ঢাকা, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫
Sharenews24

জলবায়ু পরিবর্তনের ১৪ ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

২০২৫ অক্টোবর ০৬ ১২:২৭:৪৬
জলবায়ু পরিবর্তনের ১৪ ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিগত কয়েক দশকে দেখা দিয়েছে যেসব চোখে ধরা পরিবর্তন, সেগুলোই এখন জলবায়ু বিপর্যয়ের নতুন ‘নূনতম স্ট্যান্ডার্ড’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের ঋতুপ্রবাহে অস্বাভাবিকতা, বাড়তে থাকা তাপ ও বৃষ্টির চড়াই-উৎরাই — মূলত এসব কিছুই নির্দেশ করছে যে আমরা ১৪টি প্রধান জলবায়ু ঝুঁকির মধ্যে ধরা পড়েছি।

বিশ্বব্যাপী “ওয়ার্ল্ড ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স”–এ বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষ দশে। অনেক আগে থেকেই, সরকার ‘জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা’ (ন্যাপ) নামে এসব ঝুঁকি চিহ্নিত করে রেখেছে। ন্যাপে বলা হয়েছে, সময়ের সাথে এসব ঝুঁকি আরও প্রকট হবে।

প্রধান ঝুঁকিগুলোর সারাংশ

চরম গরম / তাপপ্রবাহ

— অতীত: গ্রীষ্মকালে (এপ্রিল) সীমাবদ্ধ; এখন: বর্ষাকালেও তাপপ্রবাহ ছড়িয়ে পড়ছে।

— গত ৩০ বছরে গড় তাপমাত্রার ধারা ক্রমবর্ধমান।

— মার্চ- মে সময়ের তাপপ্রবাহ এখন সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ছে।

অনিয়মিত বৃষ্টিপাত

— শীত ও গ্রীষ্মপূর্ববর্তী সময় কম বৃষ্টি; বর্ষা ও পরবর্তী সময় বেশি বৃষ্টি।

— অতীত রেকর্ড অনুযায়ী—ঢাকায় ২৪ ঘণ্টায় ৩৪১ মিমি, চট্টগ্রামে ৪০৮ মিমি বৃষ্টি, রংপুরে ৪৩৩ মিমি।

— ভবিষ্যতে পূর্ব ও পার্বত্য অঞ্চলে বৃষ্টি বাড়বে; পশ্চিমাঞ্চলে কমবে; ২০৫০ সাল থেকে সারাদেশে প্রবণতা বাড়বে।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি

— গত ৩০ বছরে উপকূলীয় এলাকায় উচ্চতা বাড়ছে ৩٫৮–৫٫৮ মিমি বছরে।

— ২০৫০ সালের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৯ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে।

— উপকূলীয় এলাকা ১২–১৮% ডুবে যেতে পারে।

নদী বন্যা

— অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে নদীগুলি উঁচু হয়ে বন্যা সৃষ্টি হয়।

— ইতিহাসে ১৯৮৭, ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০৪, ২০০৭, ২০১৭ সালের বন্যা উল্লেখযোগ্য।

খরা

— দীর্ঘ শুষ্ক আবহাওয়া, কম বৃষ্টি ও অধিক বাষ্পীভবন—এগুলো মিলে কিছু এলাকায় পানি স্বল্পতা তৈরি করছে।

— ১৯৬০–১৯৯১ ধরে বাংলাদেশে ১৯টি খরা দেখা গেছে; ১৯৭৬ ও ১৯৭৯ খরা অনেক ক্ষতি করেছে।

আকস্মিক বন্যা

— বিভিন্ন সময়ে (এপ্রিল–জুলাই, সেপ্টেম্বর–অক্টোবর) ভারী বৃষ্টির কারণে হঠাৎ বন্যা।

— উত্তর-পূর্বাঞ্চল সবসময় ঝুঁকিতে—এখানে দেশের ধান উৎপাদনের প্রায় ১৮% হয়।

নদী ভাঙন

— প্রতিবছর প্রায় ১০,০০০ হেক্টর জমি হারায় নদী ভাঙনের কারণে।

— ১৯৭৩–২০২১ সালে যমুনায় ৯৪,০০০ হেক্টর, পদ্মায় ৩৩,৫০০ হেক্টর জমি বিলীন।

— গত ২২ বছরে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ ভূমিহীন হয়েছেন।

শহরাঞ্চল বন্যা

— শহরে ঘন ঘন বন্যা, নানা অব্যবস্থা ও আর্থ-সামাজিক ক্ষতি তৈরি করেছে।

— ২০০৪ সালের ঢাকার বন্যায় ৮০% এলাকা প্লাবিত হয়।

ঘূর্ণিঝড়

— ১৯৬০–২০১০ সালে ২১টি ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়; গত বছর ৪টি একসঙ্গে আসায় উদ্বেগ বেড়েছে।

— আগে প্রতি ২–৩ বছরে একটি সামঞ্জস্য, এখন ঘুর্ণিঝড়ের ঘনত্ব বেড়েছে।

লবণাক্ততা বৃদ্ধি

— উপকূলীয় এলাকায় সমুদ্রনীচে ওঠা ও সমুদ্রের পানি ক্ষতে প্রবেশ—ফসল ও মাটিতে প্রভাব ফেলছে।

— ১৯৭৩–২০০৯ সালেই দেশজুড়ে প্রায় ২৭% লবণাক্ততা বৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়েছে।

তীব্র শীত

— শীতের প্রকোপ কমেছে: জানুয়ারি–ডিসেম্বর মাসে শৈত্যপ্রবাহ কম দেখা যাচ্ছে।

— মাঝে মাঝে শীত নেই বললেই চলে।

বজ্রপাত

— প্রতি বছর এপ্রিল থেকে জুন মাসে বজ্রপাত বেশি।

— ১৯৯০–২০১৬ সাল পর্যন্ত ৩,০০০+ মানুষ বজ্রপাতে মারা গেছে এবং আহত হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার।

ভূমিধস

— পাহাড়ি ও ঢালু এলাকার ভারি বর্ষণে ভূমি ধসে বিপর্যয়।

— ২০০৭ সালে চট্টগ্রামে ভয়াবহ ধস—১২২ জন নিহত।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা ও অম্লতা বৃদ্ধি

— উত্তরমুখী গড় তাপমাত্রা বাড়ছে।

— সমুদ্রের অম্লতা বাড়লে মৎস্য সম্পদ ও উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হতে পারে।

ঝুঁকিগুলোর মিলযোগ্য প্রভাব

মানবিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়: কৃষি, মৎস্য, বসবাস ও স্বাস্থ্য খাতে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

বাস্তচ্যুতি ও অবকাঠামো ধ্বংস: উপকূলীয় মানুষ ভূমিহীন হতে পারে, নগর বন্যা গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রবণ পরিবর্তন: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিগুলো একে অপরকে জটিলভাবে প্রভাবিত করছে।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে