ঢাকা, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

ভারতীয় ডাম্পিং চাপে হুমকির মুখে ২৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক শিল্প

২০২৫ ডিসেম্বর ২০ ২২:১৬:০৯
ভারতীয় ডাম্পিং চাপে হুমকির মুখে ২৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক শিল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের প্রধান শক্তি ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ হিসেবে পরিচিত টেক্সটাইল খাত এখন অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। গত তিন দশকে ২৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে গড়ে ওঠা এই শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের কাছে জরুরি ভিত্তিতে ১০ শতাংশ বিশেষ ক্যাশ সহায়তার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। সংগঠনটির মতে, স্থানীয় বাজারে সুতা বিক্রিতে প্রণোদনা বৃদ্ধি এবং আমদানিতে সেফগার্ড শুল্ক আরোপ না করলে এই বিশাল শিল্পখাত ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

বিটিএমএ-র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পরিস্থিতির ভয়াবহতায় ইতিমধ্যেই দেশের ৫৮টি স্পিনিং ও ডাইং মিল আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছেন ১ লাখেরও বেশি শ্রমিক। বর্তমানে সচল থাকা মিলগুলোর অবস্থাও নাজুক; অনেকেই গুদামে সুতা রাখার জায়গা না পেয়ে লোকসানে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় যে, কিছু মিল মালিক উৎপাদন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিয়েছেন এবং নতুন কোনো বিনিয়োগের সম্ভাবনা আপাতত দেখছেন না।

এই সংকটের মূলে রয়েছে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং অসম প্রতিযোগিতা। বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল জানান, ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৬ শতাংশ হওয়া, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি এবং টাকার অবমূল্যায়নের ফলে উৎপাদন খরচ প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে।

অন্যদিকে প্রতিবেশী ভারত তাদের টেক্সটাইল খাতে ব্যাপক প্রণোদনা দিচ্ছে, যার ফলে তারা বাংলাদেশে উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে সুতা রপ্তানি (ডাম্পিং) করতে পারছে। গত এক বছরে ভারত থেকে সুতা আমদানি প্রায় ৪৮ শতাংশ বেড়েছে, যা দেশীয় মিলগুলোকে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিচ্ছে।

সংকট উত্তরণে বিটিএমএ সম্প্রতি বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাথে একাধিক বৈঠক করেছে। তারা আগামী পাঁচ বছরের জন্য স্থানীয় সুতা বিক্রিতে ১০ শতাংশ প্রণোদনা এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশীয় মিল থেকে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ সুতা কেনা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দিয়েছে।

এ ছাড়া, বন্ড সুবিধায় আসা সুতা ও কাপড় খোলা বাজারে বিক্রি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যথায় ২০২৬ সালের মধ্যে অর্ধেকের বেশি মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

বিটিএমএ-র তথ্যমতে, এই খাতে বর্তমানে প্রায় ২০ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান জড়িয়ে আছে। দেশের নিট পোশাকের প্রায় শতভাগ এবং ওভেন পোশাকের ৮০ শতাংশ সুতার চাহিদা পূরণ করে এই টেক্সটাইল মিলগুলো। তাই তৈরি পোশাক খাতের সরবরাহ চেইন সচল রাখতে এবং বিশাল এই বিনিয়োগ রক্ষা করতে সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বর্তমানে এই প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করছে বলে জানা গেছে।

মিজান/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে