ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

শেয়ারবাজারে বহুজাতিক কোম্পানির ধস: ডিভিডেন্ড দিলেও আস্থা নেই বিনিয়োগকারীদের

২০২৫ ডিসেম্বর ৩০ ১৯:১৫:০৯
শেয়ারবাজারে বহুজাতিক কোম্পানির ধস: ডিভিডেন্ড দিলেও আস্থা নেই বিনিয়োগকারীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর জন্য ২০২৫ সালটি ছিল আরও একটি চ্যালেঞ্জিং বছর। বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহ এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির হিড়িকে এসব নামী কোম্পানির বাজার মূলধন ব্যাপকভাবে কমেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত বাজার মূলধন ১৬ শতাংশ কমে ৯৪৯ বিলিয়ন টাকায় নেমে এসেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যখন বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশ করেন, তখন তাদের প্রথম পছন্দ থাকে সুশাসিত এবং শক্তিশালী মৌলভিত্তি সম্পন্ন বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। কিন্তু গত এক বছরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এবং মুনাফা কমে যাওয়ার আশঙ্কায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এসব কোম্পানি থেকে তাদের বিনিয়োগ সরিয়ে নিয়েছেন। নভেম্বর মাসেও এই প্রবণতা অব্যাহত ছিল; যেখানে মাত্র ৯৪০ মিলিয়ন টাকার শেয়ার কেনা হয়েছে, বিপরীতে বিক্রি করা হয়েছে ১.৭৩ বিলিয়ন টাকার শেয়ার।

শেয়ারবাজারের দ্বিতীয় বৃহত্তম কোম্পানি বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) বাংলাদেশের শেয়ার দরে সবচেয়ে বড় ধস নেমেছে। গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ারের দাম প্রায় ৩২ শতাংশ কমেছে। এর ফলে শেয়ার প্রতি দর ২৪৮ টাকা ৯ পয়সায় নেমে এসেছে। একই সময়ে কোম্পানিটিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশীদারিত্ব ৪.৫০ শতাংশ থেকে কমে ৩.৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। দেশের বৃহত্তম কোম্পানি গ্রামীণফোনের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে। গ্রামীণফোনের বাজার মূলধন ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং বিদেশি বিনিয়োগ ১ শতাংশ থেকে কমে ০.৮৭ শতাংশে নেমে এসেছে।

ব্যতিক্রম হিসেবে কেবল মারিকো বাংলাদেশ তাদের অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছে। আলোচ্য সময়ে মারিকোর শেয়ার দর ১৬ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৬৫১ টাকা ২ পয়সায় পৌঁছেছে এবং এর বাজার মূলধন ১২ বিলিয়ন টাকা বেড়েছে। ধারাবাহিক আর্থিক সাফল্য এবং রেকর্ড ডিভিডেন্ড প্রদানের কারণে বিনিয়োগকারীরা এই শেয়ারে আস্থা রেখেছেন। গত মার্চে শেষ হওয়া বছরে মারিকো ৫.৯১ বিলিয়ন টাকা মুনাফা করেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ২৮ শতাংশ বেশি। কোম্পানিটি গত অর্থবছর এবং চলতি বছরের অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে মোট ৪,৯৪০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে।

রয়্যাল ক্যাপিটালের গবেষণা প্রধান আকরামুল আলমের মতে, সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ এবং উচ্চ আমদানি ব্যয়ের কারণে বড় কোম্পানিগুলোর মুনাফা কমেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত মুনাফা ২৮ শতাংশ কমে ৪৫ বিলিয়ন টাকায় নেমেছে। এছাড়া ডলারের উচ্চমূল্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যখন স্থানীয় মুদ্রার মান কমে যায়, তখন শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সম্পদের মান কমার কারণে লোকসানের মুখে পড়েন।

ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজের গবেষণা প্রধান সেলিম আফজাল শাওন জানিয়েছেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সাধারণত স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদী নীতিমালা পছন্দ করেন। বর্তমানে তারা জাতীয় নির্বাচনের পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে গভীর নজর রাখছেন। রাজনৈতিক পরিবেশ শান্ত থাকলে এবং একটি নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নিলে পোর্টফোলিও বিনিয়োগ আবারও বাড়তে পারে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তবে আপাতত ব্যাংকিং খাতের অস্থিরতা এবং খেলাপি ঋণের রেকর্ড উচ্চতা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি করে রেখেছে।

এমজে/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে