ঢাকা, সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

যে ১১ ধরনের বেদখল জমি প্রকৃত মালিকরা পাবে

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৮ ২০:০৯:৫১
যে ১১ ধরনের বেদখল জমি প্রকৃত মালিকরা পাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে চলমান অনিয়ম, জালিয়াতি ও জবরদখলের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে “ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩”। এই আইনের মাধ্যমে জমি-সংক্রান্ত প্রতারণা, অবৈধ দখল এবং জাল দলিল তৈরির মতো অপরাধগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মো. বেলায়েত হোসেন আইনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, এই আইনের প্রয়োগের ফলে ১১ ধরনের জমির প্রকৃত মালিকেরা তাদের জমির অধিকার ফিরে পাচ্ছেন, আর অবৈধ দখলদারদের জমি ছাড়তে হবে।

তিনি ১১ ধরনের জমির তালিকা ও আইনের প্রয়োগ সম্পর্কে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যা নিচে তুলে ধরা হলো:

১. হেবা দলিল (Gift Deed)

অনেক সময় প্রকৃত ক্রয়-বিক্রয় দলিল না করে, সরকারি ফি এড়াতে হেবা দলিল করা হয়। তবে, যদি হেবা দলিলটি প্রাপ্য অংশের বাইরে গিয়ে করা হয় বা হেবার ৩টি শর্ত (দাতা, দানগ্রহীতা ও দানকৃত সম্পত্তি হস্তান্তর) পূরণ না হয়, তাহলে সেই দলিল আংশিক বা পুরোপুরি বাতিল হয়ে যাবে।

২. এওয়াজ বদল দলিল (Exchange Deed)

মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টনের আগে যদি তার ওয়ারিশগণ এওয়াজ বদল দলিল করেন, তাহলে তা অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে এবং দলিল বাতিল করা যাবে। নতুন আইনে এই বিষয়টি স্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।৩. সরকারি খাস জমি (Government Khas Land)

যেসব ব্যক্তি সরকারি খাস জমি দখলে রেখেছেন কিন্তু কোনো বৈধ কাগজপত্র বা বন্দোবস্ত গ্রহণ করেননি, তাদের সেই জমি খালি করতে হবে। নতুন আইনের আওতায় এসব জমির দখল বাতিল করে সরকার পুনরুদ্ধার করতে পারবে।

৪. জবরদখলকৃত জমি (Forcibly Occupied Land)

যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে বা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অন্যের জমি দখল করে আছেন, কিংবা জাল দলিলের মাধ্যমে জমি ব্যবহার করছেন, তাদের দখল বাতিল হবে এবং আসল মালিক তাদের জমি ফেরত পাবেন।

৫. জাল দলিলভিত্তিক জমি (Land Acquired through Forged Deeds)

জাল কাগজপত্র বা প্রতারণার মাধ্যমে যে জমি আত্মসাৎ করা হয়েছে, সেই জমির দলিল বাতিল করে প্রকৃত মালিককে জমি ফেরত দেওয়ার বিধান রয়েছে এই আইনে।

৬. সাব-কবলা দলিল (Sub-kabala or Sale Deed)

যদি কোনো ওয়ারিশ তার অংশের অতিরিক্ত জমি অন্য কারও কাছে বিক্রি করেন, বিশেষ করে অন্য ওয়ারিশদের না জানিয়ে, তাহলে সেই বিক্রয় চুক্তি বাতিলযোগ্য। নতুন আইনে এই দলিল বাতিল করে প্রকৃত অংশীদারদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা যাবে।

৭. বন্টননামা ছাড়া বিক্রয় (Without Partition Deed)

যদি বণ্টননামা ছাড়াই কোনো শরিক অন্যের অংশ বিক্রি করেন, তাহলে সেই বিক্রয় দলিল অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। এতে বঞ্চিত শরিক বা ওয়ারিশরা আইনের আশ্রয়ে তাদের জমি ফিরে পেতে পারেন।

৮. যৌথ সম্পত্তিতে অতিরিক্ত বিক্রয় (Joint Property Dispute)

যেখানে ১০-৩০ জন অংশীদার একটি জমি কিনেছেন, কিন্তু একজন তার মালিকানার অতিরিক্ত জমি বিক্রি করেছেন—তখন সেই অতিরিক্ত অংশ বাতিল করে দেওয়া হবে, এবং বাকি অংশীদারদের অধিকার রক্ষা করা হবে।

৯. এক খতিয়ানে জমি বিক্রি (Sale from a Single Khotian)

যদি কোনো ব্যক্তি শুধুমাত্র পুরনো খতিয়ান বা আংশিক খতিয়ান দেখিয়ে জমি বিক্রি করেন, অথচ সর্বশেষ খতিয়ানে তার নাম না থাকে, তাহলে সেই দলিল বাতিল হবে। এটি বিশেষভাবে খতিয়ানভিত্তিক জমি কেনাবেচার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়।

১০. ভুল দাগ বা চৌহদ্দি (Incorrect Plot Number or Boundary)

জমির সঠিক দাগ ও চৌহদ্দি না জেনে বা ভুল তথ্য দিয়ে জমি বিক্রি করা হলে, প্রকৃত মালিক আইনের সহায়তায় তার জমি ফিরে পেতে পারেন। এই আইন সেই ভুল দলিল বা বিক্রয় বাতিল করার সুযোগ দেয়।

১১. বিনিময় সম্পত্তি (Exchange Property between India & Bangladesh)

যেসব ব্যক্তি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে চলে গেছেন এবং তাদের ফেলে যাওয়া জমি অন্য কেউ দখল করে নিয়েছেন, নতুন আইন অনুযায়ী হাইকমিশনের মাধ্যমে সেই জমির মালিকানা পুনঃবণ্টনের ব্যবস্থা নেওয়া যাবে এবং বৈধভাবে বিক্রিও করা যাবে।

এই আইন অনুসারে জমি-সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা করা যাবে, যা আগের তুলনায় অনেক দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। আগে জমি মামলা নিষ্পত্তিতে যেখানে ৬-১০ বছর লাগতো, এখন তা কমে ২-৫ বছরের মধ্যেই শেষ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

“ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩” বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন। এই আইনের বাস্তবায়নের ফলে যারা প্রকৃত মালিক হয়েও জমি থেকে বঞ্চিত ছিলেন, তারা এখন আইনি সহায়তায় তাদের অধিকার ফিরে পাচ্ছেন। পাশাপাশি অবৈধ দখলদার ও প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সহজতর হয়েছে। অ্যাডভোকেট বেলায়েত হোসেনের মত বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে সাহায্য করছে এবং ভূমি-সম্পর্কিত জটিলতা কমিয়ে আনছে।

কেএইচ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে