ঢাকা, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

১০ টাকার শেয়ারে এক বছরেই পৌনে ১০ টাকা লোকসান!

২০২৫ ডিসেম্বর ১৬ ০৭:২৫:২৮
১০ টাকার শেয়ারে এক বছরেই পৌনে ১০ টাকা লোকসান!

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি ম্যাকসন্স স্পিনিং মিলসের আর্থিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। গত তিন অর্থবছরে কোম্পানিটির পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ বেড়ে ৪০৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে কেবল ২০২৪-২৫ অর্থবছর সর্বোচ্চ ২২৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা লোকসান রেকর্ড করা হয়েছে। একসময় নিয়মিত মুনাফাকারী ও উদারহস্তে ডিভিডেন্ড প্রদানকারী এই স্পিনিং মিল এখন লোকসানে ডুবেছে, কারণ এটির রাজস্ব আয় তীব্রভাবে কমে গেছে।

টানা লোকসানের কারণে ম্যাকসন্স স্পিনিং মিলস শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ডিভিডেন্ডের সুপারিশ করতে ব্যর্থ হয়েছে। সর্বশেষ ডিভিডেন্ড দেওয়া হয়েছিল ২০২২ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য, যা ছিল ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড। ডিভিডেন্ড দিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে গত বছর কোম্পানিটির শেয়ার'জেড' ক্যাটাগরিতে নামিয়ে আনা হয়।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) শেয়ারবাজারে কোম্পানিটি জানিয়েছে যে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তাদের শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৯ টাকা ৪২ পয়সা, যা পূর্ববর্তী অর্থবছরে লোকসান ছিল ৩ টাকা ৬৯ পয়সা। যদিও এখনো তাদের পূর্ণাঙ্গ আর্থিক বিবরণী প্রকাশিত হয়নি, তবে মোট বকেয়া শেয়ারের ভিত্তিতে হিসাব করে দেখা যায় যে, সমাপ্ত অর্থবছরে নীট লোকসানের পরিমাণ ছিল ২২৪ কোটি টাকা, যা অর্থবছর ২০২৩-২৪-এর ৮৭ কোটি টাকার লোকসানের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বিশাল।

ম্যাকসন্স স্পিনিং মিলসের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইউনুস ভূঁইয়া জানান, "গত এক বছর ধরে ব্যাংকিং জটিলতার কারণে কাঁচামাল আমদানির জন্য লেটার অফ ক্রেডিট (এলসি) খুলতে আমাদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।" কারখানাটি বর্তমানে বন্ধ আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে, এটি এখনো চালু আছে এবং সাব-কন্ট্রাক্টিং ভিত্তিতে কিছু অর্ডার পূরণ করছে।

পূর্ববর্তী আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী, কোম্পানিটি উচ্চ মূল্যস্ফীতি, কাঁচামালের বর্ধিত মূল্য, ইউটিলিটি খরচ বৃদ্ধি, শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি এবং প্রতিকূল বৈদেশিক বিনিময় হারের মতো গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। সমাপ্ত পণ্যের ইউনিট মূল্য হ্রাস এবং একইসঙ্গে কাঁচামাল, শ্রম, পরিচালন ও ইউটিলিটি খরচ বৃদ্ধির কারণে মুনাফা কমেছে, যা সম্মিলিতভাবে নেতিবাচক আয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

কোম্পানিটি এখনো অর্থবছর ২০২৫-এর পূর্ণাঙ্গ আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। তবে অর্থবছর ২০২০ থেকে অর্থবছর ২০২৪ পর্যন্ত এটির গড় বার্ষিক রাজস্ব ছিল প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। অর্থবছর ২০২৫-এর প্রথম নয় মাসে (জুলাই ২০২৪-মার্চ ২০২৫) রাজস্ব দাঁড়িয়েছে ১৭২ কোটি টাকা, যা অর্থবছর ২০২৪-এর একই সময়ের ৪০৯ কোটি টাকার তুলনায় ৫৮ শতাংশ কম। আর্থিক ব্যয় বাদ দেওয়ার আগে লোকসান ছিল ১৪.৬৮ কোটি টাকা, যা ৮৫.৬৬ কোটি টাকার ঋণ ব্যয়ের পর বেড়ে ১০০ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। নয় মাস শেষে (জুলাই ২০২৪-মার্চ ২০২৫) মোট লোকসান ছিল ১০৯.৭৪ কোটি টাকা। অর্থবছর ২০২৫-এ মোট ২২৪ কোটি টাকা লোকসানের অর্ধেকের বেশিই হয়েছে শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন)। তৃতীয় প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটির মোট ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪৮৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে স্বল্পমেয়াদী ঋণ ৩২৬.৯২ কোটি টাকা এবং দীর্ঘমেয়াদী ঋণ ১৬১ কোটি টাকা।

কোম্পানিটি আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইব্রিড পদ্ধতিতে (ডিজিটাল এবং সশরীরে উপস্থিতি) তাদের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজনের সময় নির্ধারণ করেছে। শেয়ারহোল্ডারদের চিহ্নিত করার জন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ জানুয়ারি। ম্যাকসন্স-এর শেয়ার প্রতি নীট পরিচালন ক্যাশ প্রবাহ নেতিবাচক ৫ টাকা ৮২ পয়সা এবং শেয়ার প্রতি নীট সম্পদ মূল্য (এনএভি) ২ টাকা ৮৪ পয়সা দাঁড়িয়েছে, যা পূর্বে ছিল যথাক্রমে নেতিবাচক ২ টাকা ৫৭ পয়সা এবং ১২ টাকা ২৯ পয়সা। সোমবার শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ার ১.৮৫ শতাংশ কমে ৫ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন শেষ হয়।

২০০৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ম্যাকসন্স স্পিনিং মিলস লিমিটেড বাংলাদেশের অন্যতম অগ্রণী স্পিনিং কোম্পানি। এটি ২০০৯ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। জাপান, চীন, ভারত, ইতালি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড এবং তাইওয়ান থেকে আমদানিকৃত অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে এটির ১,০০,৬৮০ স্পিন্ডল ক্ষমতা রয়েছে। কোম্পানিটি বার্ষিক ২১.২৫ মিলিয়ন কিলোগ্রাম উৎপাদন ক্ষমতাসহ রপ্তানির জন্য সুতা তৈরি করে। ম্যাকসন্স ২০/১ থেকে ৮০/১ কাউন্টের ১০০% সুতির সুতা, অর্গানিক সুতা, কম্বড সুতা, সুপিমা সুতা এবং উচ্চমানের কমপ্যাক্ট সুতা উৎপাদন করে।

সালাউদ্দিন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে