ঢাকা, সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

জাল সার্টিফিকেটে কমার্স ব্যাংকে ৮ কর্মকর্তা!

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৮ ১২:১৪:৪৭
জাল সার্টিফিকেটে কমার্স ব্যাংকে ৮ কর্মকর্তা!

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে চাঞ্চল্যকর এক তথ্য উঠে এসেছে। ব্যাংকের অন্তত আটজন কর্মকর্তা জাল সার্টিফিকেট জমা দিয়ে শুধু চাকরিই নয়, বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পদোন্নতিও পেয়েছেন। এসব জাল সনদের মধ্যে রয়েছে এইচএসসি, স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সার্টিফিকেট, যা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।

এই কর্মকর্তারা বছরের পর বছর ধরে কোনো রকম জবাবদিহিতা ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছিলেন। এমনকি কয়েকজন বর্তমানে ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ পদেও দায়িত্ব পালন করছেন। উদাহরণ হিসেবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া বিএসসি ও এমএসসি সার্টিফিকেট জমা দিয়ে ব্যাংকের ডেস্ক অফিসার ও সিনিয়র পজিশনে চাকরি করছেন আল আমীন নামে একজন কর্মকর্তা। অথচ তদন্তে দেখা গেছে, তিনি কখনোই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন না।

তদুপরি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের নাম ব্যবহার করে ভুয়া বিবিএ ও এমবিএ সার্টিফিকেট জমা দিয়ে আরও চারজন কর্মকর্তা চাকরি পান। এ ছাড়া রয়্যাল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকার ভুয়া সনদ ব্যবহার করে শাখা ব্যবস্থাপক পদে চাকরি নিয়েছেন সাব্বির হোসেন। রয়্যাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ইতোমধ্যে ৫১টি জাল সার্টিফিকেট শনাক্ত করেছেন, যেগুলোর কোনো বৈধতা নেই। তারা আরো বলেন, এসব সার্টিফিকেটধারী কেউই তাদের শিক্ষার্থী ছিলেন না, এবং এ ধরনের জালিয়াতি তাদের জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর।

এদিকে, প্রাইম ইউনিভার্সিটির একটি জাল স্নাতক সনদ ব্যবহার করে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন খালেদা বেগম। তদন্তকারীদের ধারণা, এই জালিয়াতি দীর্ঘ সময় ধরে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সহায়তায় হয়ে আসছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জাল সনদধারীরা শুধু নিজে অবৈধভাবে সুবিধা নিচ্ছেন না, বরং প্রকৃত যোগ্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগ নষ্ট করছেন। এতে করে দেশে মেধাবীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও একই অভিযোগ করে বলছেন, অনলাইনে এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে কঠোর যাচাইয়ের ব্যবস্থা না থাকায় জালিয়াতরা সহজেই চাকরি পাচ্ছেন। তারা এসব অপকর্ম বন্ধে জরুরি পদক্ষেপের দাবি জানান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেছেন, “জাল সনদ ব্যবহার ফৌজদারি অপরাধ। এ ক্ষেত্রে প্রচলিত আইনে মামলা দায়ের করা যেতে পারে।” তার ভাষায়, শুধু চাকরি থেকে বরখাস্ত করাই নয়, প্রয়োজনে এসব প্রতারকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করে আইনের আওতায় আনা উচিত।

তবে এখানেই শেষ নয়। প্রশ্ন উঠেছে—এতদিন ধরে এই জালিয়াতরা কার সহায়তায় বা প্রশ্রয়ে ব্যাংকের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে যাচ্ছিলেন? তদন্ত চলছে, তবে এ ঘটনা ব্যাংক খাতে নিরাপত্তা, জবাবদিহিতা ও নিয়োগব্যবস্থার উপর বড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিয়েছে।

কেএইচ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে