ঢাকা, সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

শোকজের জবাবে বিস্ফোরক হাসনাত আবদুল্লাহ

২০২৫ আগস্ট ০৭ ১৭:৪৯:৪৭
শোকজের জবাবে বিস্ফোরক হাসনাত আবদুল্লাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক : জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের দিনে কক্সবাজার সফর করায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহসহ শীর্ষ পাঁচ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়। এই নোটিশের লিখিত জবাব দিয়েছেন হাসনাত আবদুল্লাহ। জবাবে তিনি জানান, ঘোষণাপত্র পাঠের অনুষ্ঠানে তিনি অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিলেন।

তিনি লিখেছেন, শোকজ নোটিশটি তিনি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন এবং এনসিপির প্রতি তার অঙ্গীকার ও দায়বদ্ধতা থেকেই তিনি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিচ্ছেন।

হাসনাতের মতে, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান ছিল এমন একটি আন্দোলন, যেখানে মানুষ নতুন বাংলাদেশ গড়ার আশায় জীবন দিয়েছিল। এমন একটি রাষ্ট্র গড়ার জন্য তারা লড়েছে, যেখানে কোনো স্বৈরাচার টিকে থাকতে পারবে না এবং প্রতিটি নাগরিক মর্যাদার সঙ্গে বাঁচবে। এই আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানোর কথা ছিল ঘোষণাপত্রে।

কিন্তু ঘোষণাপত্র তৈরির সময় অভ্যুত্থানের শহিদ পরিবার, আহত ও নেতৃত্বদানকারী অনেককে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। তাদের মতামত নেওয়া হয়নি, এমনকি অন্তর্ভুক্তির ন্যূনতম সম্মানটুকুও দেওয়া হয়নি। এতে তিনি ব্যথিত হয়েছেন।

হাসনাত দাবি করেন, ঘোষণাপত্রের খসড়ায় এমন কিছু বক্তব্য রয়েছে, যা আন্দোলনের মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বিশেষ করে তিনি আপত্তি জানান এই অংশে, যেখানে বলা হয়েছে সংবিধান সংস্কারের দায়িত্ব পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে। তার ভাষায়, এ দাবি মিথ্যা এবং তা নতুন সংবিধান প্রণয়নের পথে বড় অন্তরায়। তিনি মনে করেন, শুরু থেকেই দাবি ছিল— জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি গণপরিষদের মাধ্যমেই নতুন সংবিধান তৈরি করতে হবে, যা মৌলিক কাঠামো বদলাবে এবং ফ্যাসিবাদকে বিলোপ করবে।

হাসনাত লেখেন, ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় তিনি জানতে পারেন যে অভ্যুত্থানে আহত ও নেতৃত্বদানকারী অনেককেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ফলে তিনি অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

তার ভাষায়,“যেখানে ঐক্যের পরিবর্তে বিভাজনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেখানে আমার উপস্থিত থাকার কোনো ইচ্ছা বা প্রয়োজন নেই।”

তাই তিনি পরদিন ঢাকার বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, উদ্দেশ্য ছিল— এই ঘটনাগুলোর অর্থ বোঝা, নিজের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করা এবং ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে চিন্তা করা। এই সফর ছিল একধরনের নীরব প্রতিবাদ।

হাসনাত দাবি করেন, ৪ আগস্ট রাতে তিনি দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। না পেয়ে মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দিন পাটওয়ারীকে জানান যে তিনি তার স্কুল বন্ধুদের সঙ্গে দুই দিনের সফরে যাচ্ছেন।

নাসীরুদ্দিন তখন অফিসে আহ্বায়কের সঙ্গে ছিলেন। তিনি জানান যে, বিষয়টি আহ্বায়ককে জানানো হবে। কিছুক্ষণ পর নাসীরুদ্দিন নিশ্চিত করেন— আহ্বায়ক বিষয়টি জেনেছেন এবং এতে কোনো আপত্তি নেই।

পরবর্তীতে সফরে নাসীরুদ্দিন পাটওয়ারী, সারজিস আলম ও তাসনিম জারা-খালেদ সাইফুল্লাহ দম্পতিও যুক্ত হন।

হাসনাত অভিযোগ করেন, সফরের প্রতিটি পদক্ষেপ, এমনকি বিমানবন্দরেও তাদের ছবি ও ভিডিও তুলে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা মিডিয়ার কাছে সরবরাহ করেছে। এরপর কিছু মিডিয়া সেগুলোকে বিকৃত করে “ক্রাইম মুভির” মতো করে প্রচার করেছে।

তিনি বলেন,“এটি একটি পরিকল্পিত ডিমোনাইজেশন টেকনিক, যা অতীতে বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতো। আজ তা আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা গুজব ছড়ানো হয়েছে যে তারা নাকি সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে গোপন বৈঠকে গেছেন। অথচ পিটার হাস তখন বাংলাদেশেই ছিলেন না।

এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে তাদের গণতন্ত্রবিরোধী ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সবচেয়ে লজ্জাজনক ও কুরুচিপূর্ণ দিক হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন তাসনিম জারার বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে চালানো স্লাটশেইমিং।

“শুধু একজন নারী হওয়ার কারণে তাকে টার্গেট করে অপমানজনক, অশালীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে। মিডিয়া ও গোয়েন্দা সংস্থা সম্মিলিতভাবে এই অপচেষ্টা চালিয়েছে।”

তিনি মনে করেন, এটি একটি চক্রান্ত, যার উদ্দেশ্য ভবিষ্যতে রাজনীতিতে আগ্রহী নারীদের নিরুৎসাহিত করা।

সবশেষে হাসনাত বলেন, দলের উচিত ছিল এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। কিন্তু তার বদলে দল এমন এক ভাষায় শোকজ পাঠিয়েছে, যা যেন এই অপপ্রচারকেই বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে।

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে