ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

ভারত সফরে জামায়াতের বদলে যাওয়া বার্তা

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৮ ১২:২৯:১০
ভারত সফরে জামায়াতের বদলে যাওয়া বার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা হিসাব-নিকাশের মধ্যে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ঘুরেফিরে আসছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন—জামায়াতে ইসলামীর প্রতি ভারতের বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গি কী হওয়া উচিত?

দীর্ঘদিন ধরে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে ভারত সন্দেহের চোখে দেখে এসেছে। দলটির ধর্মভিত্তিক আদর্শ এবং অতীতে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত নেতাদের সম্পৃক্ততার কারণে ভারত তাদের রাজনৈতিকভাবে বরাবরই 'অস্পৃশ্য' বলে বিবেচনা করেছে। এমনকি বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণেও দিল্লি বহুদিন ধরে বিএনপির প্রতি সদিচ্ছা দেখাতে আগ্রহী হয়নি।

তবে সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক বাস্তবতায় জামায়াতের পুনরুত্থানের ইঙ্গিত মিলছে। ঢাকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে রাজপথে দলটির সক্রিয়তা বাড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে ভারতীয় বিশ্লেষক শ্রীরাধা দত্তের মতামত অনেকের মনোযোগ কেড়েছে।

ওপি জিন্দাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ বিষয়ে দীর্ঘদিন গবেষণায় যুক্ত শ্রীরাধা দত্ত সম্প্রতি ঢাকা সফর করেন। সেখানে তিনি জামায়াতসহ বিএনপি, এনসিপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

তিনি বলেন, জামায়াতের নতুন নেতৃত্ব এক ভিন্ন চেহারায় আত্মপ্রকাশ করছে—জিনস ও টি-শার্ট পরে টেলিভিশনের টক শোতে অংশ নিচ্ছেন তারা, কথা বলছেন সংস্কার ও গণতন্ত্র নিয়ে।

জামায়াতের নায়েবে আমির ড. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের সঙ্গে এক বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে শ্রীরাধা বলেন:“আমি ড. তাহেরকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেছিলাম—সরকার গঠনের সুযোগ পেলে তারা কি দেশে শরিয়া আইন চালু করবেন? তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘আমরা কবে এমন বলেছি? এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা।’”

এছাড়া তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকাও দলটির তরফ থেকে স্বীকার করা হয়েছে। মতিউর রহমান নিজামী ও দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মতো নেতারা প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন—এমন কথাও জানান তাহের।

শ্রীরাধা দত্তের ধারণা, জামায়াতের নবীন নেতৃত্ব এখন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা মনে করে, “বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী ভারত”—এটা তারা স্বীকার করতেও প্রস্তুত।

“তারা বলেছে, ২০০১-২০০৬ সালের ভারতবিরোধী ঘটনাগুলোর সঙ্গে জামায়াতের কোনো সম্পৃক্ততা নেই—এমন প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবে না।”

তবে শ্রীরাধার মন্তব্যে একটা সতর্কতাও ছিল:“জামায়াত দারুণ ‘চার্ম অফেনসিভ’ দেখাচ্ছে। তারা কথায় মুগ্ধ করতে জানে—কিন্তু বাস্তবে কী করছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের উচিত এটা বোঝে এগোনো।”

ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা এই বিশ্লেষণের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, জামায়াত অতীতে যা ছিল, আজও তা-ই রয়েছে। তাদের অতীত অপরাধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন:“তাদের হাতে রক্ত লেগে আছে। জামায়াত হলো মুসলিম ব্রাদারহুডের অংশ, যারা একাধিক দেশে সহিংস আদর্শে বিশ্বাস করে। এদের বদলানোর সম্ভাবনা নেই।”

তিনি আরও বলেন:“কী বলছে সেটা শুনে প্রতারিত হওয়া যাবে না—কী করছে, সেটাই আসল। ভারতকে এ বিষয়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে।”

সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নতুন মেরুকরণের মধ্যে জামায়াতে ইসলামী নিজেদের ‘নতুন সংস্করণ’ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে। যদিও দলটি দাবি করছে তারা অতীত ভুল বুঝেছে ও সংশোধন করেছে, তবুও ভারতের মতো রাষ্ট্রের কাছে এ ধরনের পরিবর্তনের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

ভারতীয় বিশ্লেষকদের মতে, এটি এক ধরনের কূটনৈতিক পরীক্ষাও, যেখানে কথা আর কাজে ফারাক থাকলে এর পরিণতি হতে পারে বিপর্যয়কর।

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে