ঢাকা, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

নিয়মিত চশমা পরলে কি চোখের পাওয়ার ঠিক হয় না আরও কমে যায়?

২০২৫ জুলাই ১২ ১৮:১২:১৫
নিয়মিত চশমা পরলে কি চোখের পাওয়ার ঠিক হয় না আরও কমে যায়?

নিজস্ব প্রতিবেদক: চোখে দুর্বলতা বা দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পাওয়া মানেই অনেকের জীবনে চশমা একটি স্থায়ী অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে ছোট-বড় সকল বয়সী মানুষের মধ্যেই একটি সাধারণ প্রশ্ন দেখা যায়—নিয়মিত চশমা পরলে কি চোখের পাওয়ার (সংখ্যা) ঠিক হয়ে যায় বা কমে যায়?

এই প্রশ্নের পেছনে রয়েছে দৃষ্টিশক্তি ও চোখের গঠনগত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণার অভাব। চলুন বিষয়টি বিশদভাবে জানা যাক।

চোখের পাওয়ার কী?

চোখের পাওয়ার বলতে সাধারণত বোঝানো হয় চোখের লেন্স কতটা আলো ভেঙে রেটিনায় সঠিকভাবে ফোকাস করতে পারছে। যখন চোখ ঠিকভাবে ফোকাস করতে ব্যর্থ হয়, তখনই চোখে চশমার প্রয়োজন পড়ে। চোখের এই সমস্যা কয়েকভাবে হতে পারে:

মায়োপিয়া (নিকটদৃষ্টি): দূরের বস্তু ঝাপসা দেখা।

হাইপারোপিয়া (দূরদৃষ্টি): কাছে কিছু ঝাপসা দেখা।

এসটিগমেটিজম: চোখের কর্নিয়া অসমান হলে দৃষ্টিতে বিকৃতি।

প্রেসবায়োপিয়া: বয়সজনিত কারণে কাছের জিনিস দেখতে অসুবিধা।

চশমা মূলত চোখের অপটিক্যাল ত্রুটি সংশোধন করে। এটি রেটিনায় আলো সঠিকভাবে ফোকাস করতে সাহায্য করে, ফলে দৃষ্টিশক্তি পরিষ্কার হয়। তবে এটি একটি সহায়ক উপকরণ, চিকিৎসা নয়।

চশমা চোখের গঠন বা বায়োলজিক্যাল সমস্যাকে পরিবর্তন করতে পারে না, বরং শুধু সাময়িকভাবে দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখে।

তাহলে চশমা নিয়মিত পরলে চোখের পাওয়ার কমে যায়?

সরাসরি উত্তর হলো: না, নিয়মিত চশমা পরলে চোখের পাওয়ার কমে যায় না বা ঠিক হয়ে যায় না।

তবে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে:

শিশুদের ক্ষেত্রে: ছোটদের ক্ষেত্রে লেজি আই (অ্যামব্লায়োপিয়া) বা স্ট্রাবিসমাস (চোখ বাঁকা) সমস্যা হলে, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চশমা নিয়মিত ব্যবহার করলে দৃষ্টিশক্তি উন্নত হতে পারে। কারণ তখন চোখের নিউরো-ভিজ্যুয়াল সংযোগ গঠনের সময় থাকে।

মায়োপিয়া কন্ট্রোল: সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের ক্ষেত্রে মায়োপিয়ার গতি নিয়ন্ত্রিত করা যায় কিছু নির্দিষ্ট ধরণের লেন্স, চশমা বা ওষুধ দিয়ে। তবে তা বিশেষজ্ঞ পরামর্শে এবং নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে করতে হয়।

বড়দের ক্ষেত্রে?

বড়দের দৃষ্টিশক্তি একবার নষ্ট হলে চশমা ব্যবহার করলে তা স্থায়ীভাবে ভালো হয় না। তবে সঠিক পাওয়ারের চশমা না পরলে চোখে চাপ পড়ে, মাথাব্যথা হয়, ক্লান্তি আসে—এসব এড়াতে নিয়মিত চশমা ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি।

কিছু ভ্রান্ত ধারণা

১. “চশমা পরলে চোখ আরো খারাপ হয়ে যায়” – ভুল। আসলে সঠিক পাওয়ারের চশমা না পরলে চোখ বেশি কষ্ট পায়।

২. “চশমা না পরে থাকলে চোখ ঠিক হয়ে যাবে” – ভুল। বরং সমস্যার প্রকৃতি আরও বাড়তে পারে।

৩. “চোখে পাওয়ার বাড়া-কমা চশমা পরার ওপর নির্ভর করে” – আসলে এটা নির্ভর করে বয়স, জীবনধারা, জেনেটিক্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যগত কারণে।

চোখের পাওয়ার নিয়ন্ত্রণে যা করণীয়

প্রতি ৬–১২ মাসে একবার চোখ পরীক্ষা করানো

দীর্ঘ সময় স্ক্রিনে কাজ করলে ২০-২০-২০ নিয়ম মানা (২০ মিনিট পরপর ২০ সেকেন্ড ২০ ফুট দূরে তাকানো)

পর্যাপ্ত আলোতে পড়াশোনা করা

বাইরের খেলাধুলা বাড়ানো (বিশেষ করে শিশুদের জন্য)

খাদ্যাভ্যাসে ভিটামিন এ ও চোখের জন্য উপকারী পুষ্টি রাখা

চশমা চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সহায়ক হলেও এটি চোখের পাওয়ার কমিয়ে দেওয়ার সরাসরি মাধ্যম নয়। এটি মূলত দৃষ্টির সহায়ক যন্ত্র। তবে নিয়মিত ব্যবহার করলে চোখের ওপর চাপ কমে, সমস্যা বাড়তে বাধা পায়। বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত সঠিক চিকিৎসা ও চশমার মাধ্যমে কিছু উন্নতি সম্ভব।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ খবর

স্বাস্থ্য - এর সব খবর



রে