ঢাকা, বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

মেলবোর্নে কোকোর গোপন জীবন ফাঁস

২০২৫ আগস্ট ১৩ ১০:২৮:২৪
মেলবোর্নে কোকোর গোপন জীবন ফাঁস

নিজস্ব প্রতিবেদক : অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক লুনা রুশদীর স্মৃতিচারণায় উঠে এসেছে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দম্পতির কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকো-র জীবনের এক অধ্যায়।লুনার লেখায় মেলবোর্ন প্রবাসী কোকোর যেসব দিক উঠে এসেছে, তার অনেকটাই ছিল জনসাধারণের অগোচরে।

লুনা রুশদীর মতে, কোকো যখন শিক্ষার উদ্দেশ্যে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে আসেন, তখন বাংলাদেশে এরশাদের শাসন চলছে এবং খালেদা জিয়া বিরোধীদলীয় নেত্রী। সময়টা ছিল ১৯৮৯ বা ১৯৯০ সাল।

এক ভয়াবহ বন্যার সময় মেলবোর্নের প্রবাসী বাংলাদেশিরা তহবিল সংগ্রহের একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সেই অনুষ্ঠানের রিহার্সেলে লুনার সঙ্গে কোকোর প্রথম দেখা হয়। রিহার্সেলটি হয় মোনাশ ইউনিভার্সিটির একটি কক্ষে।

প্রথম দেখায় লুনা কোকোকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি। রেলিংয়ের উপর বসে থাকা এক তরুণ, পরনে কালো লেদার জ্যাকেট ও নীল জিন্স, আচরণে একেবারেই নির্লিপ্ত। পরে জানা গেল, তিনিই জিয়াউর রহমানের ছেলে। তখন তার বয়স আনুমানিক ২০–২১ বছর এবং তিনি স্কুলে পড়তেন।

অনুষ্ঠানে একটি দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে নাচের পরিবেশনা ছিল, যেখানে কোকোও অংশগ্রহণ করেন।লুনা যখন গান বাছাইয়ের দায়িত্ব পান, তখন তিনি প্রথমে ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানটি প্রস্তাব করেন। কিন্তু গানটি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়ায় আয়োজকরা তা বাতিল করেন।পরবর্তীতে অন্য একটি গান বাছাই করা হয়।

নাচের প্রশিক্ষণের সময় কোকো ছিলেন অত্যন্ত নমনীয় ও ভদ্র এবং প্রশিক্ষকের নির্দেশ অনুসারে স্টেপ রপ্ত করার চেষ্টা করছিলেন। তার ভেতরে কোনো ‘বিপ্লবী’ আচরণ ছিল না, বরং ছিলেন শান্ত, বিনীত।

লুনা রুশদীর লেখায় উঠে এসেছে, কোকো মেলবোর্নে ছিলেন একেবারেই সাধারণ প্রবাসী তরুণ।তিনি স্থানীয় একটি পিজার দোকানে পার্ট-টাইম কাজ করতেন এবং প্লেন চালানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন।

বন্ধুদের সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেলা, সিনেমা দেখা ও সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে যাওয়া ছিল তার নিয়মিত বিনোদন।প্রচলিত রাজনীতি বা পারিবারিক পরিচয় তার মধ্যে আতিশয্য তৈরি করেনি। কারো সঙ্গে মিশতে তিনি ছিলেন স্বচ্ছন্দ ও বন্ধুবৎসল।

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর এক দশক পর, বিএনপি সরকারে এলে আরাফাত রহমান কোকোর প্রবাসজীবনেও পরিবর্তন আসে।তবে লুনা রুশদী লিখেছেন, ক্ষমতা তার আচরণে প্রভাব ফেলেনি। তিনি আগের মতোই সাধারণ জীবনযাপন করতেন।শুধু তার জনপ্রিয়তা বাড়ে, প্রবাসী সমাজে তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে উঠেন।

লুনা একটি ঘটনা তুলে ধরেছেন, যেখানে কোকোর মানবিক দিক পরিষ্কারভাবে প্রতিফলিত হয়।তার এক বন্ধু ব্যবসায়িক প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন।তখন কোকো তাকে বলেন:“আম্মাকে বলবেন, আমি তার বন্ধু—এই কারণে যেন কোনো বিশেষ সুবিধা না দেওয়া হয়।”

লুনা রুশদীর স্মৃতিচারণা বলছে, আরাফাত রহমান কোকো ছিলেন এমন একজন মানুষ, যিনি সাধারণ জীবনকে প্রাধান্য দিতেন এবং পারিবারিক পরিচয়ের ছায়া থেকে দূরে থাকতে চাইতেন।তিনি ছিলেন প্রচারবিমুখ, বিনয়ী ও দায়িত্বশীল।লুনার লেখায় ফুটে উঠেছে এক রাজপুত্রের নয়, বরং এক নিরহঙ্কার তরুণের প্রতিচ্ছবি।

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে