ঢাকা, শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

শিশুদের হাতে স্মার্টফোন দিয়ে যে মারাত্মক ক্ষতি করছেন

২০২৫ ডিসেম্বর ০৬ ১৫:৫৪:২৯
শিশুদের হাতে স্মার্টফোন দিয়ে যে মারাত্মক ক্ষতি করছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক: শিশুদের অল্প বয়সে স্মার্টফোন ব্যবহারের প্রভাব নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক একটি দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুব কম বয়সে স্মার্টফোন হাতে পাওয়ায় শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য, শারীরিক সুস্থতা এবং ঘুম—তিন ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিতে পারে।

‘পেডিয়াট্রিক্স’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ১২ বছর বয়সের আগেই প্রথম মোবাইল ফোন ব্যবহার শুরু করে, তাদের মধ্যে স্থূলতা, বিষণ্ণতা এবং ঘুমের ব্যাঘাতের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। যদিও গবেষণা সরাসরি কারণ–প্রমাণে সতর্ক, তবে স্মার্টফোন ব্যবহারের সঙ্গে এসব সমস্যার একটি দৃশ্যমান সম্পর্ক পাওয়া গেছে।

মার্কিন কিশোর মস্তিষ্কের বিকাশ–সংক্রান্ত ABCD গবেষণায় ৯ থেকে ১৬ বছর বয়সী ১০ হাজারেরও বেশি শিশুকে দীর্ঘসময় পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এতে বিশ্লেষণ করা হয়েছে—১২ বছর বয়সে স্মার্টফোন পাওয়ার অভ্যাস কিভাবে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য, ঘুম এবং ওজনকে প্রভাবিত করে।

গবেষণার ফল অনুযায়ী, ১২ বছর বয়সে প্রথম স্মার্টফোন পাওয়া শিশুদের মধ্যে ফোন না থাকা শিশুদের তুলনায় বিষণ্ণতা ৩০%, স্থূলতা ৪০% এবং ঘুমের ব্যাঘাত ৬০% বেশি দেখা গেছে। গবেষকরা আরও দেখেছেন, যারা ১২ বছরের অনেক আগেই ফোন ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়, প্রতি বছর তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি গড়ে ১০% করে বাড়ে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—১২ বছর বয়সকে বিশেষ একটি সীমা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণ এ বয়সে মস্তিষ্কের দ্রুত পরিবর্তন, হরমোনের ওঠানামা এবং সামাজিক সংবেদনশীলতা শিশুদেরকে অনলাইন প্রতিক্রিয়া, সোশ্যাল মিডিয়ার অনুমোদন এবং নোটিফিকেশনের প্রতি বেশি দুর্বল করে তোলে।

গবেষণা বলছে, খুব অল্প বয়সে স্মার্টফোন ব্যবহারে শিশুদের ঘুমের সময় ব্যাহত হয়, শারীরিক কর্মকান্ড কমে এবং সামনাসামনি সামাজিক দক্ষতা উন্নয়নের প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে পড়ে। স্ক্রিনে অতিরিক্ত সময় কাটানো, গেম খেলা, ভিডিও দেখা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করা—এসব অভ্যাস বসে থাকার সময় বাড়িয়ে শিশুর ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি করে।

তথ্য অনুযায়ী, ১২ বছর বয়সী স্মার্টফোন ব্যবহারকারী শিশুদের স্থূলতার হার ১৮%, যেখানে ফোন ব্যবহার না করা শিশুদের ক্ষেত্রে তা ১২%। ফোন হাতে পাওয়ার বয়স যত কম, ঝুঁকির হার তত বেশি—এমন প্রমাণও গবেষণায় উঠে এসেছে।

মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্যে দেখা যায়—১২ বছর বয়সী স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৬.৫% বিষণ্ণতায় ভোগে, আর ফোন ব্যবহার না করা শিশুদের মধ্যে এই হার মাত্র ৪.৫%। অনলাইনে অন্যদের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করা, সাইবার বুলিং-এর শিকার হওয়া এবং সামাজিক গোষ্ঠী থেকে বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি—এসবকে বিষণ্ণতা বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ঘুমানোর আগে দীর্ঘ সময় স্ক্রিনে থাকা ও নীল আলোর সংস্পর্শ মেলাটোনিনের স্বাভাবিক উৎপাদন কমিয়ে দেয়। যার ফলে ঘুম দেরি হয়, মান খারাপ হয় এবং এই সমস্যা বিষণ্ণতা ও ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে মিলে একটি জটিল চক্র তৈরি করে।

সব মিলিয়ে গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন—১২ বছর বয়সের আগে স্মার্টফোন ব্যবহারের অনুমতি দিলে শিশুর স্বাস্থ্য, ঘুম এবং মানসিক বিকাশে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

এমজে/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

লাইফ স্টাইল এর সর্বশেষ খবর

লাইফ স্টাইল - এর সব খবর



রে