ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

মালয়েশিয়ায় হুন্ডির দাপট, বাড়ছে না প্রবাসী আয়

২০২৪ এপ্রিল ২২ ১৭:৫৪:৪৪
মালয়েশিয়ায় হুন্ডির দাপট, বাড়ছে না প্রবাসী আয়

প্রবাস ডেস্ক : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ায় নানা পেশায় প্রায় ১৫ লাখ প্রবাসী কর্মরত। দেশটিতে কর্মরত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

কিন্তু বৈদেশিক শ্রমবাজারে প্রবাসী আয়ের প্রধান উৎস এদেশ থেকে কমে যাচ্ছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের বিপরীতে রিঙ্গিতের দরপতন, অপরদিকে অনানুষ্ঠানিক বা হুন্ডিতে আয় পাঠালে প্রতি ডলারে ৫-৬ টাকা বেশি পাওয়ার ফলে এদিকেই ঝুঁকছেন প্রবাসীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ মাসে মালয়েশিয়া থেকে ১২ কোটি ২৩ লাখ ডলার বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। রোজা ও ঈদ হওয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার কথা থাকলেও ডলারের বিপরীতে রিঙ্গিত এবং টাকার মানে কমেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। এই নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন রেমিট্যান্স হাউজের কর্তারা।

দেশটিতে কর্মরত প্রবাসীরা বলছেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তবে এই শঙ্কা থেকে উত্তরণের পথও খুঁজছেন তারা। বৈধ পথে রেমিট্যান্স আহরণে হাউজগুলো হাইকমিশনসহ যৌথ উদ্যোগে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রদেশে করে যাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা ও সভা।

সম্প্রতি, দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শামীম আহসান সেলাঙ্গর এবং পেনাং রাজ্যে আইনি চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকার ও পরিবারের সুবিধা নিয়ে আলোচনা করেছেন।

এদিকে, বিশ্বের ৩০টি দেশ থেকে রেমিট্যান্স আসা দেশের মধ্যে মালয়েশিয়া ৫ম স্থানে থাকলেও সরকারি প্রণোদনা বাড়িয়েও প্রবাসী আয় বাড়ানো যাচ্ছে না।

চলমান ডলারের বিপরীত রিঙ্গিতের দরপতন এবং রিঙ্গিতের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় রেমিট্যান্স কমে আসছে বলে মনে করেন এনবিএল মানি ট্রান্সফার মালয়েশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলী হায়দার মর্তুজা। তিনি বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে গত মার্চ মাসে এনবিএল মানি ট্রান্সফার থেকে ২ কোটি ১২ লাখ ডলার প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠালেও চলতি মাস (ঈদের মাস) হওয়ার পরও গত মাসের তুলনায় কম।

মর্তুজার মতে, বর্তমানে বাংলাদেশ ডলারের রেটের অনেক ভিন্নতার কারণে এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো প্রবাসীদের প্রত্যাশিত রেট দিতে পারছে না। ডলারের এই ব্যবধান যদি কমিয়ে আনা যায় তাহলে এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো প্রবাসীদের প্রত্যাশিত টাকার রেট দিতে পারবে ও প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে না পাঠিয়ে বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা পাঠাবেন।

প্লাসিড মানি এক্সচেন্জ এর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, রেমিট্যান্স খাতে যে বিপর্যয় নেমে এসেছে, সেটা কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা চলছে। তবে এই মুহূর্তে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈধ চ্যানেলে পাঠানো রেমিট্যান্সের বিপরীতে আরো প্রণোদনা বাড়ানো উচিত। প্রণোদনা বাড়ালে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীরা বেশি উদ্বুদ্ধ হবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবাসী বলেন, প্রণোদনার চেয়েও বেশি টাকা পাওয়া যায় হুন্ডির মাধ্যমে। ভিসা বাণিজ্য, আন্ডার ইনভয়েসের (প্রকৃত মূল্য কম দেখানো) মতো অবৈধ পথ আবার চালু হয়ে গেছে। এতে এখন বেড়েছে হুন্ডি।

মালয়েশিয়া প্রবাসীরা বলছেন, অনানুষ্ঠানিক মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপের বিকল্প নেই। এই বিষয়ে শ্রম ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। তাদের পরিষেবার মানও উন্নত করতে হবে। প্রবাসীদের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধার দিকেও নজর দিতে হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে শ্রমিকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশে পাঠাতে হবে। বিশেষ কাজে দক্ষতা বাড়াতে হবে। প্রবাসীরা প্রশিক্ষিত না হওয়ায় আশানুরূপ চাকরি ও বেতন পাচ্ছেন না। বৈদেশিক মুদ্রার হার নীতি কৌশল ও ব্যবস্থাপনা ঠিক করার জন্যও দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন। আসলে রেমিটেন্স বাড়াতে হলে হুন্ডিওয়ালাদের দৌরাত্ম্য কমাতে হবে।

ব্যাংক বা মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর প্রতি প্রবাসীদের আগ্রহী করতে নানা ধরনের প্রণোদনা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। ব্যাংকিং সেবা বা মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ প্রবাসীদের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি প্রবাসীদের দূতাবাস বা হাইকমিশনে পাসপোর্ট বা ভিসা নবায়নসহ অন্যান্য কাজের জটিলতা কমিয়ে আনতে হবে।

এ ছাড়া সেবার মান বাড়াতে হবে। প্রবাসী নিরাপত্তার বিষয়ে দূতাবাসের কর্মীদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রবাসীদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

সর্বোপরি বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীদের উৎসাহিত করতে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলোর কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন। এছাড়া বিমানবন্দরে নানা হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

অর্থ পাচার বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ রেমিট্যান্স প্রবাহে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। স্বল্প আয়ের প্রবাসীদের সরকারিভাবে প্রণোদনা বাড়াতে হবে।

দেশের অর্থ পাচারকারীদের সঙ্গে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বিদ্যমান। রেমিট্যান্স প্রেরণে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা বিশ্লেষকদের।

শেয়ারনিউজ, ২২ এপ্রিল ২০২৪

পাঠকের মতামত:

প্রবাস এর সর্বশেষ খবর

প্রবাস - এর সব খবর



রে