ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি: প্রবৃদ্ধি কম, প্রতিযোগিতা বাড়ছে

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ১৬ ১৪:২৮:৫৫
যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি: প্রবৃদ্ধি কম, প্রতিযোগিতা বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও, তা অন্যান্য প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় তুলনামূলকভাবে কম। ২০২৪ সালে ভিয়েতনাম, ভারত ও কম্বোডিয়া উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যেখানে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ছিল সীমিত।

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মোট পোশাক আমদানি ১.৮২ শতাংশ বেড়েছে, এবং পরিমাণগতভাবে ৫.৮৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাওয়ায় গড় একক দাম ৩.৮৩ শতাংশ কমেছে, যা রপ্তানিকারকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৭.৩৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ০.৭৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিমাণগতভাবে ৪.৮৬ শতাংশ বৃদ্ধি হলেও একক দাম ৩.৯৪ শতাংশ কমেছে, ফলে রপ্তানিকারকরা কম মুনাফা করতে বাধ্য হচ্ছেন।

বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী দেশগুলো তুলনামূলকভাবে ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক বাজারে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী ভিয়েতনামের রপ্তানি মূল্য ৫.৬৭ শতাংশ বেড়েছে, পরিমাণ ৯.৪৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতেও রপ্তানি মূল্য ৪.৯৫ শতাংশ এবং পরিমাণ ১৩.০৯ শতাংশ বেড়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি কম্বোডিয়ার, যেখানে রপ্তানি মূল্য ১৪.৪৮ শতাংশ এবং পরিমাণ ১৮.৪৫ শতাংশ বেড়েছে।

অন্যদিকে, মেক্সিকো এবং কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। মেক্সিকোর রপ্তানি মূল্য ৬.৭৮ শতাংশ কমেছে এবং পরিমাণ ১৫.১৮ শতাংশ কমেছে, কোরিয়ার ক্ষেত্রে এই হার যথাক্রমে ১২.৯৪ শতাংশ ও ৫.৫৬ শতাংশ কমেছে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি প্রধানত টি-শার্ট, শার্ট, প্যান্ট, সোয়েটার ও ওভেন পোশাকের ওপর নির্ভরশীল। তবে বর্তমানে ফ্যাশনসচেতন ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সাসটেইনেবল (পরিবেশবান্ধব) পোশাক, স্পোর্টসওয়্যার ও উচ্চমূল্যের পোশাক তৈরির দিকে ঝুঁকছে। শ্রম খরচ বৃদ্ধির কারণে কম ব্যয়ে উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশের জন্য এখন ফাংশনাল পোশাক (যেমন: অ্যাথলেটিক ও আউটডোর পোশাক), প্রযুক্তিনির্ভর উৎপাদন এবং টেকসই ফ্যাশনে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। এর মাধ্যমে রপ্তানিকারকরা বেশি মূল্য সংযোজন করতে পারবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে পারবে।

বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে উচ্চমূল্যের পোশাক উৎপাদন এবং বাজার বৈচিত্র্যকরণের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাণিজ্য নীতি পরিবর্তন, ভোক্তাদের ব্যয়সংকোচন এবং চীনের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা নতুন সুযোগ তৈরি করছে, যা বাংলাদেশকে কাজে লাগাতে হবে।

তবে ডলারের বিনিময় হার ওঠানামা, শ্রম খরচ বৃদ্ধি ও কাঁচামালের ওপর আমদানিনির্ভরতা দেশের রপ্তানিকারকদের জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, দক্ষ জনশক্তি উন্নয়ন এবং কার্যকর কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা সম্ভব।

বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ছে, তাই বাংলাদেশকে আরো উদ্ভাবনী কৌশল গ্রহণ করতে হবে, যাতে বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনার সুযোগ কাজে লাগানো যায়। সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করলে, বাংলাদেশের পোশাক খাত যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক বাজারে আরও শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারবে।

আলম/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে