ঢাকা, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী ওসমান হাদির অসমাপ্ত গল্প

২০২৫ ডিসেম্বর ২০ ২২:৪৯:৫৩
গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী ওসমান হাদির অসমাপ্ত গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক: "আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা"— দু’হাত প্রসারিত করে বলা সেই সাহসী উচ্চারণের মানুষটি আজ কেবলই শোকগাথা। ইনকিলাব মঞ্চের অকুতোভয় কর্ণধার শরীফ ওসমান হাদি, যিনি রাজপথ থেকে শুরু করে সামাজিক মাধ্যমে আধিপত্যবাদ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সর্বদা উচ্চকিত ছিলেন, আজ তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত।

গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর জীবনাবসান হয়। হাদিকে 'শহীদ' হিসেবে মর্যাদা দিয়ে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁর মরদেহ দেশে পৌঁছানোর পর আজ শনিবার দুপুর ২টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রিয় এই তরুণকে বিদায় জানাতে মানুষের ঢল নেমে যায়।

হাদির রাজনৈতিক যাত্রা ছিল সমসাময়িক ধারা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়তে চেয়েছিলেন তিনি। বড় বড় পোস্টার বা ব্যানারের চাকচিক্য নয়, বরং সাধারণ কিছু অনুসারী নিয়ে ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়েছেন। তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল অভূতপূর্ব—সাড়ে তিন লাখ ভোটারের প্রত্যেকের সাথে সশরীরে দেখা করা।

হাদি বলেছিলেন, ভোটাররা যেন নির্বাচনের দিন তাঁকে শুধু টেলিভিশনের চরিত্র হিসেবে না দেখেন, বরং রক্ত-মাংসের একজন প্রতিনিধি হিসেবে পান। তাঁর এই ব্যতিক্রমী প্রচারণার মধ্যেই ১২ ডিসেম্বর বিজয়নগরে তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন, যাকে অনেকে নির্বাচনী মাঠের প্রথম ‘টার্গেট কিলিং’ হিসেবে বর্ণনা করছেন।

হাদির স্বচ্ছতা ছিল বর্তমান রাজনীতির জন্য এক বড় উদাহরণ। নির্বাচনী প্রচারণার মাত্র ১০ দিনে তিনি শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে পাওয়া ২১ লাখ ৬৫ হাজার ২৯২ টাকার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব প্রকাশ্যে প্রকাশ করেন। তাঁর তহবিলের প্রতিটি পাই-পয়সা ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং তিনি কথা দিয়েছিলেন ডোনারদের গোপনীয়তা বজায় রেখে পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দেবেন।

কেবল নিজ লড়াই নয়, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার জন্য হাদি ছিলেন গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী। তিনি বিশ্বাস করতেন, নির্বাচন ছাড়া দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া অসম্ভব এবং আওয়ামী লীগের নিরপরাধ সদস্যদেরও স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার থাকা উচিত—যা তাঁর উদার গণতান্ত্রিক চেতনার পরিচয় দেয়।

রাজনৈতিক মহলে হাদির এই অকাল প্রস্থান এক বিশাল শূন্যতা তৈরি করেছে। সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স মনে করেন, হাদি ধীরে ধীরে রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছিলেন এবং তাঁর ওপর হামলার দায় সরকার এড়াতে পারে না।

বর্ষীয়ান নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক হাদিকে ‘তারুণ্যের অনুরণন’ এবং ‘দ্রোহের প্রতীক’ হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন। রাজনৈতিক জীবনে নিজের জায়গা পুরোপুরি তৈরির আগেই হাদি হারিয়ে গেলেন ঠিকই, তবে জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি প্রতিবাদের এক অমর চিহ্ন হয়ে আজীবন তরুণদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।

সিরাজ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে