ঢাকা, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

হিসাব নিকাশে মারাত্মক গড়মিল: অডিটরদের তোপের মুখে ন্যাশনাল টিউবস

২০২৫ ডিসেম্বর ১৭ ০৯:১৫:২৬
হিসাব নিকাশে মারাত্মক গড়মিল: অডিটরদের তোপের মুখে ন্যাশনাল টিউবস

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়াত্ব কোম্পানি ন্যাশনাল টিউবস লিমিটেডের সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে মারাত্মক হিসাব সংক্রান্ত অসঙ্গতি, আন্তর্জাতিক হিসাব মান লঙ্ঘন এবং করপোরেট সুশাসনে বড় ধরনের দুর্বলতা ধরা পড়েছে। নিরীক্ষকদের এই পর্যবেক্ষণে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের নির্ভরযোগ্যতা এবং অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে এই নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

নিরীক্ষকদের মতে, সবচেয়ে বড় অনিয়মটি পাওয়া গেছে কোম্পানির 'ওয়ার্ক-ইন-প্রসেস' বা নির্মাণাধীন পণ্যের মজুত গণনায়। কোম্পানিটি প্রায় ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকার পাইপ নির্মাণাধীন মজুত হিসেবে দেখালেও বাস্তবে ওই নির্দিষ্ট সময়ে এর কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাননি নিরীক্ষকরা। প্রকৃত উৎপাদন ও বাস্তবিক উৎপাদনের মধ্যকার নেতিবাচক পার্থক্যকে উৎপাদনজনিত ক্ষতি হিসেবে না দেখিয়ে ভুলভাবে মজুত সম্পদ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এর ফলে কোম্পানির সম্পদ এবং সংরক্ষিত আয়—উভয়ই কৃত্রিমভাবে বেশি দেখানো হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ন্যাশনাল টিউবস সর্বশেষ ২০১২ সালে তাদের স্থায়ী সম্পদের পুনর্মূল্যায়ন করেছিল। গত ১২ বছরে কোনো পুনর্মূল্যায়ন না করা আন্তর্জাতিক হিসাব মান -এর স্পষ্ট লঙ্ঘন। এছাড়া সম্পদের অবচয় বা ক্ষয় গণনার ক্ষেত্রেও কোম্পানিটি কোনো আধুনিক বা সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করছে না। এমনকি তাদের কোনো কার্যকর 'অ্যাসেট ট্যাগিং' সিস্টেম বা পূর্ণাঙ্গ ফিক্সড অ্যাসেট রেজিস্টার নেই, যার ফলে সম্পদের ভৌত অস্তিত্ব যাচাই করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

আর্থিক প্রতিবেদনে আরও কিছু বড় ধরনের অসঙ্গতি উঠে এসেছে। কোম্পানিটি অগ্রিম আয়কর হিসেবে ৪৩১ কোটি টাকা দেখিয়েছে, যেখানে কর সঞ্চিতি রয়েছে মাত্র ৯৮ কোটি টাকা। ফলে বাকি ৩৩৩ কোটি টাকার আদায়যোগ্যতা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এছাড়া শ্রম আইন লঙ্ঘন করে প্রভিডেন্ট ফান্ডের ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা নির্দিষ্ট ট্রাস্টি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়নি। গ্র্যাচুইটি স্কিম এবং লভ্যাংশ সংক্রান্ত বিএসইসি-র নিয়ম পালনেও কোম্পানিটি চরম অবহেলা দেখিয়েছে বলে অডিটররা জানিয়েছেন।

আর্থিক পারফরম্যান্সের দিক থেকেও কোম্পানিটি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। ২০২৫ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কোম্পানিটি মাত্র ৪৩ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছে এবং নীট লোকসান হয়েছে ২৭ লাখ টাকা। শেয়ার প্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ৭৭ পয়সা। টার্নওভার কমে যাওয়ায় এবং পাওনাদারদের অর্থ পরিশোধ বেড়ে যাওয়ায় নগদ প্রবাহও নেতিবাচক হয়ে পড়েছে। তবে এই বিশাল লোকসানের মধ্যেও কোম্পানির বোর্ড ১ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেওয়ার সুপারিশ করেছে, যা বিনিয়োগকারীদের ধরে রাখার একটি চেষ্টা বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। সোমবার ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ারের সমাপনী দর ছিল ৬২ টাকা ৫০ পয়সা।

সালাউদ্দিন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে