ঢাকা, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

খুনের পর লাশের ওপর লাফায় ঘাতকরা

২০২৫ জুলাই ১১ ২২:৩৪:৩৩
খুনের পর লাশের ওপর লাফায় ঘাতকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের পাশে গত বুধবার (৯ জুলাই) সোহাগ নামে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে বীভৎসভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর হত্যাকারীরা লাশের ওপর লাফিয়ে উল্লাস করে, যা সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে এবং ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৬টায় মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে ব্যস্ত সড়কে মানুষের সামনেই এই নৃশংসতা ঘটে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, দুই তরুণ সোহাগের প্রায় বস্ত্রহীন রক্তাক্ত দেহ ফটকের ভেতর থেকে টেনে বের করছে। একজন তার গালে চড় মারছে, আরেকজন তার বুকের ওপর লাফাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর আরও একজন এসে একই কাজ করে এবং একপর্যায়ে একজন লাশের মাথায় লাথি মারে। এত মানুষের সামনে এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটলেও, হতবিহ্বলতার কারণে কেউ এগিয়ে আসেনি।

নিহত সোহাগ পুরোনো তামার তার ও অ্যালুমিনিয়াম শিটসহ ভাঙারি ব্যবসা করতেন। পরিবার জানায়, তিনি একসময় যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার স্ত্রী লাকী বেগম অভিযোগ করেন, স্থানীয় মহিনসহ বেশ কয়েকজন মিলে তার স্বামীকে হত্যা করেছে। নিহতের ভাগনি সাদিয়া আক্তার জানান, সোহাগ কেরানীগঞ্জের কদমতলী মডেল টাউন এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকতেন এবং দীর্ঘ বছর ধরে ভাঙারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অভিযুক্ত মহিনসহ কয়েকজন তার বন্ধুস্থানীয় ছিল। সম্প্রতি স্থানীয় যুবদল নেতা পরিচয় দেওয়া মহিন সোহাগের ব্যবসার অর্ধেক ভাগ দাবি করে আসছিলেন। সোহাগ রাজি না হওয়ায় তাকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয় এবং হত্যার আগের দিন তার গুদামে গুলি চালানো হয়। বুধবার দুপুরে মীমাংসার কথা বলে মহিন সোহাগকে ডেকে নিয়ে যান।

স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোহাগকে প্রথমে মারধর করা হয় এবং মারতে মারতে মিটফোর্ড হাসপাতালের ভেতরে নেওয়া হয়। বাঁচার চেষ্টা করলেও একপর্যায়ে ইট-পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে দুর্বৃত্তরা। ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর মহিনসহ অন্যরা সোহাগকে ওই এলাকার ভাঙারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেয় এবং লাভের একটি অংশ পাওয়ার কথা ছিল। টাকার অঙ্ক বড় হওয়ায় তারা ব্যবসার পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মাহমুদুল হাসান মহিন ও তারেক রহমান রবিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রবিনের কাছ থেকে একটি পিস্তলও উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার দুজনসহ ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করে নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার এজাহারে ব্যবসায়িক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ এবং সোহাগের গুদাম তালাবদ্ধ করে তাকে এলাকাছাড়া করার চেষ্টার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন্স) এস এন নজরুল ইসলাম এই বীভৎসতাকে 'অবর্ণনীয়' আখ্যা দিয়ে বলেন, মানুষের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে। তরুণদের একটা অংশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সমাজে শৃঙ্খলা ও ঐক্য বজায় না থাকলে বিপদ আরও বাড়বে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, এমন বর্বরতার ঘটনা অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে সহিংসতা বৃদ্ধি এবং আইনি ব্যবস্থা নিতে বিলম্বের ফল। তিনি দ্রুত আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দেন।

মারুফ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে