঠা করাই মূল বিষয়।

ছোটখাটো ভুল হলে করণীয়

সাধারণত নামের বানান ভুল, জরিপ নম্বর ভুল ইত্যাদি কেরানিক ভুল হলে তা এসিল্যান্ডের মাধ্যমে সংশোধন করা যায়। তবে বড় ধরনের মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতা থাকলে দেওয়ানী আদালতে মামলা করতে হতে পারে।

সারসংক্ষেপ

দলিল থাকলেই মালিকানা বৈধ নয়, রেকর্ড (খতিয়ান) এর সঙ্গতি জরুরি।

যদি দলিল সর্বশেষ রেকর্ডের আগে হয় এবং মালিকানা চেইন সঠিক থাকে, দলিল বৈধ হবে।

দলিল যদি সর্বশেষ রেকর্ডের পরে হয়, তবে নামজারি ও সরকারি খাজনা পরিশোধ আবশ্যক।

কেরানিক ভুল হলে সংশোধন সম্ভব, বড় বিরোধ হলে আদালতের সাহায্য নিতে হবে।

বাংলাদেশের জমির মালিকানা নিয়ে চলমান এই আইনি জটিলতা জনসাধারণের জন্য জেনে রাখা খুবই জরুরি, যেন ভবিষ্যতে অনাকাঙ্ক্ষিত আইনি ঝামেলা এড়ানো যায়।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে