ঢাকা, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫
Sharenews24

কানাডায় রাজত্ব: ফাঁস ২৮ জন দুর্নীতিবাজের নাম

২০২৫ অক্টোবর ০৬ ০৯:০৬:১১
কানাডায় রাজত্ব: ফাঁস ২৮ জন দুর্নীতিবাজের নাম
নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০২০ সালের শেষ দিকে যখন গোটা বিশ্ব করোনায় বিপর্যস্ত, তখন বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে হঠাৎ করেই আলোচনায় উঠে আসে ‘বেগমপাড়া’। কানাডায় স্থায়ী হওয়া কিছু প্রভাবশালী বাংলাদেশি নাগরিকের বিলাসবহুল জীবন এবং সম্পদ নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক।

বেগমপাড়া বলতে বোঝানো হয়—বাংলাদেশি প্রভাবশালী ব্যক্তি বা কর্মকর্তাদের পরিবার (বিশেষ করে স্ত্রী-সন্তান) যারা কানাডার বিভিন্ন শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন, অনেক সময়ই অবৈধ অর্থপাচার করে সম্পদ গড়ে। এসব পরিবার মুলত টরন্টো, মন্ট্রিল ও অটোয়ায় বসবাস করে থাকেন।

২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন—“কানাডায় অনুসন্ধান করেছি। দেখেছি, রাজনীতিবিদের সংখ্যা খুব কম, মাত্র চারজন। বরং সবচেয়ে বেশি সম্পদ গড়েছে সরকারি কর্মকর্তা ও আমলারা।”

এ মন্তব্যের পরই পুরো বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়।

দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে ২০২০ সালের নভেম্বরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সরকারের কাছে বিদেশে অর্থপাচারকারীদের তালিকা চায়। তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সিআইডি ও এনবিআর কাজ করছে।

হাইকোর্টও তৎপর হয়—২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে তিনটি সরকারি সংস্থা রিপোর্ট জমা দেয়। এতে দেখা যায়, শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ২,৫০০ কোটি টাকা পাচারের তথ্য রয়েছে।

তবে এতে আদালত সন্তুষ্ট হয়নি। আরও তথ্য চেয়ে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেয় হাইকোর্ট।

পরের বছরেই আদালতের রিটটি হঠাৎ গায়েব হয়ে যায়। বলা হয়, কোনো "অদৃশ্য ইশারায়" হাইকোর্টের কার্যতালিকা থেকে মামলাটি সরিয়ে নেওয়া হয়। তখন সমালোচকদের দাবি ছিল—যারা এই পাচারের সাথে জড়িত, তারা তখনকার রাষ্ট্রক্ষমতার ঘনিষ্ঠ লোক হওয়ায় বিষয়টি চাপা পড়ে যায়।

সবচেয়ে বিস্ময়কর তথ্য হলো—একজন বিতর্কিত বাংলাদেশি ব্যবসায়ী এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে ২০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ কানাডায় থাকার অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশ না হলেও তিনি প্রভাবশালী রাজনৈতিক যোগাযোগে ছিলেন বলে জানা যায়।

২০২৫ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত ২৩১ জন বাংলাদেশি কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। তারা কেউ কেউ সাবেক আমলা, কূটনীতিক, পুলিশ কর্মকর্তা বা রাজনীতিক।

স্থানীয় প্রবাসীরা বলছেন—এদের অধিকাংশের বৈধ আয়ের কোনো উৎস নেই, অথচ তারা কানাডায় রাজকীয় জীবন যাপন করছেন। বিষয়টি প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে।

ফাঁস হওয়া তালিকা অনুযায়ী, যাদের কানাডায় বিপুল সম্পদ রয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই সাবেক আমলা, সচিব, ও মন্ত্রী পর্যায়ের। রয়েছেন – এস কে সিনহা (প্রধান বিচারপতি), শামীম ওসমান (রাজনীতিক), শাহরিয়ার আলম (প্রতিমন্ত্রী), নজরুল ইসলাম মজুমদার (নাসা গ্রুপ চেয়ারম্যান) সহ অনেকে।

কয়েকটি উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো:

নামপদবি (সাবেক)সম্পত্তিঅবস্থান
ড. আহমদ কায়কাউস প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ৪টি বাড়ি মন্ট্রিল ও টরন্টো
আবু আলম শহীদ খান সচিব ১টি বাড়ি টরন্টো
আবুল কালাম আজাদ মুখ্য সচিব ৩টি ফ্ল্যাট টরন্টো
নজিবুর রহমান মুখ্য সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান ২টি বাড়ি মিসিসাগা
ইকবাল মাহমুদ দুদক চেয়ারম্যান ৩টি বাড়ি কানাডা
মহিবুল হক বিমান সচিব ৩টি অ্যাপার্টমেন্ট কানাডা
আবদুর রউফ তালুকদার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ৫টি সম্পদ টরন্টো
শহীদ ইসলাম পাপুল ব্যবসায়ী ও সাবেক এমপি ৩টি বাড়ি কানাডা
শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে