ঢাকা, শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

বিনিয়োগ মন্থর, ব্যাংকে বাড়ছে আমানত ও উদ্বৃত্ত তারল্য

২০২৫ আগস্ট ১৬ ০৬:১৫:৪৮
বিনিয়োগ মন্থর, ব্যাংকে বাড়ছে আমানত ও উদ্বৃত্ত তারল্য

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ব্যাংক খাতে কিছু অনিয়ম ও আর্থিক সংকট দেখা দিলেও সামগ্রিকভাবে আমানত ও উদ্বৃত্ত তারল্য বাড়ছে। একইসঙ্গে মানুষের মধ্যে নগদ টাকা হাতে রাখার প্রবণতাও বেড়েছে, যা আপাতদৃষ্টিতে একটি পরস্পরবিরোধী পরিস্থিতি। মূলত বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের গতি না থাকা এবং উদ্যোক্তাদের ঋণ গ্রহণে আগ্রহ কমায় ব্যাংকে আমানত ও উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ জুন মাসে ব্যাংকগুলোতে আমানত প্রায় সাড়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা বেড়ে এবং উদ্বৃত্ত তারল্য প্রায় ২ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। একই সময়ে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে নগদ অর্থ বেড়েছে প্রায় দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টরা এই পরিস্থিতিকে অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন। তাদের মতে, এর ফলে নতুন পুঁজি উৎপাদনে ব্যবহার না হওয়ায় কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং দুর্বল ব্যাংকগুলো নিয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এই সংকট আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে বলে তারা সতর্ক করেছেন।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, দেশে বিনিয়োগের পরিবেশের অভাব এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাই বেসরকারি বিনিয়োগ কমার প্রধান কারণ। তিনি বলেন, 'গত ৫ আগস্টের পর থেকে দেশে ১৭৫টি আন্দোলন হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কেউ বিনিয়োগে সাহস দেখাবে না।' তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দিক থেকে অনিশ্চয়তা কিছুটা কমলেও, নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়া পর্যন্ত তা পুরোপুরি কাটবে না।

গত কয়েক বছর ধরেই দেশে বেসরকারি বিনিয়োগে এক ধরনের ধীরগতি বিরাজ করছে। করোনা মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গত বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এর বিপরীতে, ব্যাংকগুলো এখন বেসরকারি খাতে ঋণ দেওয়ার চেয়ে সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করাকে বেশি নিরাপদ ও লাভজনক মনে করছে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সবার আগে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা জরুরি। তিনি আরও বলেন, ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি এবং গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কারণেও বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

নতুন বিনিয়োগের অন্যতম সূচক হলো শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি। গত তিন অর্থবছর ধরে এর আমদানি কমছে, যা দেশের নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ হ্রাসের ইঙ্গিত দেয়। এর প্রভাবে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি তলানিতে পৌঁছেছে। গত জুনে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ, যা ইতিহাসে সর্বনিম্ন।

গত জুন মাস শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা, যা আগের মাসের চেয়ে প্রায় ৪৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বেশি। এক বছরের ব্যবধানে এই আমানত বেড়েছে প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। একই সময়ে ব্যাংকগুলোর উদ্বৃত্ত তারল্য প্রায় ৯৭ হাজার কোটি টাকা বেড়ে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

এদিকে, কিছু ব্যাংকে মানুষের আস্থার সংকটের কারণে নগদ টাকা হাতে রাখার প্রবণতাও দেখা গেছে। গত জুন মাস শেষে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা, যা এক মাস আগের তুলনায় প্রায় ২ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা বেশি। কোরবানির ঈদ এবং দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণের ঘোষণার কারণে এই সময়ে মানুষের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ বেড়েছে বলে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন।

মিজান/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে